২০২৫: ডার্ক ওয়েব মাদক পাচার রোধে ED এর বড় সাফল্য, FATF এর প্রশংসা ও ৮৫ কোটি টাকার জব্দ

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

Enforcement Directorate ও FATF-এর প্রশংসা, ডার্ক ওয়েব মাদক পাচার রোধে ২০২৪-এর সফল অভিযান (৮৫ কোটি টাকার জব্দসহ)

Enforcement Directorate (ED) এবং Financial Action Task Force (FATF) একসাথে ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক ডার্ক ওয়েব ভিত্তিক মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়েছে। এই সফলতায় ED-এর কঠোর অনুসন্ধান এবং অভিযান দ্বারা কোটি কোটি টাকার মাদক ও অবৈধ সম্পদ জব্দ হয়েছে। FATF তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে ভারতের এই কার্যক্রমের প্রশংসা করেছে এবং দেশের মানি লন্ডারিং ও টেরর ফাইন্যান্সিং বিরোধী প্রচেষ্টার উচ্চমানের সাফল্য স্বীকার করেছে।

২০২৪ সালে ED-এর নেতৃত্বে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে পরিচালিত মাদক চক্রের সঙ্গে লড়াই নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই সাফল্যের মাধ্যমে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও আন্তর্জাতি সহযোগিতায় শক্তিশালী হচ্ছে, যা মাদক পাচার ও অবৈধ অর্থ লেনদেন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই প্রচেষ্টার ফলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

ভিডিও লিংকঃ Hunting A $300,000,000 Dark Web Drug Dealer

ডার্ক ওয়েব ও মাদক পাচার: আন্তর্জাতিক সমস্যা

ডার্ক ওয়েব মাদক পাচারের ক্ষেত্রে একটি জটিল এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সাধারণ ওয়েব ব্রাউজারে দেখা যায় না এমন অন্ধকার নেটওয়ার্কগুলোর মাধ্যমে অবৈধ ও গোপন লেনদেন হয়, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এই মাধ্যম ব্যবহার করে পরিচয় লুকিয়ে রাখে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির সহায়তায় লেনদেন করার সহজ পথ পায়, যা দ্রুত এবং অজানা থাকে। বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে এই অপরাধ মোকাবিলা করতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা জরুরি হয়ে উঠেছে।

ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস এবং তাদের কার্যক্রম: Silk Road, AlphaBay, Hansa ইত্যাদি বাজারের নাম এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা। কীভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং বিটকয়েনের মাধ্যমে লেনদেন ছড়ানো হয়

ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস গুলো আসলে সেই প্ল্যাটফর্ম যেখানে মাদক ও অন্যান্য অবৈধ পণ্য বিক্রি হয়। Silk Road ছিল এর আগের যাত্রায় প্রখ্যাত একটি সাইট, যা প্রথমবারের মত অনলাইনে মাদক পাচারের ব্যবস্থা সহজ করেছিল। AlphaBay ও Hansa মার্কেটপ্লেস এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী বড় নাম, যা দশকের মধ্যে কয়েক কোটি ডলারের লেনদেন করতো। এই সব মার্কেটপ্লেস “Tor” নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত, যা ব্যবহারকারীদের পরিচয় গোপন রাখে।

লেনদেনের জন্য মূল ভিত্তি ছিল ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিশেষ করে বিটকয়েন। বিটকয়েন ব্লকচেইনের মাধ্যমে লেনদেন হতো যেটা অনেকটাই ট্রেস করা কঠিন হলেও পুরোপুরি অসম্ভব নয়। মাদক ব্যবসায়ীরা লেনদেন গুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন ওয়ালেট ব্যবহার করতো, যা তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন করে তুলতো। এসব লেনদেনের ফলে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হতো।

বাজারগুলোতে মাদক ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ এড়ানোর জন্য এনক্রিপ্টেড মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার হত। ডেলিভারি সুবিধাও অত্যন্ত সাজানো, যেখানে ঠিকানা বা কুরিয়ারের তথ্য গোপন রেখে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হতো।

এই মার্কেটপ্লেসগুলো বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশি অভিযান বহুবার হয়েছে; AlphaBay মার্কেটপ্লেস ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তর দ্বারা গ্রেফতার ও সীলাবদ্ধ হয়। এর ফলে ডার্ক ওয়েবের গোপন নেটওয়ার্কে কড়াকড়ি বেড়েছে, কিন্তু নতুন নতুন সাইট হাতেও কাজ করছে।

এদের কার্যক্রম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন Silk Road এর ইতিহাস ও কার্যাবলী এবং ২০২৪ সালের বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেটপ্লেস নিয়ে বিশদ আলোচনা এখানে

মাদক পাচারের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং তার বিস্তার: সিংহ ভাইয়ের পরিচালিত নেটওয়ার্কের বর্ণনা যা অধিকাংশ দেশের সাথে সংযুক্ত ছিল। বিভিন্ন ডেলিভারি নেটওয়ার্ক, ব্যবহার করা কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভুমিকা

মাদক পাচারের এই ডার্ক ওয়েব নেটওয়ার্কগুলো শুধু একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা; এগুলো আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তার লাভ করে। সিংহ ভাইয়ের মতো বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশের ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের সাথে সংযুক্ত থাকে, যেখানে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং ভারত অন্যতম মূল অঞ্চল।

এই নেটওয়ার্ক অনেক সময় ডেলিভারি চেইনগুলোকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ করে না; তারা বিকল্প ঠিকানা, থার্ড পার্টি সার্ভিস এবং ভিন্ন ব্যাক্তিদের ব্যবহার করে মালামাল পৌঁছে দেয়। এছাড়াও, মামলার আশঙ্কায় পণ্যকে ছোট ছোট মাপের ভাগে বিভক্ত করে বিভিন্ন রুট অনুসরণ করা হয়। এসব কারণে ট্রেস করা অনেক জটিল হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই ধরণের অপরাধ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনি টিম বিপুল তথ্য আদান-প্রদান করে এবং সম্মিলিত অভিযান পরিচালনা করে বড় বড় নেটওয়ার্কগুলো ভাঙ্গে। যেমন, ২০২৪ সালের Enforcement Directorate ও FATF এর যৌথ অভিযান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক স্তরে, Europol, FBI ও UNODC এই ধরনের অপরাধ রোধে কঠোর নজরদারি ও তদন্ত চালায়। এদের সহযোগিতায় অবৈধ অর্থ পাচার ও লেনদেনের ধারা কেটে দেয়া সম্ভব হয়।

একটি সহজ টেবিলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কার্যক্রম আর ডেলিভারি নেটওয়ার্কগুলোর কিছু মূল দিক তুলে ধরা হলো:

বিষয় বর্ণনা
নেটওয়ার্কের বিস্তার ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, এশিয়া সহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া
ডেলিভারি কৌশল বিকল্প ঠিকানা, থার্ড-পার্টি ডেলিভারি, ছোট ভাগে পণ্য পাঠানো
লেনদেনের মাধ্যম বিটকয়েন, মনিরো ও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি
আইন কার্যক্রম ও সহযোগিতা আন্তর্জাতিক তদন্ত, তথ্য আদান-প্রদান ও সম্মিলিত অভিযান

আরো জানতে পারেন Europol এর ডার্ক ওয়েব মার্কেট প্লেস রিসার্চ এবং US Department of Justice এর কেস স্টাডিজ

Map of International Dark Web Drug Trafficking Network
Global visualization of dark web drug trafficking routes and network, created with AI

Enforcement Directorate এর কার্যের বিশ্লেষণ

Enforcement Directorate (ED) ২০২৪ সালে ভারতের মাদক পাচার ও অর্থ পাচারে একটি বড় নেটওয়ার্ক ভেঙেছে। ডার্ক ওয়েব ভিত্তিক এই অপরাধ চক্রের সঙ্গে লড়াই করতে ED তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও তদন্ত কৌশল নিয়ে সবধরনের প্রতিরোধ কার্যক্রম চালিয়েছে। এই সেকশনে ED কীভাবে মাদক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে, তাদের কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করবো। এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ এবং বিটকয়েন জব্দের প্রক্রিয়াটিও তুলে ধরা হবে।

গ্রেফতার ও নেটওয়ার্কের ভাঙ্গন: বানমীত সিং, পরমিন্দর সিং সহ গ্রেফতারকৃতদের তথ্য ও তাদের রোল

২০২৪ সালের হালদ্বানী অভিযান মূলত বানমীত সিং ও পরমিন্দর সিং-এর নেতৃত্বে পরিচালিত ডার্ক ওয়েব ভিত্তিক মাদক পাচার নেটওয়ার্ককে লক্ষ্য করেছিল। এই দুই ব্যক্তি মাদক চক্রের মূল হাব হিসেবে কাজ করছিলেন। তারা অনলাইন অন্ধকার মার্কেটপ্লেসে মাদক ডিলারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন।

গ্রেফতারকৃতরা মূলত অনুসন্ধান ও সাইবার ট্রেসিং-এর মাধ্যমে শনাক্ত হয়। ED প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ডিভাইস ও অনলাইন লেনদেনের গোপন তথ্য বের করে নেটওয়ার্কের রূপরেখা তৈরি করেছে। বানমীত ও পরমিন্দর ছাড়াও আরও কয়েকজন সহযোগীকে আটক করা হয়েছে, যারা ক্রেতা ও ডেলিভারি ব্যবস্থায় যুক্ত ছিলো।

ডার্ক ওয়েবে তারা প্রায়শই এনক্রিপ্টেড মেসেজিং ব্যবহার করত, যা ED-এর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো। তবে ব্লকচেইন বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়। ফলে হালদ্বানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া হয়।

Man in handcuffs holds cash and small bag indoors, symbolizing crime and illegal activity
Photo by MART PRODUCTION

ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ পাচার ও বিটকয়েন জব্দ: ED কিভাবে ৮৫ কোটি টাকার ~৮৫০০ বিটকয়েন জব্দ করলো, এবং এর মূল্যমান বিশ্লেষণ

এটি ছিল ED এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যগুলোর মধ্যে একটি—ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্র্যাক করার মাধ্যমে ৮৫ কোটি টাকার প্রায় ৮৫০০ বিটকয়েন উদ্ধার। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ রপ্তানি ও লেনদেনের জন্য বিটকয়েন ছিল প্রধান মাধ্যম। ED ব্লকচেইন এনালিটিক্স এবং অন্যান্য ফরেনসিক টুল ব্যবহার করে এই লেনদেনের ধারা শাব্দিকভাবে বিশ্লেষণ করেছে।

মূলত, পাচারকারীরা লেনদেন ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে, বিভিন্ন ওয়ালেট ব্যবহার করত যাতে তাদের গতিবিধি বুঝে ওঠা কঠিন হয়। ED তাদের শনাক্ত করে সব লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। মূল্যমানের তারতম্য বাজারের ওঠানামার ওপর নির্ভর করলেও, প্রায় ৮৫০০ বিটকয়েন আজকের শর্তে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার সমান।

ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের কৌশলগুলো:

  • চেইন স্প্লিটিং: বহু ছোট লেনদেনে ভাগ করা।
  • মাল্টি-ওয়ালেট ব্যবহার: একাধিক ওয়ালেট দিয়ে অর্থ ছড়ানো।
  • ইথেরিয়াম এবং অন্যান্য কয়েন চক্রপাত: কখনও বিটকয়েনের পরিবর্তে কিছু লেনদেন অন্য কয়েনে।
  • ভূগোলিক মুভমেন্ট: বিভিন্ন দেশে ওয়ালেট চলাচল, আইনী বাধা এড়ানোর জন্য।

ED-এর এই অভিযান প্রমাণ করেছে, সঠিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকলে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ পাচারের ভয়ংকর কৌশলকেও ধরা সম্ভব। এই ধরণের সফল অভিযান দেশের নিরাপত্তা ও আইনী কার্যক্রমে নতুন শক্তি যোগ করেছে।

Bitcoin coins and digital wallet with blockchain background
Digital illustration showing Bitcoin coins and forensic blockchain investigation, Image created with AI

অধিকতর তথ্যের জন্য FBI এর ডার্কনেট ট্রাফিকিং অভিযানের বিবরণ এবং US Department of Justice এর অপরাধ দমন কার্যক্রম দেখতে পারেন।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাড়তি শক্তি: Online Mutual Assistance Portal

ক্রিকেটের মত বক্স অফিসেও টিমওয়ার্ক ছাড়া বড় কাজ হয় না, ঠিক তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যৌথ সহায়তা অপরিহার্য। প্রযুক্তির সাহায্যে এখন ইন্টারঅ্যাকশন বা তথ্য আদানপ্রদান অনেক দ্রুত ও নিরাপদ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, Online Mutual Assistance Portal একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, যা বিভিন্ন দেশের আইনি সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

পোর্টালের কার্যকারিতা ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়: কিভাবে এই পোর্টাল বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়েছে এবং মাদকপাচারের বিরুদ্ধে বড় অপারেশন পরিচালনা সম্ভব করেছে।

অনেক সময় মাদক পাচারের মতো আন্তঃদেশীয় অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করাটা তথ্যের গতি ও সঠিক যোগাযোগের অভাবে অদক্ষ হয়ে পড়ে। এ সমস্যা মেটাতে গৃহ মন্ত্রণালয় চালু করেছে BHARATPOL নামক একটি অনলাইন মিউচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স পোর্টাল, যা দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে একত্রিত করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

এই পোর্টালটি ব্যবহার করে:

  • রিয়েল-টাইম তথ্য আদানপ্রদান হয় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পুলিশের মধ্যে,
  • অপরাধীদের ট্র্যাকিং ও গ্রেফতারের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়,
  • এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবৈধ অর্থ ও মাদক পাচার ঠেকাতে সম্মিলিত অভিযান শুরু হয়,
  • আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো একে অপরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক হ্যাঁতছাড়ার চুক্তি অনুসারে সহযোগিতা করে,
  • তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত রেখে কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়।

পোর্টালটি শুধু মাদক পাচারের মাত্রাই কমায়নি; টেরর ফাইন্যান্সিং, মানব পাচার, সাইবার অপরাধের মতো ক্ষেত্রে আরও সফল সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা সহ বহু দেশ এখন এই পোর্টালের মাধ্যমে ভারতের আইন সংস্থার সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে থাকে; যা মাদক চক্রের খোঁজে অন্তরায় কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ, এটি একটি আইনি মাস্টারকী হয়ে উঠেছে যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ মোড়ক খুলতে সাহায্য করে।

এই পোর্টালের মাধ্যমে একাধিক দেশে একযোগে অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছে, যা একক দেশের ক্ষেত্রে কখনোই বেশী কার্যকর হত না। ED-এর সাম্প্রতিক ডার্ক ওয়েব ভিত্তিক মাদক পাচার নেটওয়ার্ক ভাঙ্গার পেছনে এই পোর্টালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

এই ধরনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ফলে এখন মাদক পাচারকারীরা পর পর বিমানে লুকাতে পারেনা, তাদের জন্য ডেটার এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভাগাভাগি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

BHARATPOL এর সুবিধাসমূহের সংক্ষিপ্ত তালিকা:

  • সহজ এবং দ্রুত আন্তর্জাতিক তথ্য চাওয়া ও পাওয়া,
  • অপরাধীদের প্রতি দেশের আইনি ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়,
  • ক্রস-বর্ডার অপরাধ মোকাবিলায় স্বয়ংক্রিয় আপডেট ও নোটিফিকেশন,
  • আন্তর্জাতিক পুলিশের সঙ্গে শক্তিশালী যোগাযোগ ও সমঝোতা,
  • সীমান্ত পেরিয়ে তথ্য ও অনুসন্ধান শেয়ার করার গতি বাড়ানো।

Government portal dashboard for international law enforcement showing real-time data exchange and cooperation
একটি আধুনিক সরকারি পোর্টাল ড্যাশবোর্ড, যা আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে রিয়েল-টাইম তথ্য আদানপ্রদান দেখাচ্ছে। ছবি AI দ্বারা তৈরি

এই পোর্টাল সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন ভারতীয় সরকার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর অফিসিয়াল সাইট থেকে। সেখানে BHARATPOL-এর কার্যক্রম এবং এর আন্তর্জাতিক সাফল্যের নানা দিক স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় এই ধরনের প্রযুক্তি অগ্রগতি দেশগুলোর সহযোগিতা ও আইনি কার্যকরীতা বাড়িয়েছে। ফলে, অপরাধীরা অভিযানের হাত থেকে সহজে পালাতে পারছে না। এমন একটি পোর্টাল আইনি জটিলতাকে সরিয়ে দিচ্ছে এবং খুঁজে পেতে সাহায্য করছে অপরাধের মূল উৎস।

আপনি যদি জানতে চান কিভাবে মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একসাথে কাজ করছে, তাহলে এই পোর্টালটিই সেই গতি পূর্ণ কেন্দ্র। এই সহযোগিতা বিদেশি পাচারচক্র ভাঙার ক্ষেত্রে তিনি ED-এর শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

FATF এর মূল্যায়ন এবং ভারতের অগ্রগতি

২০২৪ সালে FATF (Financial Action Task Force) ভারতের মানি লন্ডারিং এবং টেরর ফাইন্যান্সিং বিরোধী ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ব্যাপক মূল্যায়ন করেছে। এই মূল্যায়নে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সম্মতি নয়, পাশাপাশি কার্যকরী মাপকাঠিতেও ভারত সাফল্যের উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে। যেখানে Enforcement Directorate (ED) এর সাফল্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে মেলে ধরেছে, সেখানে ভারতের নীতি ও প্রয়োগে জোরালো অগ্রগতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চলুন বিস্তারিত দেখি ভারত কতটুকু FATF-এর মানদণ্ড পূরণ করেছে এবং ED কীভাবে তাদের অভিযান সফল করেছে।

ভারতের টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স ও প্রধান সূচকসমূহ

FATF-এর ২০২৪ সালের মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশনে ভারত ‘High level of technical compliance’ অর্জন করেছে। বিশেষ করে FATF-এর Big-Five সুপারিশের ক্ষেত্রে দেশের আইন ও নিয়মাবলী শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তিগত সমাধান স্থাপন করেছে। Big-Five সুপারিশ হলো:

  • Risk Assessment: ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন ও নির্ধারণ।
  • Criminalization of ML/TF: মানি লন্ডারিং ও টেরর ফাইন্যান্সিংকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি।
  • Financial Intelligence Units: আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্ষমতা।
  • International Cooperation: আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদান।
  • Targeted Financial Sanctions: টার্গেটেড আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কার্যকর প্রয়োগ।

ভারত বর্তমান মডেল এবং আইন প্রয়োগে এগুলোতে অনায়াসে উত্তীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ, AML/CFT (Anti-Money Laundering ও Counter Financing of Terrorism) কাঠামোতে ভারতের সূচকগুলো বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলোতেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে:

  • শক্ত ব্যাংকিং ও আর্থিক সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ই-লেনদেন নজরদারিতে কৌশলগত অগ্রগতি।
  • ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিয়ম-কানুনের জোরালো বাস্তবায়ন।

এই সমস্ত অগ্রগতির ফলে ভারত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। FATF-এর এই কৃতিত্বী মূল্যায়ন দেখতে পারেন এখানে

ED এর উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

Enforcement Directorate (ED) ২০২৪ সালে দেশের মাদক ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করেছে। বিশেষ করে, ডার্ক ওয়েব ভিত্তিক মাদক পাচার নেটওয়ার্ক ভাঙার ক্ষেত্রে ED-এর সফলতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। এই অভিযানে ED ৮৫ কোটি টাকার মতো মূল্যমানের অবৈধ সম্পদ জব্দ করেছে যা ক্রিপ্টোকারেন্সি সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এসেছে।

ED স্থানীয় হত্যামামলা এবং বড় মাদক পাচার চক্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। FATF-এর প্রতিবেদনে ED-এর এই অভিযানগুলোকে উচ্চ মাত্রার দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ ভাবে:

  • প্রায় কোটি কোটি টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি, অধিকাংশ বিটকয়েন জব্দ করা হয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদের সাথে সমন্বয়ে যৌথ অভিযান সফল হয়েছে।
  • সাইবার ট্রেসিং ও ব্লকচেইন বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই সফলতা ED কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে পরিচিত করেছে এবং ভারতের AML/CFT ব্যবস্থার উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। ED-এর কার্যক্রম সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত পড়তে পারেন এখানে

ভারতের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেমন ED, তাদের দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছে। FATF-এর এই মূল্যায়ন ভারতকে ভবিষ্যতেও আইনগত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে উৎসাহিত করবে।

Conclusion

ভারত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার মাদক পাচার রোধে কার্যকর হয়েছে। Enforcement Directorate (ED) ও Financial Action Task Force (FATF) এর প্রশংসিত অভিযান প্রমাণ করে, সুসংহত নিয়ন্ত্রণ ও শক্তিশালী সহযোগিতা অপরাধী নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্র্যাকিং এবং আন্তর্জাতিক তথ্য বিনিময়ের মতো সরঞ্জামগুলি অপরাধ রোধে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের সমন্বয় আরও সম্প্রসারিত হলে মাদকপাচার বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। এই কাজের পাশে থাকার ফলে আমরা একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।

Click here