লতাসিল টিউটর অনশন ২০২৫: শিক্ষক স্বীকৃতি, সরকারি প্রতিশ্রুতি ও মর্যাদা সন্দর্ভে আপডেট

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

লতাসিলে টিউটরদের অনশন: শিক্ষক স্বীকৃতি, মর্যাদা ও সরকারি প্রতিশ্রুতির দাবি (২০২৫ আপডেট)

শিক্ষক দিবসে গৌহাটির লতাসিল মাঠে শত শত টিউটর অনশন শুরু করেছেন, আর এই ঘটনা হঠাৎ সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তাঁদের দাবি খুব স্পষ্ট—‘টিউটর’ বলে বিবেচিত হচ্ছেন, অথচ বছরের পর বছর স্কুলে শিক্ষকতায় নিয়োজিত থেকেও তাঁরা স্বীকৃতি, মর্যাদা এবং ন্যায্য সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না। এই অনশন শুধুমাত্র বেতন বা একটি চাকরির বিষয় নয়; এটি জীবনের নিরাপত্তা, ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা এবং আস্থার লড়াইও। সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়েছে, সেটি নিয়ে এখন খোলাখুলি প্রশ্ন উঠছে, আর এই পরিস্থিতি শিক্ষক পেশার প্রতি সমাজের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন: https://www.youtube.com/watch?v=G45gRnSPtuY

লতাসিলে টিউটরদের অনশন: আন্দোলনের মূল দাবি ও প্রেক্ষাপট

 

শিক্ষক দিবসে লতাসিল মাঠের অনশন নতুন কোন ক্ষোভের আগুন নয়—এটা বহুদিনের জমে থাকা বঞ্চনার ফলাফল। হাজার হাজার টিউটর দিনের পর দিন স্কুলে পড়িয়ে, নিজেদের “শিক্ষক” ভাবলেও কাগজে-কলমে তাঁদের জায়গা ঠিক সেই ‘টিউটর’ পরিচয়ে আটকে আছে। তাঁদের আন্দোলনের কেন্দ্রে আছে বৈষম্য, বেতন-বৈষম্য, আর সরকারি অবহেলা থেকে জন্ম নেওয়া ক্ষোভ। সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েও বহু ব্যাপারে নীরব, ফলে তাঁদের এই লড়াই সংঘবদ্ধ হতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি বাধ্যতামূলক TET পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের পরSituationটি একেবারে তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে। নিচে সংক্ষেপে মূল কারণ ও দাবি গুলো তুলে ধরা হল।

টিচার স্বীকৃতি ও মর্যাদা—’টিউটর’ থেকে ‘শিক্ষক’ হওয়ার লড়াই

লতাসিলের আন্দোলনের কেন্দ্রে আছে স্বীকৃতির দাবি। দীর্ঘদিন ধরে এই টিউটররা—

  • স্কুলে পূর্ণ শিক্ষক-দায়িত্ব পালন করছেন,
  • পাঠদান ছাড়াও প্রশাসনিক কাজ, শিক্ষার্থী পরিচালনা, অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন,
  • তবুও তাঁদের পদবি ‘টিউটর’, যা একজন শিক্ষক হিসেবে পর্যাপ্ত সম্মান ও সুবিধা দেয় না।

এদের অনেকেই এমন স্কুলে কাজ করেন, যেখানে সরকারি স্বীকৃতি ২০০৬ সালের আগেই মিলেছিল। তারপরও সরকারি বেতন-ভাতা তো নয়ই, অবসরকালীন সুরক্ষাও মেলেনি। একজন শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষার্থীর কাছে যেমন সম্মান পান, টিউটরদের অবস্থা অনেকটা ছায়ার মতো—থাকেন, কাজ করেন, কিন্তু আলো পান না।

ন্যায্য বেতন, আর্থিক সুরক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার দাবি

অনেক টিউটরের মাসিক বেতন বারো হাজার টাকা, যা বর্তমান বাজারে টিকে থাকার জন্য অপ্রতুল। তাঁদের মূল দাবির মধ্যে আছে:

  • বেতন হারে স্থায়ীকরণ—স্থায়ী শিক্ষক যা পান, টিউটররাও একই বেতন এবং সুবিধা চান।
  • অবসরকালীন সুবিধা—পেনশন, গ্ৰ্যাচুইটি, হেলথ-ইনস্যুরেন্স, এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধা।
  • অকালমৃত্যু বা অবসরে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা—অন্তত ১০ লাখ টাকা এককালীন সহায়তা।

একটি সাধারণ পরিবারে বেঁচে থাকার লড়াই যেখানে প্রতিদিনের বাস্তবতা, সেখানে একজন শিক্ষক যদি বিনা বেতনে, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করেন, সেটা কেমন অসম্মানের, তা সহজেই অনুমেয়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে চাইলে Assam Tribune-এর প্রতিবেদন পড়তে পারেন।

বাধ্যতামূলক TET পরীক্ষার যুক্তি ও তার বিরোধিতা

বছরের পর বছর ধরে যারা ক্লাস-রুমে পড়াচ্ছেন, তাঁদের হঠাৎ করে TET (Teachers’ Eligibility Test) বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলেছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য স্পষ্ট:

  • বহু অভিজ্ঞতা, দীর্ঘদিনের পাঠদানের পরেও নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে কেন?
  • অনেক টিউটর ৫০-৬০ বছর বয়সেও চাকরিতে—তাঁদের পক্ষে পরীক্ষায় পাশ করা দুষ্কর।
  • অনেক দেরিতে সরকারি সিলমোহর মিললেও, বাস্তবে এঁরা নিজেরা যথেষ্ট দক্ষ ও পরীক্ষিত।

সরকার মনে করছে TET মানদণ্ডে সবাইকে আনতেই হবে। বিপরীতে, আন্দোলনকারীদের যুক্তি—যারা বিগত দুই-তিন দশক ধরে শিক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের নিয়মের ফাঁদে না ফেলে বরং অভিজ্ঞতা ও অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এই TET বাধ্যতামূলক করার ঘোষণার ফলে প্রায় এক ধাক্কায় তাঁদের চাকরি ও ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে গেছে। বিশদ জানতে Times of India-র প্রতিবেদনটি পড়া যেতে পারে।

যোগ্য টিউটরদের জন্য সরকারি প্রতিশ্রুতি—অপ্রাপ্তির হতাশা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার মৌখিক বা লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কেউ কেউ মনে রেখেছেন, কেউ তা ভুলে গেছেন। টিউটরদের অভিযোগ: প্রতিশ্রুতি যত আছে, বাস্তবায়ন ততটাই কম। শুধু আশার কথা শুনে কেটে গেছে বছর বছরের পর বছর। অবশেষে তাঁদের আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে ক্ষোভ, অভিমান আর Rightful Justice-র ডাক। সরকারি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বারবার টলবাজির সুযোগ নিচ্ছেন, কিন্তু জীবনের স্পর্শে ক্ষতিগ্রস্ত এই বিপুল শিক্ষক-শ্রেণি অধিকার ছাড়া কিছুই পাচ্ছেন না।

এই প্রেক্ষাপটেই লতাসিলের আন্দোলন গোটা অসমের এগিয়ে চলা শিক্ষাঙ্গনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

সরকারি প্রতিশ্রুতি ও অপূর্ণতা: ১০ লক্ষ টাকা গ্র্যাচুইটির গল্প

সরকারি প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব চিত্রের ফারাক ঠিক যেন এক জলচ্ছটার মতো ক্ষত সৃষ্টি করেছে হাজার হাজার টিউটর ও তাঁদের পরিবারের জীবনে। ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, আসাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা টিউটর, শিক্ষক, ও স্কুল কর্মচারীদের সামনে ঘোষণা করেছিলেন—সরকার প্রত্যেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ১০ লক্ষ টাকা এককালীন গ্ৰ্যাচুইটি দেবে। কথাটি ছিল বহু বছরের লড়াই ও চাওয়ার প্রতি সম্মান জানানোর প্রতিশ্রুতি। বাস্তবে, এই ঘোষণার বাস্তবায়ন নিয়ে রাজ্যের শিক্ষক সংগঠন ছাড়িয়ে গোটা সমাজেই সন্দেহ আর হতাশার ছায়া নেমে আসে। বহু টিউটর ও তাদের পরিবার এখনও পর্যন্ত সেই টাকার মুখ দেখেননি, ফলে এই প্রতিশ্রুতিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ, হতাশা এবং নিরাপত্তাহীনতা।

 

অবসরপ্রাপ্ত টিউটর ও পরিবারের আর্থিক সংকট: কীভাবে হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত টিউটর এবং তাদের পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বিশেষত মৃত্যুর পরে গ্র্যাচুইটি না-পাওয়ায়

একজন স্কুল টিউটর বছর বছর ছাত্র পড়িয়ে নিজের পরিচয় গড়েন, কিন্তু অবসরজীবনে এসে যদি আর্থিক নিরাপত্তা হাতছাড়া হয়, তা নিঃসন্দেহে এক বড় আঘাত। বাস্তব ছবি অনেকটাই এমন—

  • টিউটরের অবসরকাল: বেতন নিজেই কম, কোন পেনশন নেই, না-থাকছে কোনো হেল্থ ইনস্যুরেন্স।
  • পরিবারের বোঝা বাড়ছে: মৃত্যু হলে পরিবারকে সরকারি অভিভাবকত্ব মেলে না, ছোট বাচ্চা-মা-স্ত্রীরা আর্থিক অসহায়ত্বের মুখে পড়েন।
  • গ্র্যাচুইটি অধরাই: বছরের পর বছর চাকরি করেও, শেষ পর্যন্ত ‘সহানুভূতির সান্ত্বনা’ ছাড়া পান না অনেকেই।

২০২১ সালের হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রতিশ্রুতিতে যেন একটা নতুন আশার আলো এসেছিল। কিন্তু ‘Sentinel Assam’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আজও বহু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবার সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে মেলার অপেক্ষায়! শুধু একজন-দু’জন নয়, গোটা এক প্রজন্মের ভবিষ্যত টিমটিম করে।

শিক্ষক সংগঠন এবং কর্মচারী ফোরামেরা বহুবার রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। সহযোগী সংগঠনগুলো যেমন Assam High School Retired Teachers’ & Employees Association, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে দাবি জানালো, অথচ ফলাফল বিফল। এই স্থবিরতায় বহু পরিবার উদ্ভ্রান্ত—যেন ঘরের চাল ফুটো, আর্থিক বৃষ্টি থামছেই না।

এক নজরে কোথায় সমস্যা:

সমস্যা প্রভাবিত পরিবার (আনুমানিক) বর্ণনা
গ্ৰ্যাচুইটির বিলম্ব ৫,০০০+ টাকার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা
পেনশন নেই ৮০% অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকমণ্ডলী মৃত্যুর পরে স্বজনরা আর্থিক কষ্টে পড়েন
সরকারি সুবিধা সীমিত অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিমা ও এককালীন সহায়তা অনুপলব্ধ

শুধু অর্থ নয়—এ হচ্ছে মর্যাদার, মর্যাদাবোধের নামে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের এক কাহিনী। শিক্ষকরা মনে করেন, Government-approved gratuity না পেলে “সম্মানের জায়গায় অসম্মান”, — এই অনুভূতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

NEP 2020 ও প্রাদেশিকরণ: আরেকটি অনিশ্চয়তার ছায়া

নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি (NEP 2020) নিয়ে এসেছে অজস্র পরিবর্তন, যার একটা বড় অংশ হলো “একীভূতকরণ” (merger) এবং ছোট স্কুলের বন্ধ হয়ে যাওয়া। আসামে ২০১৩ সালের প্রাদেশিককরণ প্রক্রিয়ায় বহু স্কুল সরকারীকৃত হলেও, NEP 2020 সেই আশা ঘিরে আবার ফেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার ছায়া।

  • স্কুল একীভূত হবে কিনা জানা নেই
  • ছোট স্কুল বন্ধ হলে চাকরি কি থাকবে?
  • অনেক টিউটর বা সহকারী শিক্ষক চাকরি হারানোর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন

‘Guwahati Plus’-এর রিপোর্ট অনুসারে, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ সংকটে NEP 2020 ঠিকঠাকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। স্কুল কম, ছাত্র-সংখ্যা কমছে, নতুন নীতির নামে একীভূতকরণ হলে প্রাণের স্কুলটাও হারানোর আশঙ্কা। ইতিমধ্যে শিক্ষক মহলে আতঙ্ক:

  • ইতিমধ্যে NEP-র “school mergers” বিষয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে,
  • চাকরি থাকবে তো? সবাইকে পুনরায় নিয়োগ দেবে তো?
  • সরকারি বা সংগঠনের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই দিনের পর দিন টেনশনে আছেন টিউটর-শিক্ষকরা।

এই গোলকধাঁধায় একদিকে চাল-ডাল কেনার চিন্তা, অন্যদিকে সরকারি ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ঘোষণার ধোঁয়া! নতুন নীতির ছায়ায় প্রাদেশিককরণের স্বপ্নও ধুলোবালিতে ঢাকা পড়ছে বলে অনেকেই মনে করেন। শিক্ষক সংগঠন গুলো এক হাজার কণ্ঠে বলছেন—‘আমরা হয় শিক্ষকের মর্যাদা চাই, নয়তো সরকারের প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই’। এক্ষেত্রে NEP-এর জটিলতা শুধুই অলংকার নয়, বরং জীবন-জীবিকার ভয়ের নাম।

আরও বিশদ জানতে, NEP 2020 বাস্তবায়ন ও স্কুল একীভূতকরণের জটিলতার উপর এই ফিচার রিপোর্টটি পড়া যেতে পারে।

সময়ের সাথে শিক্ষকেরা চাইছেন—‘কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তব উপকার।’ আজ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে সরকারি প্রতিশ্রুতিতে সন্দেহ আর সরকারি নীতিতে অনিশ্চয়তা—দুটোই জীবনের অজানা ট্রেনে ভেড়া কাটা পড়ার মতো অনুভূতি দেয়।

আন্দোলনের অব্যাহত চাপ ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা

লতাসিলে আন্দোলনের সময় টিউটরদের দৃঢ়-প্রতিজ্ঞা ও প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ—চোখেমুখে ক্লান্তি, কিন্তু সংকল্প অটুট। (Image created with AI)

লতাসিল মাঠের টিউটরদের অনশন এখন শুধু ক্ষণিকের প্রতিবাদ নয়, বরং সেটি দৈনিক খবরের শিরোনাম ছাপিয়ে জোরালো সামাজিক আলোচনার কারণ হয়েছে। শিক্ষকেরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কেবল দাবি-দাওয়ার চিঠিপত্রে আটকে থাকবেন না। সরকার প্রতিনিয়ত নীরব বা দ্ব্যর্থক ভাষায় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে খুব সামান্য বদল এসেছে। আবার বারবার প্রতারিত হতে রাজি নন বলে টিউটররা তাঁদের আন্দোলনের নতুন পথ খুঁজছেন। চলমান জরুরি পরিস্থিতির জন্য তাঁদের স্ট্র্যাটেজিই এখন বৃহত্তর শিক্ষাক্ষেত্রের জন্য দিকনির্দেশনা তৈরি করছে।

সরকারের নিরবতা ও আল্টিমেটাম: ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমায় উত্তেজনা

এই অনশন আর সাধারণ আন্দোলনের মতো নয়। যেদিন গৌহাটিবাসী বা গোটা অসম শিক্ষক দিবসে উৎসবে মেতে ছিল, সেদিন টিউটরদের লক্ষ্য ছিল একটাই—সরকারি নিরবতার দেয়াল ভাঙা। এতদিন ধরে সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে, দিয়েছে স্মৃতিচিহ্ন, কিন্তু প্রকৃত সমাধান বা বাস্তব রূপরেখা দেয়নি।

গত সপ্তাহে টিউটরদের পক্ষ থেকে সরকারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—এই পরিস্থিতির অবসান চাই, তা না হলে আন্দোলন আগামী ১০ অক্টোবরের পর আরও কঠোর হবে। তাঁরা বলেছেন, এই সময়সীমার মধ্যে দাবি না মানলে আন্দোলন হবে প্রকৃত অর্থেই ‘ক্লাসরুম বর্জন’ ও বৃহত্তর কর্মসূচি।

কিছু আল্টিমেটাম-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন দিক:

  • অক্টোবর ১০ পর্যন্ত সরকারকে চূড়ান্ত সময় দেওয়া হয়েছে
  • এরপর টিউটররা রাজ্যজুড়ে ক্লাস বয়কট করতে পারেন
  • বৃহত্তর শিক্ষক-মোর্চা তৈরি হবে, ছাত্র-অভিভাবকও আন্দোলনে যুক্ত হবে

সম্পূর্ণ আন্দোলন নিয়ে আরও জানতে আসাম ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদনে চোখ রাখতে পারেন।

আন্দোলনের নতুন রূপ: ক্লাস বয়কট ও সংগঠিত কঠোর কর্মসূচি

অনশন পর্যায় পার হয়ে এখন টিউটররা আরও কঠিন পথ বেছে নিতে প্রস্তুত। তাঁদের মূল বক্তব্য হলো—‘শিক্ষকেরা যদি ক্লাস না নেন, শিক্ষা ব্যবস্থার চালিকা শক্তি থেমে যাবে’। এইসব সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা রীতিমতো রূপরেখা সাজাচ্ছেন যেন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।

কোন কোন কর্মসূচি উঠে আসছে?

  • শ্রেণিশিক্ষা বর্জন (Class Boycott)
  • গণ-ধর্ণা ও কর্মবিরতি
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিক বন্ধ রাখা
  • গোটা রাজ্যে সমবেত অবস্থান কর্মসূচি

এ ধরণের কৌশল আগেও শিক্ষাখাতের আন্দোলনে দেখা গেছে, তবে এবার বৃহত্তর অংশের শিক্ষক-টিউটরই অংশগ্রহণ করছে। ক্লাস বন্ধ থাকলে শুধু ছাত্ররাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, বরং সমাজে শিক্ষকের ন্যায্য মর্যাদার বিষয়টি নতুন গুরুত্ব পাবে।

শিক্ষক দিবসে রাস্তায় কেন? সামাজিক সচেতনতা ও আন্দোলনের কৌশল

টিউটররা ঠিক শিক্ষক দিবসকেই প্রতিবাদের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কারণ, এই দিনে বিপুল সম্মান ও ভালোবাসা দেখানো হয় শিক্ষকদের, অথচ একই দিনে সমাজটা দেখতে পায়—

  • কারা ‘আসল’ শিক্ষক স্বীকৃতি পান না
  • কারা এখনও সরকারি যত্ন ও ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত
  • সমাজ ও সরকারের নজরে তাঁদের জীবন সংগ্রামের প্রকৃত চিত্র কেমন

সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে তাঁদের প্রধান স্ট্র্যাটেজি:

  1. জনমত গঠন: টিউটররা ব্যানার, সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক-টুইটারে সরাসরি ছাত্র-অভিভাবক ও সাধারণ জনগণকে যুক্ত করছেন।
  2. শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ: অনেক স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীরাও স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিচ্ছে, কারণ ‘শিক্ষকবিহীন শিক্ষা’ কেমন হতে পারে, তা চিন্তায় ভয় ঢুকেছে।
  3. গণস্বাক্ষর অভিযান: বিভিন্ন স্থানে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ হচ্ছে, যাতে সামাজিক চাপ পড়ে সরকারে।
  4. গণমাধ্যম মুখোমুখি: সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলে তাঁরা Bewegon দিচ্ছেন—‘আমরা শিক্ষা দেবো না, যতক্ষণ না শিক্ষক-স্বীকৃতি পাই’।

এর সুবাদে আপনি বা আমি—যেই হই না কেন—শিক্ষকের মর্যাদার প্রশ্নে সামাজিকভাবে আরও সংবেদনশীল হচ্ছি। এই আন্দোলনে কেবল দাবি নয়, নিজের আর্থিক নিরাপত্তা ও আত্ম-মর্যাদার জন্য জনমন বদলে দেওয়ার লক্ষ্য চোখে পড়ে।

ছাত্র-অভিভাবক, শিক্ষক ও সাংবাদিক একসাথে মাঠে; একাত্মতার বার্তা, গণস্বাক্ষর অভিযানে অংশগ্রহণ—(Image created with AI)

টিউটরদের কথায়, তাঁরা আর নীরব থাকবেন না; আগামী দিনের জন্য বড় কিছু করতে প্রস্তুত। শিক্ষাবিদ ও সচেতন নাগরিকদের মতে, এই আন্দোলন শুধু চাকরি নয়, শিক্ষা ও মর্যাদার সামাজিক প্রতিচ্ছবি গড়ার চেষ্টা। যত দূর সরকার নিরব, তত দূর তাঁদের আন্দোলন জোরালো হচ্ছে, সংগঠিত হচ্ছে, গড়ে উঠছে ভবিষ্যতের নতুন ধারাটি।

টিউটরদের আন্দোলন তথ্য ও দাবিনামা বিস্তারিত পড়ুন এই প্রতিবেদনে

উপসংহার

লতাসিল মাঠের আন্দোলন সময়োপযোগী এক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে—শিক্ষক ও টিউটরের ন্যায্যতা সমাজের ভিত্তি। তাঁদের সাহস ও সংকল্পের পেছনে শুধু ব্যক্তিগত চাওয়া নয়, বরং শিক্ষার মান রক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্থিরতাও জড়িয়ে আছে। সরকারি প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক, কারণ অবহেলিত শিক্ষক সমাজের হাতে দেশ গড়ার কাজ চলে। শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত করা মানে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজকে শক্ত ভিত দেওয়া।

এই আন্দোলন শুধু আর্থিক নিপীড়নের প্রতিবাদ নয়, বরং আমরা সবাই যেন বুঝি—শিক্ষক ভালো থাকলেই ছাত্র, পরিবার ও পুরো সমাজ ভালো থাকবে। জাতি গঠনের ভিত কোথায়, তা নিয়ে আরেকবার ভাবার সময় এসেছে। লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ, অাশা করি আপনি নিজের অবস্থান থেকে এ বিষয়ে কথা বলবেন ও পরিবর্তনে অংশ নেবেন।

Click here