আসামে ফ্লাড ২০২৫: মানুষের জীবন, টিকে থাকার গল্প আর বদলে যাওয়া আশা
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আসামে ফ্লাডকে ঘিরে মানুষের গল্প
অসমে বৃষ্টি মানেই উদ্বেগ, আর “বন্যা” শব্দটা আজও চোখে আনে আতঙ্কের ছবি। প্রতিটি বর্ষায় হাজার হাজার ঘর ভাসে, পরিবার অসহায় হয়, শিশুরা খেলাধুলা ছেড়ে কাঁদে, আর মায়েরা নতুন করে শক্তি খুঁজে ফেরেন। গত দশকজুড়ে বন্যার প্রবল ধাক্কা বদলে দিয়েছে মানুষের গল্প—শুধু সর্বস্ব হারায়নি, গড়ে তুলেছে বেঁচে থাকার নতুন পথও। আসামের ফ্লাড শুধু খবরের তথ্য নয়, এই গল্পগুলো আসলে হাড়জ্বালানো জীবনের ছবি।
ফ্লাডের ধাক্কা: বাড়ি, জীবন, স্বপ্নের ক্ষতি
বঙাইগাঁও, ধেমাজি, শোনিতপুর—নাম শুনলেই আসে নদীর কূল ভেঙে, মুহূর্তে পানি ঢুকে পড়ার দৃশ্য। গ্রামের পর গ্রাম মাঝে রাতেই পানিতে তলিয়ে যায়। বাড়িঘর, ধানক্ষেত, গোয়ালঘর—সব যেন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। বহু পরিবার নিজেদের হাতে বানানো ছেঁড়া বাঁশের নৌকায়; প্রাণ বাঁচাতে কখনও শিশু, কখনও গরু, কখনও টুকরো স্মৃতি গুছিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে।
প্রথম দু-তিন দিনেই খাবার সংকট শুরু হয়। পানির নিচে ডুবে যায় রান্নাঘর, জরুরি ওষুধ, বইপত্র। অনেকেই রাতভর গাছের ডালে কিংবা বাঁশের ঘরে কেঁদে কাটান। কিছু মানুষ ছোট হাটে ম্যাট্রেসের উপর রাত পার করেন, কেউ কেউ আবার পথে।
শিশুদের হারানো শৈশব
দেখা যায়, স্কুলঘর তো ডুবে যায়ই, নতুন ক্লাসের বইও ভিজে চৌচির। এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দুরন্ত খেলার বদলে নৌকার জল-সরবরাহে কিংবা ভাইবোনকে সামলাতে ব্যস্ত। মনের ভিতর বুনে যায় স্থায়ী আতঙ্ক, পড়াশোনা আর বন্ধু হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারে না। একসময় স্মরণের গল্পগুলো ভেসে যায় পানির স্রোতে।
নারীদের একা দাঁড়ানো
পুরুষেরা কাজের খোঁজে শহরে গেলে গ্রামে শুধু থেকে যায় নারী আর বাচ্চারা। নারীদের ভাগ্যে জোটে আরও বাড়তি দায়িত্ব—ঘর আগলানো, শিশুদের দেখা, খাবার সংগ্রহ। বাড়ি ভেসে গেলে মাথার উপর থেকেও বুঝে নিতে হয় নতুন জীবন। দিনে-রাতে জলের শব্দে ভয় আর চোখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
আশা ও লড়াই: ফ্লাডপীড়িত মানুষের গল্প
কে বলবে, হারিয়ে যাওয়াই শেষ কথা? আসামের মানুষ প্রতিটি ফ্লাডের পর নতুন কৌশলে বাঁচতে শিখে। বাঁশের কাঠামো দিয়ে অস্থায়ী ঘর তুলে, নিজ হাতে ছোট্ট ব্যবসা শুরু করে কিংবা গরু, মুরগি নিয়ে পাহাড়ি উঁচু পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ছোট নৌকাই যেন তখন টিকিয়ে রাখে প্রত্যাশার বাতিঘর।
পাড়ার সবাই মিলে সপ্তাহের সে এক বা দুইটাই প্রধান খাবার ভাগাভাগি করে খান। প্রতিবেশী ভাই, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক—তাঁদের অক্লান্ত চেষ্টায় অনেক পরিবার দিনে দিনে মাথা তুলে দাঁড়ায়। সরকারি সাহায্য আসে, তবে তা সবার কাছে পৌঁছায় না সবসময়।
ঘুরে দাঁড়ানোর সাহসী চেষ্টারা
অনেকে কাঁচাঘর হারিয়েও নতুনভাবে বীজ রোপণ করেন। কেউ ছোট দোকান দেন, কেউ হাতে কাজ শেখেন। তরুণ প্রজন্ম স্কুলড্রপআউট হলেও কমিউনিটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এগিয়ে আসে। মেয়েরাও আজ আত্মবিশ্বাসী, তাঁরা খামারে গরু পালেন, হেঁসেলে নতুন দিনের স্বপ্ন আঁকেন।
এইসব গল্প থেকে আমাদের শেখার কিছু কথা
বন্যার মত বর্ষার বিপর্যয় অসংখ্য পরিবারকে শেখায়—আশা কখনো মুছে যায় না। এই গল্পগুলো শুধু কান্না নয়, এগুলো আসলে প্রতিবাদ আর সহ্য করার বাস্তব নমুনা। পরিবেশকেন্দ্রিক সচেতনতা বাড়ছে, জলবায়ু লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের ভূমিকা দিনের পর দিন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে।
সরকারি ব্যবস্থার গাফিলতি আজও আছে, অনেক পরিবারের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ মেলে দেরিতে। পর্যাপ্ত ত্রাণ, সঠিক নিরাপত্তা, পরিবার-পিছু দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন দরকার। সবাই চাইলেই ছোট্ট কোনো পরিবর্তন আনতে পারে; স্থানীয় সহায়তা আরও জোরদার হলে, ক্ষতির আওতা কিছুটা কমানো যায়।
উপসংহার
বন্যায় কাঁদে, তবুও হাসে আসামের মানুষ। জীবন থেমে থাকে না—ছোট গল্পে সুপ্ত থাকে বড় স্বপ্নের বীজ। নতুন করে সব গড়ার যে আশ্চর্য ক্ষমতা এই মানুষগুলোর আছে, তাই তো তাঁরা কখনও পথ হারান না। আসামের ফ্লাড আপনাকে বাস্তবতা শেখাক, দায়িত্ববান হবেন, মানবিক থাকুন—মানুষের গল্পেই আছে আগামীর শক্তি।
