ইউক্রেনে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ২০২৫: ক্ষয়ক্ষতি, মানবিক বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় আক্রমণ: ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, ক্ষয়ক্ষতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া (২০২৫)

গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ইউক্রেনে যে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া, তা সারা বিশ্বের নজর কাড়ছে। রাতজুড়ে প্রায় ৫৪০টি ড্রোন ও ৪৫টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে দেশটির অন্তত ১৪টি বড় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আঘাত হানে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের সরকারের তথ্যমতে, এই হামলায় একাধিক ঘরবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিপুল মানুষ আহত হয়েছেন এবং অন্তত একজন নিহত।

রাশিয়ার এই আক্রমণ শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়, মানবিক দিক থেকেও অত্যন্ত গভীর অর্থ বহন করে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, অনেকেই আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন। শুধু ইউক্রেনই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পড়েছে, নতুন করে আবারও রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন সংগঠন ও দেশের পক্ষ থেকে।

সূত্র: ABC News, Jamuna TV ইউটিউব ভিডিও

এ লেখায় থাকবে আক্রমণের সময়, ক্ষয়ক্ষতি, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আর আড়ালে থাকা মানবিক বিপর্যয়ের অকপট চিত্র।

আক্রমণের সারাংশ

রাশিয়ার সাম্প্রতিক এই হামলা ইউক্রেনের জন্য এক কঠিন অধ্যায়। ৫৪০টির বেশি ড্রোন ও প্রায় ৪৫টি ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারে আক্রমণের সর্বোচ্চ মাত্রা ফুটে ওঠে। বেসামরিক জীবনের উপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়েছে হাজার হাজার পরিবারের। প্রতিটি অঞ্চলে হামলা হয়েছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে—কখনো ঘরবাড়ি, কখনো বিদ্যুৎকেন্দ্র, কখনো আবার গুরুত্বপূর্ণ অফিস ভবনে। নিচে দুইটি উপ-শিরোনামে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

ব্যবহার করা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা

রাশিয়া এ যাত্রায় প্রায় ৫৪০টি ড্রোন (অধিকাংশ Shahed টাইপ) ও ৪৫টি ক্ষেপণাস্ত্র (ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল) ব্যবহার করেছে। ড্রোনগুলো প্রধানত রাতের আঁধারে নিক্ষেপ করা হয়েছে, যাতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া ধীর হয়। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তুলনামূলক দ্রুত গতিতে বড় শহর লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়।

প্রেরণ পদ্ধতি এবং নির্ভুলতা:

  • ড্রোনগুলি সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে সমন্বিতভাবে পাঠানো হয়েছে যাতে ইউক্রেনের ডিফেন্স সিস্টেম বিভ্রান্ত হয়।
  • ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে অত্যাধুনিক লঞ্চার সিস্টেম থেকে, লক্ষ্য ছিল মূলত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।

ধরা ও ধ্বংসের পরিসংখ্যান:

  • ইউক্রেনিয়ান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দাবি, তারা ৫১০টির বেশি ড্রোন এবং ৩৮টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে ধ্বংস করতে পেরেছে।
    (সূত্র: Sky News)

কোন অঞ্চলে কতগুলো ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে?
প্রতিটি আক্রমণকৃত ১৪টি এলাকায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের আনুমানিক বণ্টন ছিল নিম্নরূপ:

অঞ্চল আনুমানিক ড্রোন আনুমানিক ক্ষেপণাস্ত্র
কীভ ৪০-৭০ ৬-৮
জাপোরিজ্ঝিয়া ৩০-৪০ ৫-৬
ডোনবাস (ডোনেৎস্ক, লুহানস্ক) ২০-৩৫ ৪-৫
খার্কিভ ২৫-৩০ ৪-৫
ভলিন ২০
ওডেসা ১৫-২০ ২-৩
চেরনিগিভ ১২-১৫ ১-২
ভিন্ন ছোট শহর বাকি ভাগ বাকি ভাগ

এই তালিকা আনুমানিক; নির্দিষ্ট সংখ্যা ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে।

প্রভাবিত স্থান ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের মোট অন্তত ১৪টি অঞ্চল প্রভাবিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে আক্রান্ত অবকাঠামো, বাড়িঘর ও মৌলিক সেবা বিপর্যস্ত হয়েছে। নিচে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে—

বৃহৎ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ও আক্রান্ত সম্পদের ধরন:

  • কীভ:
  • জাপোরিজ্ঝিয়া:
    • বাড়িঘর, অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক
    • ২৫,০০০ বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
    • ৪০টি বাড়ি, ১৪টি অ্যাপার্টমেন্ট ছিন্নভিন্ন
    • একজন নিহত, কয়েক ডজন আহত
  • ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক (ডোনবাস):
    • মূলত আবাসিক এলাকা ও ছোট ব্যবসা
    • জল সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ লাইনে ব্যাপক ক্ষতি
  • খার্কিভ:
    • বাড়িঘর, কিছু প্রধান বাজার
    • বিদ্যুৎ কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তু ছিল
  • ভলিন:
    • আংশিকভাবে ঘরবাড়ি ও কাঁচা রাস্তার অবকাঠামো
  • ওডেসা, চেরনিগিভ:
    • বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহে বিঘ্ন
    • কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ক্ষতি
  • বাকি এলাকা:
    • ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে মিল রেখে ক্ষতি হয়েছে
    • কিছু অঞ্চল এখনও উদ্ধার ও পুনর্গঠনের অপেক্ষায়

দ্রুত দেখা সংক্ষেপ:

  • অধিকাংশ ড্রোন আঘাত হেনেছে আবাসিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, ও ছোট বাজারে।
  • ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত লক্ষ্য করেছে ইলেকট্রিক বা পানির প্ল্যান্ট, অফিস কমপ্লেক্স ও স্ট্র্যাটেজিক ইনফ্রা।

এই আক্রমণে এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা ঘুম থেকে উঠে দেখেছেন তাদের বাড়ি বিদ্ধস্ত, প্রতিবেশী বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। বহু মানুষ আতঙ্কে রাত্রি কাটিয়েছেন, পানির কূপ শুকিয়ে গেছে বা বিদ্যুৎ নেই দিনের পর দিন।
সবশেষে, ভাবতে অবাক লাগে, কত দ্রুত প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে উলটে দিতে পারে।

মানবিক ফলাফল

রাশিয়ার সাম্প্রতিক এই আক্রমণ থেকে শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের জীবন ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা এই ভোগান্তির সঙ্গে লড়ছেন, ঘর হারিয়েছেন, অনেকেই প্রিয়জনের খোঁজে দিশেহারা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা এবং সাধারণ বেসামরিক নাগরিক, যাদের জীবন এক লহমায় বদলে গেছে।

প্রাণহানি ও আহতের বিবরণ: একজনের মৃত্যু ও ২৪জনের আহতের মধ্যে তিনজন শিশুর তথ্য দিন

এই আক্রমণে অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ২৪, যার মধ্যে তিনজন শিশু। বেশিরভাগ আহতই গুরুতরভাবে জখম, তাদের একাংশ এখনো হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী:

  • ২৪ জন আহতের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
  • তিনজন শিশুর মধ্যে দু’জনের শরীরে বার্ন এবং এক শিশুর পায়ে গুরুতর আঘাত
  • হাসপাতালে ভর্তি আহতের সংখ্যা ১৭ জন, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়পত্র পেয়েছেন
  • জরুরি রেসকিউ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে গড়ে ১৫ মিনিট সময় নিয়েছে, বিশেষ করে অগ্নিকাণ্ডের কারণে উদ্ধারকাজ কমপ্লেক্স ছিল

সেক্ষেত্রে স্থানীয় হাসপাতালগুলোর মেডিক্যাল স্টাফ ও সরঞ্জামের ঘাটতিও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই দূরত্ব ও ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে দ্রুত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আহতদের দ্রুত ও নিরাপদে হাসপাতালে পাঠানো এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করাও এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও তথ্য দেখতে, আপনারা দেখতে পারেন Ukraine: Impact on civilians of wave of Russian attacks এই প্রতিবেদন।

শিশু ও বেসরকারি নাগরিকদের উপর প্রভাব

রুশ হামলায় শিশুরা ও সাধারণ নাগরিকেরা সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন। স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো কেমন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে, ভাবা যায়? শুধু এই আক্রমণেই তিনজন শিশু আহত হয়েছে, অনেকেই মানসিক ট্রমায় ভুগছে।

  • শিশুদের মানসিক ও শারীরিক ঝুঁকি:
    • বোমার শব্দে বহু শিশু রাতের ঘুম হারিয়েছে
    • কেউ কেউ উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন ও আতঙ্কে ভুগছে
    • চিকিৎসকরা বলছেন, এর ফলে শিশুদের পড়াশুনো ও বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক গতিতে ছন্দপতন ঘটছে
  • বিদ্যালয় ও দৈনন্দিন জীবনে বিঘ্ন:
    • অধিকাংশ আক্রান্ত এলাকায় বিদ্যালয় বন্ধ
    • ভার্চুয়াল ক্লাসও বন্ধ, কারণ বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন
    • শিক্ষার মনোযোগে ব্যাপক ছেদ ঘটছে
  • জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জ:
    • বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতায় রান্না, স্নান, পানীয় জলের ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ
    • অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত গোপনতা নেই
    • বড়দেরও চাকরি ও ব্যবসায় ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, বিশৃঙ্খলায় দিন কাটাচ্ছেন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও পরিবারদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। এই সমস্যা কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবে এর গভীরতা অনেক অনেক বেশি।

রাশিয়ার এই আক্রমণে ইউক্রেনের শিশুদের জীবন এক নিমিষেই পালটে গেছে। কেমন ছিল একটি স্বাভাবিক সকাল, আর কেমন আজ? এই প্রতিবেদন থেকে সেটা বোঝা যায়—বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল সব কিছু যেন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো।

এই গল্প কেবল সংখ্যা বা পরিসংখ্যান নয়; শত শত পরিবার আর শিশুদের হারানোর বুকভাঙা কান্না ও নতুনতর প্রতিদিন বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্পও।

অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ক্ষতি

রাশিয়ার সর্বশেষ আক্রমণে ইউক্রেন শুধুই মানবিক বিপর্যয়ে নয়, অভূতপূর্ব অবকাঠামো ও আর্থিক ধাক্কাতেও পড়েছে। ঘরবাড়ি, দোকান, এবং পাবলিক সেবার সুনির্দিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির খবর এখন কেবল সংখ্যাতেই নয়, রোজকার বাস্তবতায়ও দেখা যাচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোয় রাতবিরাতে বিদ্যুৎহীনতা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকানের চিত্র যেন আশার বদলে অনিশ্চয়তার খবর দিচ্ছে।

বাসাবাড়ি, দোকান ও পাবলিক সুবিধার ক্ষতি: ১৪টি অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও ব্যবসার সংখ্যা, এবং পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমানমূলক ব্যয়

এবারের রাশিয়ান আক্রমণ ইউক্রেনের ১৪টি বড় অঞ্চলের জনজীবন ও সম্পদ দুইভাবেই দ্বিখণ্ডিত করেছে। সরকারি এবং আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী—

  • ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান:
    • প্রায় ৪২০টি আবাসিক বাড়ি, ১৪০টি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং (ছোট-বড় মিলিয়ে), এবং ৬২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ অথবা আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
    • অন্তত ২০টি স্কুল, ৫টি হাসপাতাল এবং ১২টি পাবলিক ইউটিলিটি বিল্ডিং আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত।
    • বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পানি সরবরাহ লাইনেও বড় ধরনের কাটছাঁট পড়েছে।

পুনর্নির্মাণ খরচের হিসাব:
এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো মেরামতের জন্য জরুরি খাত ধরে আনুমানিক অর্থব্যয় হবে ৬০-৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে কীভ, জাপোরিজ্ঝিয়া, ও ডোনবাস অঞ্চলে। শুধুমাত্র ইলেকট্রিসিটি ও পানি সরবরাহ ফেরাাতে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার আলাদাভাবে প্রয়োজন হবে।

নিচের টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান ধরনের তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে—

অঞ্চল বসতবাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট দোকান/অফিস পাবলিক সুবিধা আনুমানিক ব্যয় (মিলিয়ন USD)
কীভ ৮০ ৩৫ ১৫ ১৮
জাপোরিজ্ঝিয়া ৯০ ৩৮ ১০ ১২
ডোনবাস ৬০ ২৪ ১২
খার্কিভ ৬০ ২১
অন্য অঞ্চল ১৩০ ২২ ১৬ ১৫

সূত্র: ABC News রিপোর্ট

আপনি এই টেবিল দেখলে সহজেই অনুভব করতে পারবেন, প্রতিটি অঞ্চলই বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। শুধুমাত্র পুনর্গঠনই নয়, এই মুহূর্তে পরিবারগুলোর সামনে প্রতিদিনের জীবন-যাপনও রীতিমতো যুদ্ধে টিকে থাকার মতো।

জাপোরিজ্ঝিয়া শহরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা: ড্রোন আক্রমণে পাঁচতলা ইমারত ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতি, ফলে ২৫,০০০ গৃহস্থালি রাতের অন্ধকারে কেমন প্রভাবিত হয়েছে

এবার জাপোরিজ্ঝিয়ার কথাই ধরা যাক। শুধু একটি এলাকাতেই ড্রোন হামলায় পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্ট ও প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলাফল? রাতারাতি ২৫,০০০ গৃহস্থালি পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন। রাস্তার বাতি নিভে গেছে, ফ্রিজে খাবার পচেছে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেমে গেছে—বাসিন্দার দুশ্চিন্তা যেন পাথরের মতো ভারি।

এই “অন্ধকার রাত”-এর ঘটনা ও প্রভাব নিয়ে কিছু পয়েন্ট:

  • বাড়ির ভেতর অন্ধকার, কোনো লাইট বা হিটিং সিস্টেম চালু হয়নি
  • রান্নাঘর অচল (বৈদ্যুতিক কিচেন ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি)
  • বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি (গরম পানি বা জরুরি অক্সিজেন ব্যবহার বন্ধ)
  • টেলিকমিউনিকেশন সমস্যাও বাড়ে, কেননা অনেক ফোন চার্জ হয়নি

ইয়াহু নিউজের প্রতিবেদন মতে, আক্রমণের ঠিক পরপরই জরুরি উদ্ধার সেবা ও বিদ্যুৎ কর্মীরা কাজ শুরু করেন।

  • তারা প্রথম ৬ ঘণ্টার মধ্যে ৪০% বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনতে পারে।
  • অবশিষ্ট ৬০% এলাকা ধাপে ধাপে পুনরুদ্ধার করতে প্রায় ১৮ ঘণ্টা লাগে।
  • স্থানীয় প্রশাসন জরুরি জেনারেটর ও বাকি নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ানদের ব্যবহার করে অস্থায়ীভাবে ন্যূনতম পরিষেবা চালু করেন।

ইউক্রেনে এক রাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার তীব্র অভিজ্ঞতা বাসিন্দাদের মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়—বিশেষত গৃহবন্দি পরিবার, অসুস্থ বা শিশুদের জন্য। কিছু এলাকার পরিবার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আশপাশের গ্রামের কাছে আশ্রয় নিয়ে থাকেন, অনেকে জরুরি কেন্দ্রে যান উষ্ণতা ও খাবারের জন্য। এই দুঃসময় পাল্টে দিয়েছিল একটি শহরের রাতকে।

আরও বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন BBC নিউজে ড্রোন আক্রমণের প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন।

রাশিয়ার তেল শোধনাগার লক্ষ্যবস্তু করা ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া: ক্রাসনদার ও সিজরান রিফাইনারির ওপর ইউক্রেনের ড্রোন আক্রমণের সংক্ষিপ্তসার, রাশিয়ার দাবী অনুযায়ী শাটডাউন ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, এবং ড্রোন প্রতিহত করার জন্য রাশিয়ার বায়ু প্রতিরক্ষা সিস্টেমের কার্যকারিতা

ইউক্রেন এ সময়ে শুধু আত্মরক্ষা করেনি, পাল্টা জবাবও দিয়েছে। ক্রাসনদার ও সিজরান অঞ্চলের দুটি বড় রাশিয়ান তেল রিফাইনারিতে ড্রোন হামলা চালাতে দেখা গেছে ইউক্রেনকে।

এই ড্রোন স্ট্রাইক সম্পর্কে মূল তথ্য:

  • আক্রমণের লক্ষ্য ছিল: রিফাইনারির স্থাপনা ও ফুয়েল স্টোরেজ ট্যাংক।
  • রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: উভয় স্থানে শাটডাউন কার্যকর করা হয় এবং দ্রুত অগ্নিনির্বাপক বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়।
  • বিশাল আগুন এবং কালো ধোঁয়ার ছবি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

রাশিয়া দাবি করেছে, তাদের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি ড্রোন মাঝপথেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ড্রোন লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছনোর আগেই ভূপাতিত হয়। তবুও, আংশিকভাবে ক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে এবং একটি রিফাইনারিতে অগ্নিকাণ্ড দেখা দেয়। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ পায়নি।

এই পাল্টা হামলার ফলেই আবারও দু’দেশের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও আশঙ্কা বাড়ছে। কেউ জানে না পরবর্তী দিন সকালে কে সাবধানে নাস্তা করবে, আর কার বাড়িই বা থাকতে পারবে।
বিশদ জানতে পড়ুন রাশিয়ায় ড্রোন হামলার বিশ্লেষণ এখানে।

রাশিয়ার বায়ু প্রতিরক্ষা কতটা আধুনিক আর ইউক্রেন ঠিক কতটা সাহসী সেটা আজকের দুনিয়ায় কোনো ভিডিও, সফটওয়্যার বা স্যাটেলাইট ছবিতেই পুরোটা ধরা পড়ে না—কেবল যুদ্ধবিদ্ধস্ত এলাকাগুলোর বাস্তব অভিজ্ঞতাতেই তা বুঝে আসে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

রাশিয়ার সর্বশেষ হামলার পর আন্তর্জাতিক মহলের আলোচনায় এসেছে নিষেধাজ্ঞা, শান্তি আলোচনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার প্রশ্ন। প্রত্যাশা ছিল আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব আরও কার্যকর ভূমিকা নেবে, তবে কূটনৈতিক বাস্তবতা বেশ জটিল। চলুন দেখে নিই কেমন ছিল বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া এবং কুটনৈতিক পর্দার আড়ালে কী চলছে।

জেলেনস্কির আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান: রাশিয়ার উপর কঠোর আর্থিক ও জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা, এবং কেবল বয়ান নয় বাস্তবিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে জেলেনস্কির বার্তা উল্লেখ করুন

ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, এই হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সোজাসাপ্টা বার্তা দিয়েছেন। তার কথায়, “শুধু সহানুভূতি আর উদ্বেগ নয়, দরকার কঠোর ব্যবস্থা।” তিনি বলেছেন, বিশ্বের উচিত রাশিয়ার আর্থিক খাত ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দ্রুত এবং দৃঢ় নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
তার দাবি ছিল:

  • রাশিয়ান তেল ও গ্যাস আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা
  • স্বিফট ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে রাশিয়াকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া
  • রাশিয়ার সাথে ব্যবসা ও সহযোগিতার সব পথ রুদ্ধ করা
  • ফ্রন্টলাইনে মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানো

জেলেনস্কি মনে করেন, বিশ্বের বড় দেশগুলো শুধু বক্তৃতা দিয়ে নয়, স্পষ্টভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপে রাশিয়াকে ঠেকাতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আছে Ukraine under attack after Volodymyr Zelensky’s meeting রিপোর্টে।
তিনি বলেছেন, প্রতিটি বোমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু ইউক্রেনের মানুষ নয়, গোটা বৈশ্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থাও দুর্বল হচ্ছে। অতএব, এবার সময় বাস্তব পদক্ষেপের।

শান্তি আলোচনার স্থবিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: মার্চের শেষে ট্রাম্পের পৃথক বৈঠক, পুতিন-জেলেনস্কি সরাসরি আলোচনার প্রত্যাখ্যান, এবং বর্তমান কূটনৈতিক অগ্রগতির অবস্থা সংক্ষেপে উপস্থাপন করুন

শান্তি আলোচনা আবারও অনিশ্চিত ঠেকছে। মার্চের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভলোদিমির পুতিনের মধ্যে আলাস্কায় উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের গুঞ্জন ছিল।
এই বৈঠক নিয়ে ইউক্রেন, রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অতিরিক্ত আগ্রহ দেখা যায়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির দিকে অগ্রগতি নেই।

  • ট্রাম্পের উদ্যোগ:
    মার্চের শেষদিকে, ট্রাম্প আলাস্কায় পৃথকভাবে বৈঠক করেন, যেখানে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরাও পরে যুক্ত হন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও কিছু মানবিক ব্যবস্থা—কিন্তু জটিল অবস্থান থাকায় চুক্তি হয়নি। ট্রাম্পের উদ্যোগে সাময়িকভাবে কিছু অঞ্চল এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা বন্ধ রাখার নিয়ে কিছু অগ্রগতি হলেও, স্থায়ী সমাধান আসেনি।
    বিস্তারিত বিশ্লেষণ এই হিল-এর প্রতিবেদন এ পাওয়া যায়।
  • পুতিন-জেলেনস্কি সরাসরি আলোচনা:
    এখনো পুতিন-জেলেনস্কির সরাসরি আলোচনার জন্য কোনো সম্মতি নেই। রাশিয়া বেশিরভাগ সময় আলোচনায় অনাগ্রহ প্রকাশ করছে, আবার ইউক্রেনও হুমকির মধ্যে কোনো ছাড় দিতে নারাজ।
    সাম্প্রতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষণে Responsiblestatecraft-এ বলা হয়েছে, শান্তি প্রক্রিয়া এখনও “স্থবির” অবস্থায় চলছে।
  • কূটনৈতিক অগ্রগতি ও আশু সম্ভাবনা:
    আলোচনার প্রক্রিয়ায় এখনো ইউরোপীয় দেশগুলোরও স্পষ্ট অনাগ্রহ দেখা যায়। মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে মুলত সব ধরনের নির্মোহ আলোচনা থেমে আছে, যদিও মানবিক corredor এবং নিউট্রাল জোনের উদাহরণ আছে।
    বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে শান্তি আলোচনার মুখ্য অন্তরায়—বংশ, জাতীয় নিরাপত্তা এবং এলাকা নিয়ে কোনো পক্ষই ছাড় দিতে চায় না।

এখন পর্যন্ত বাইরের চাপ ও মধ্যস্থতা সত্ত্বেও, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এগোয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি সাময়িক প্রশমন চেষ্টা করলেও, মাঠের বাস্তবতা এখনও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার চেয়ে অনেক বেশি দাপুটে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট আবারও বিশ্ব রাজনীতিতে বড় এক অচলাবস্থার মুখে।

উপসংহার

রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলা ইউক্রেনের মানুষের জীবনে ভয়াবহ ছাপ রেখে গেছে, আর এটাই কেবল শুরু। দিন শেষে আমরা দেখেছি গণহারে আহত, ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, ভেঙে পড়া বিদ্যুৎ আর দৈনন্দিন জীবনের নিশ্চিত আশঙ্কা। শুধু যুদ্ধক্ষেত্র বা কূটনৈতিক টেবিলে নয়, যুদ্ধের প্রভাব সাধারণ নাগরিকদের প্রতিটি মুহূর্তে, ছোট-বড় শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের দুঃস্বপ্নে স্পষ্ট হয়।

বিশ্ববাসীর চোখ এখনো ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে নিবদ্ধ। মানুষের জীবন, মৌলিক অধিকার, ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখনই সময়, আন্তর্জাতিক মহলকে শুধু বক্তব্য দিয়ে থেমে না গিয়ে, আরও কার্যকর ও ন্যায়নিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। আগ্রহী পাঠকদের প্রতি অনুরোধ—আপনারা মতামত দিন, আপনারা জানুন, আর সামনে আমাদের পরবর্তী বিশ্লেষণেও সঙ্গেই থাকুন।

এই সংকট একদিনে মিটবে না, কিন্তু মানবিক প্রচেষ্টা ও বিশ্বজনতার সংহতি হয়তো নতুন ভোরের আশা জাগাতেই পারে। আপনারা পাশে থাকুন, সচেতন থাকুন—এটাই বদলের শুরু।

Click here