মিজোরাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ২০২৫: CAG অডিট, ত্রুটি ও উন্নয়ন কৌশল
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: CAG অডিটে চিহ্নিত ত্রুটি ও উন্নয়নের রাস্তা
মিজোরামের গত মার্চ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত ছেয়ে গেছে এক গভীর দুর্বিসহতা, যা সাইক্লোন রেমাল ও ভারী বৃষ্টির কারণে হয়েছে। এই সময়ে ৪২ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং প্রায় ৫,৯৩৮টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলায় মিজোরামের disaster management system কি পর্যাপ্ত প্রস্তুত ছিল? CAG এর সাম্প্রতিক অডিটে স্পষ্ট হয়েছে যে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, তাদের পরামর্শ ও নির্বাহী কমিটি এই ধরণের বিপর্যয়ে যথাযথ কার্যক্ষমতা দেখাতে পারেনি। এই ব্লগে আমরা খতিয়ে দেখব কোথায় ত্রুটি ছিল, কেন এই দুর্বলতা তৈরি হলো, আর কী করে ভবিষ্যতে উন্নতি আনা যেতে পারে।
ভিডিও ফুটেজ: YouTube ভিডিও
মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর বর্তমান অবস্থা
মিজোরাম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে। তবে সম্প্রতি CAG এর একটি বিজ্ঞপ্তি স্পষ্ট করেছে যে, রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি বড় ধরনের দুর্বলতা আছে। তিনটি প্রধান কর্তৃপক্ষ—রাষ্ট্র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (SDMA), রাষ্ট্র পরামর্শ কমিটি (SAC) এবং রাষ্ট্র নির্বাহী কমিটি (SEC)—যারা দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রধান ভূমিকা পালন করা উচিত, তারা যথাযথ প্রস্তুতি ও কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা অর্জন করেছে। এই ত্রুটিগুলো বিপর্যয়ের সময় সঠিক প্রতিক্রিয়া দেয়ার ক্ষেত্রে বড় বিঘœ ঘটিয়েছে।
রাষ্ট্র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (SDMA)
SDMA’র মূল কাজ হলো রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন তদারকি করা। কিন্তু সাম্প্রতিক অডিটে দেখা গেছে SDMA দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ঝুঁকি হ্রাসের জন্য কোনও কার্যকর পরিকল্পনা রাজ্যের উন্নয়ন নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। তাদের কার্যক্রম বেশির ভাগ সময়ে বিলম্বিত হয়েছে, আর তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় তদারকি ও পর্যবেক্ষণের অভাবও স্পষ্ট।
- দুর্গত এলাকা উন্নয়ন পরিকল্পনায় দুর্যোগ ঝুঁকি কমানো যুক্ত করার অভাব থেকে প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে।
- দপ্তরগুলোতে দুর্যোগ পরিকল্পনার জন্য গাইডলাইন ২০১৫ সালে জারি হলেও বাস্তবায়নে টানা দেরি হয়েছে।
- দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য কোনো আলাদা SOP (Standard Operating Procedures) তৈরি হয়নি বিভিন্ন বিপর্যয় যেমন ভূমিকম্প, ভূমিধস, বন্যা বা সাইক্লোনের জন্য।
SDMA যে দায়িত্বের জন্য প্রতিষ্ঠিত, তাতে সীমাবদ্ধতা থাকার ফলে রাজ্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সঠিক কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
রাষ্ট্র পরামর্শ কমিটি (SAC)
SAC একটি পরামর্শদাতা শিবির, যারা রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা ও পরিকল্পনায় সুপারিশ দেয়। কিন্তু ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত SAC কোনও সভা সম্পন্ন করেনি। একদম নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে:
- গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ এবং রূপরেখা তৈরিতে বড় বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে।
- মন্ত্রিসভায় বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পৌঁছায়নি।
- যেকোনো প্রকল্প এবং বিপর্যয় মোকাবেলা পরীক্ষার জন্য সংকেত তৈরি করা হয়নি, ফলে বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রভাব পড়েছে।
এই দীর্ঘ সময়ের বন্ধ থাকা সভাগুলো মিজোরামের দুর্যোগ প্রতিরোধ সক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে, যা রাজ্যের দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য বড় ঝুঁকি।
রাষ্ট্র নির্বাহী কমিটি (SEC)
SEC দুর্যোগের মুহূর্তে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু এই কমিটি নির্মাণ কাজের ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (NBC) ও বিএসআই (BIS) কোড যাচাই করা থেকে বিরত থেকেছে। এর ফলে:
- নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা মেনে চলা হয়নি।
- ভূমিধস-প্রবণ এলাকার নিয়মিত পরিদর্শন ও গবেষণার অভাব দেখা গেছে।
- মাটির গুণগত মান পরীক্ষা অত্যন্ত সীমিত পরিমাণে হয়েছে, যেমন আইজল শহরের হান্থার ভেং এলাকায় একটি ক্ষেত্রে মাত্র মাটি পরীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে।
এসব ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়েছে এবং বাস্তবে বড় ধরনের ভৌত ক্ষতি হয়েছে। নিরাপত্তামূলক প্রোটোকল না মেনে নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনার ফলে দুর্যোগের সময় ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে।
মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর এই দুর্বলতা ও ত্রুটিগুলো থেকে সে শিক্ষা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এসব ঝুঁকি কমানো যায়। CAG রিপোর্ট এ বিস্তারিত স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রশাসনিক দফতরগুলোকে কত দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত কার্যক্রম বদল না হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দিনে দিনে বাড়বে।
সাম্প্রতিক দুর্যোগের প্রভাব এবং পরিসংখ্যান
২০২৪ সালের বহুল আলোচিত সাইক্লোন রেমাল আর তার প্রভাবিত বন্যা, ভূস্লোপাত ও মানবিক ক্ষতির তথ্য এখন মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দিকে তাকাতে বাধ্য করেছে। প্রকৃতিক এই বড়ো আঘাত মিজোরামের মানুষের জীবনধারা, বাসস্থান এবং অর্থনীতির উপর গভীর ছাপ ফেলেছে। চলুন দেখে নিই এই দুর্যোগগুলো কেমন ক্ষতি করেছে এবং পরিসংখ্যান কী বলছে।
সাইক্লোন রেমাল ও বন্যা
সাইক্লোন রেমাল মে মাসের শেষ দিকে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ের মাধ্যমে আঘাত হানে। মিজোরামের বিভিন্ন অংশে প্রায় ২০০ মিমি’র বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে যা নদীমাতৃক এলাকা ও পাড়ি দেওয়ার উপযোগী হওয়া স্থানগুলোতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি করেছে। এই সাইক্লোনে প্রতি ঘণ্টায় বায়ুর গতি ছিল প্রায় ১১০-১৪০ কিমি, যা স্থানীয় স্থাপনার উপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে।
- রেমালের তীব্রতা মিজোরামের অনেক জায়গায় কেঁপে উঠার মতো ছিল, বিশেষ করে আইজল ও তার আশপাশে।
- বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে বেশ কিছু নদী এবং ছোট খালের স্রোত বেষ্টিত এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
- ক্ষয়ক্ষতির ছবি দেখলে বোঝা যায়, ফসলের ক্ষতি, সড়ক ধ্বংস, এবং পানি সরবরাহ ও বায়বীয় যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে।
এই সময়ে মিজোরামে প্রায় ৪২ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং জরুরী উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। টাইমস অফ ইন্ডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতির অভাব ছিল।
ভূমিধস ও মাটির গড়িয়ে পড়া
মে মাসে মিজোরামের পাহাড়ি এলাকা ৯৪০টিরও বেশি স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এই ব্যাপক ভূমিধসের প্রভাবে অন্তত ৬ জন ব্যক্তি মারা গেছেন। ভূমিস্লাইডগুলোর ধ্বংসযজ্ঞে অনেক বাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- ভূতাত্ত্বিক দুর্বলতার কারণে পাহাড় ধসে যাওয়ার ঘটনাগুলো বেড়েছে।
- প্রাকৃতিক ভারী বৃষ্টিপাত ও সঠিক পরিকল্পনা না থাকার জন্য মাটির গড়িয়ে পড়া ঘটেছে।
- স্থানীয় ইটভাটার আশপাশের বাসিন্দাদের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে।
ভূমিধসের ফলে রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য বড়ো এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বসতিগৃহ ক্ষতি ও মানবিক ক্ষতি
ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের প্রভাবে মোট ৫,৯৩৮টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ক্ষতির কারণে বিশাল সংখ্যক পরিবার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা যেমন খাবার, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
- বাড়িঘর হারানো পরিবার গুলোকে সাময়িকভাবে শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে।
- আর্থিক ক্ষতি রাজ্যের হিসাব অনুযায়ী কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা পুনর্বাসন ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হবে।
- মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে, কারণ খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার চাহিদা বেড়ে গেছে।
এইসব তথ্য থেকে স্পষ্ট হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়। গভীর পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
এই সত্যিই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবেলায় মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কতটা প্রস্তুত ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিস্তারিত জানতে পারেন CAG রিপোর্টে।
CAG অডিটের মূল পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ
মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে ত্রুটিগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলো বেশ গভীর। CAG রিপোর্টে দেখা গেছে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত তদারকি, মনিটরিং সিস্টেমের অভাব এবং প্রশিক্ষণের দুর্বলতাও বিরাজ করছে। এই বিভাগে এই মূল সমস্যা ও সুপারিশগুলো বিশদে তুলে ধরা হল।
পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনা হলো প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কিন্তু মিজোরামের উন্নয়ন পরিকল্পনায় দুর্যোগ প্রতিরোধ সংযোজন হয়নি, যা অডিটে স্পষ্ট হয়েছে। কোথাও কোথাও দেরিতে ইস্যু হওয়া নির্দেশিকাগুলো কেবল বিলম্বিত পদক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- রাজ্যের উন্নয়ন নীতিমালায় দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর কোনো কার্যকর অন্তর্ভুক্তি নেই।
- দপ্তরগুলোকে ২০১৫ সালে যেসব নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লেগেছে বা অনবরত বিলম্ব হয়েছে।
- দুর্যোগ মোকাবেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় না থাকায় তৎক্ষণাত সাড়া দেয়া সম্ভব হয়নি।
এই সংকটগুলি একটি ব্যর্থ পরিকল্পনার ছবি ফুটিয়ে তোলে, যেখানে কাঠামোগত সমন্বয় ছাড়া কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া দারুণ কঠিন।
প্রযুক্তিগত তদারকি ও মানদণ্ডের অবহেলা
নির্মাণ ক্ষেত্রে সঠিক প্রযুক্তিগত তদারকি ও জাতীয় মানদণ্ড অনুসরণ না করার ফল ভয়ানক। NBC ২০০৫ ও BIS কোডের নিয়মাবলী মেনে চলা না হওয়ায়:
- নির্মাণ কাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়নি, যা দুর্যোগের সময় উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
- ভূমিধস-প্রবণ এলাকায় নির্মাণের ক্ষেত্রে মান যাচাইয়ের অভাব প্রকৃত ক্ষতি বাড়িয়েছে।
- অনেক প্রকল্পে মাটি ও স্থাপত্যগত পর্যবেক্ষণ সঠিকভাবে সম্পাদিত হয়নি, ফলে নির্মাণের গুণগত মানে প্রভাব পড়েছে।
এসব কারণে সাইক্লোন, বন্যা বা ভূমিধসের মতো দুর্যোগে সম্পত্তি ও মানুষের ক্ষতি বাড়ার কঠিন পথ তৈরি হয়েছে। CAG রিপোর্ট এ এ বিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
মনিটরিং সিস্টেম ও SOP এর অভাব
দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং সিস্টেম এবং নির্দিষ্ট ভাবে প্রস্তুত SOP (Standard Operating Procedures) অপরিহার্য। কিন্তু মিজোরামে:
- ভূস্লোপাতের মতো গুরুতর বিপর্যয়ের স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
- যেসব SOP থাকা দরকার ছিল, ভূমিকম্প, বন্যা বা সাইক্লোনের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গঠন করা হয়নি।
- মনিটরিংয়ের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় করেয়ার সঠিক তথ্য সংগৃহীত হয়নি।
এতে দুর্যোগের সময় দ্রুত ও যুক্তিসংগত প্রতিক্রিয়া দেওয়া কঠিন হয়েছে। ছোটখাটো সতর্কতা বা পূর্বাভাস পেতেও দীর্ঘ সময় লেগেছে, যা অনেক প্রাণ ও সম্পদ বাঁচাতে পারত।
ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও প্রশিক্ষণ
প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিই দুর্যোগ মোকাবেলায় মূল শক্তি। কিন্তু মিজোরামের মেডিক্যাল ও পুলিশ কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মক ড্রিলের অভাব প্রকট। এর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা গেছে:
- জরুরী সেবাতে কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতি, যা চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রমকে ধীর করে দিয়েছে।
- মক ড্রিল না থাকায় বাস্তব দুর্যোগে কর্মীরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেননি।
- এই কারণে দুর্যোগ মোকাবেলায় সংগঠনগুলোতে দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে, যা জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
সঠিক প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত অনুশীলন ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাঠামো কার্যকর হয় না। ফলে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং-এ বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।
এই পর্যবেক্ষণগুলো স্পষ্ট করে, মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এখনই পরিবর্তনের প্রয়োজন। পরিকল্পনাসহ প্রযুক্তিগত ও মানসম্পন্ন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, SOP তৈরির পাশাপাশি কর্মী প্রশিক্ষণে দ্রুত গতি আনা উচিত। এতে ভবিষ্যতের বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রস্তুতি অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
এখানে আরও বিস্তারিত দেখতে চাইলে Mizoram State Disaster Management Plan পড়তে পারেন।
উন্নত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তাবনা
মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতিগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলো শুধু চিহ্নিত করেই চলবে না; নিশ্চিত করতে হবে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত সমাধান। উন্নত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়তে হলে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পরিবর্তন আনতে হবে। নিচে কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হলো যা মিজোরামের দুর্যোগ প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় ইতিবাচক পার্থক্য আনবে।
বিকাশ পরিকল্পনায় একীভূত করা: সকল উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্যোগ প্রতিরোধের ধাপ সংযোজনের পদ্ধতি বর্ণনা করুন
যেকোনো উন্নয়ন কাজের সঙ্গে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের ব্যবস্থা একযোগে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। এর জন্য:
- উন্নয়ন নীতিমালার প্রতিটি স্তরে দুর্যোগ ঝুঁকি মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
- নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সময় ‘দুর্যোগ প্রতিরোধের প্রভাব রিপোর্ট’ (DRIA) জমা দিতে হবে।
- পরিবেশ ও ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রের সাহায্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে প্রতিরোধ ব্যবস্থার অবলম্বন নিশ্চিত করতে হবে।
- কাজের প্রতিটি পর্যায়ে অনুকূল নির্মাণ ও স্থায়িত্ব মূলক উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকতে হবে।
- উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পর্যালোচনা ও সুপারিশ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এভাবে উন্নয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একত্রীকরণের মাধ্যমে কেবল ক্ষয়ক্ষতি কমবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
নিয়মিত সাইট পরিদর্শন ও গবেষণা: ল্যান্ডস্লাইড প্রবণ এলাকায় পর্যায়িক মাটির পরীক্ষা ও গবেষণা পরিকল্পনা উল্লেখ করুন
ল্যান্ডস্লাইড ঝুঁকি কমাতে শুধুমাত্র পূর্বানুমান সচেতনতা যথেষ্ট নয়। নিয়মিত সাইট পরিদর্শন ও মাটি পরীক্ষার গবেষণা অপরিহার্য।
- ভূমিধস প্রবণ এলাকাগুলোতে প্রতি ৬ মাস অন্তর মাটির গুণগত মান ও জলাধারণ ক্ষমতার বিশদ পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
- ভূতাত্ত্বিক দল গঠন করে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিরীক্ষা চালানো।
- পরিদর্শনের ফলাফল অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে জরুরি সংস্কার বা “গ্রিন বনাউন্ডারি” তৈরি।
- কৃষি, কৃষিক্ষেত্র ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে।
- স্থানীয় নাগরিক ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় পর্যায়িক তথ্য সংগ্রহ ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রাখতে হবে।
গভীরবিশ্লেষণ ও নিয়মিত গবেষণা ভূমিধসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করবে।
স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং ও সতর্কতা ব্যবস্থা: ড্রোন, সেন্সর ও রিমোট মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের কৌশল ও খরচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন
দূরবর্তী আবহাওয়া ও ভূত্বক পরিব্যপ্তির জন্য স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং অপরিহার্য। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ঝুঁকি আগেই ধরা পড়ে এবং দ্রুত সতর্কতা জারি করা যায়।
- ড্রোন ব্যবহার: পাহাড়ি ও দূর্গম এলাকায় নিয়মিত এলাকা মনিটরিংয়ের জন্য ড্রোন প্রযুক্তি নেয়া যেতে পারে, যা বায়বীয় ছবির মাধ্যমে ঝুঁকি চিহ্নিত করবে। প্রতি ড্রোনের আনুমানিক খরচ ২০-৩০ লাখ টাকা।
- সেন্সর স্থাপন: ভূমিধস, বৃষ্টিপাত, মাটি সঞ্চালন এবং তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ সেন্সর স্থাপন করা দরকার। সেন্সর অ্যালার্ট সিস্টেমে জোড়া দিয়ে তাৎক্ষণিক সতর্কতা পাঠানো যায়। প্রতি স্টেশন/সেন্সরের খরচ প্রায় ৫০০,০০০ থেকে ১,০০০,০০০ টাকা।
- রিমোট মনিটরিং: সারা রাজ্যের মনিটরিং তথ্য একটি কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ডে একত্র করা হবে, যেখান থেকে ২৪/৭ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় আইটির অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যার প্রাথমিক খরচ হতে পারে ২-৩ কোটি টাকা।
এই প্রকল্প পূর্ণ করার জন্য ধাপে ধাপে বাজেট বরাদ্দ ও প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ প্রয়োজন। প্রযুক্তির সাহায্যে দুর্যোগের পূর্বাভাস ও প্রতিক্রিয়া সময়ের মধ্যে অনেক দ্রুততর করা সম্ভব।
স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিউর (SOP) তৈরি: ভূকাম্প, ভূমিস্লো, বন্যা, খরা, সাইক্লোন ও ক্লাউড বার্স্টের জন্য আলাদা SOP রচনা এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরুন
প্রতিটি ধরনের দুর্যোগের জন্য নির্দিষ্ট ও বিশদ SOP থাকা জরুরি। SOP-এর মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার সময় কর্মীরা কী করতে হবে তা পরিষ্কার হয়।
- ভূমিকম্প, ভূমিধস, বন্যা, খরা, সাইক্লোন ও ক্লাউড বার্স্টের জন্য নির্দিষ্ট SOP তৈরি করতে হবে যাতে প্রতিটি পর্যায়ের ব্যবস্থা ধাপে ধাপে নির্দেশিত থাকে।
- SOP-এর মধ্যে ঝুঁকি মূল্যায়ন, জরুরী প্রস্তুতি, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, জনসাধারণের যোগাযোগ ও পুনর্বাসনের নির্দেশনা থাকতে হবে।
- SOP গুলোকে আইনগত বাধ্যতামূলক করে চালু করতে হবে এবং নিয়মিত আপডেট করা হবে।
- SOP সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
শুধুমাত্র পাঠ্য নীতিমালা নয়, তবে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকতে হবে। SOP ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কখনোই কার্যকর হয় না।
প্রশিক্ষণ ও মক ড্রিল: মেডিক্যাল, পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বার্ষিক প্রশিক্ষণ ও মক ড্রিলের পরিকল্পনা প্রস্তাব করুন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় সমর্থন আসে দক্ষ কর্মী ও প্রস্তুতিপূর্ণ কমিউনিটি থেকে। এজন্য:
- মেডিক্যাল, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য প্রতি বছরে অন্তত দুইবার প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে হবে যাতে তাদের দুর্যোগ মোকাবেলায় পারদর্শিতা বাড়ে।
- মক ড্রিলের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতির মত পরিস্থিতি তৈরি করে দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া কার্যক্রম শেখানো।
- প্রশিক্ষণ ও ড্রিলের অংশ হিসেবে দুর্যোগের সময় চুপচাপ থাকার, দ্রুত সরাসরি নির্দেশনায় কাজ করার মতো নীতিগুলো গুরুত্ব দেয়া।
- স্থানীয় ভাষায় প্রশিক্ষণ এবং কমিউনিটির মধ্যে দুর্যোগ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কর্মশালা চালানো।
- প্রশিক্ষণের ফলাফল যাচাই এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
মক ড্রিল ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব, কারণ সঠিক পর্যায়ের প্রস্তুতি দুর্ঘটনার সময় বাঁচাতে পারে অনেক জীবন।
এই প্রস্তাবনাগুলো প্রয়োগ করলে মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হবে। যদি রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করে, তাহলে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিসাধন অনেক কম আকারে আসবে। বিস্তারিত জানতে পারেন Times of India প্রতিবেদন থেকে।
উপসংহার
মিজোরামের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অনেক বড় অমনত প্রবণতা ও গাফিলতি CAG অডিটে স্পষ্ট হয়েছে। কাঠামোগত ত্রুটি, অপর্যাপ্ত পরিকল্পনা, অপরিমিত তদারকি ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে রাজ্য দুর্যোগের সময় দ্রুত ও কার্যকর সাড়া দিতে পারেনি। বিশেষ করে SDMA, SAC ও SEC-র মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং SOP তৈরি না করাটা বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্রুত কাঠামোগত পরিবর্তন এবং সুসংহত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। বেসরকারী সংস্থা ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দুর্যোগ প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। মিজোরামের ভবিষ্যত নিরাপদ করতে CAG-এর সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এখন সময় একসঙ্গে কাজ করার, যাতে নতুন বিপর্যয়ে প্রাণরক্ষার সক্ষমতা থাকে।

