বিজেপি এআই ভিডিও বিতর্ক ২০২৫: অসমে রাজনৈতিক বিভাজন ও নির্বাচনী ঝুঁকি বিশ্লেষণ
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!বিজেপি’র এআই ভিডিও ঘিরে অসমে রাজনৈতিক বিতর্ক (২০২৫): কংগ্রেস ও স্থানীয়দের ক্ষোভ, নির্বাচনের আগে প্রযুক্তি কতটা বিপজ্জনক?
অসমে বিজেপি’র তথাকথিত এআই ভিডিও ঘিরে অনলাইনে বেড়েই চলেছে বিতর্ক, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়টিতে। এই ভিডিওটি দাবি করেছে, বিজেপি না থাকলে অসম হয়ে উঠবে ‘মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ’ রাজ্য, আর অবৈধ অভিবাসন রাজ্যের পরিচয় ও রাজনৈতিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। কংগ্রেস ও বিভিন্ন সংখ্যালঘু নেতারা এই ভিডিওটিকে স্পষ্টভাবে বিদ্বেষপূর্ণ ও গুজব ছড়ানোর উদ্যোগ বলে নিন্দা করেছেন। নির্বাচনের আগে এই ভিডিও রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে, সঙ্গে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে কিনা।
এই লেখায় খুব সংক্ষেপে তুলে ধরা হবে, ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, ভিডিও কেমন বিভাজন তৈরি করছে, ও বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান কোথায়। পাঠকরা জানতে পারবেন, শুধু অসম না, সারা ভারতে এআই কি করে রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠছে, এবং এর বিপদ কী।
বিতর্কিত এআই ভিডিও: কী রয়েছে এবং বিপর্যয় কিভাবে শুরু হলো
অসমে বিজেপি’র এই এআই ভিডিও প্রকাশের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেন হঠাৎ বৈদ্যুতিক ঝড়ের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি শুধু অনলাইনে নয়, নির্বাচনমুখী রাজনীতির ম্যাপেও বড় পরিবর্তন এনেছে। বিজেপি এই ভিডিওতে যে বার্তা দিয়েছে, সেটি বিভক্তি আর আতঙ্ক তৈরির জন্য যথেষ্ট ছিল। এবার দেখি ভিডিওতে কী ছিল, মুসলিমদের কিভাবে দেখানো হয়েছে, এবং একেএকে কীভাবে বিতর্ক তৈরি হলো।
‘অসম উইথআউট বিজেপি’ ভিডিও: কী দেখিয়েছে?
এই এআই-নির্ভর ভিডিওটির শিরোনাম ছিল ‘Assam without BJP’। মাত্র ৩১ সেকেন্ডের এই ক্লিপে অসমের ভবিষ্যৎ নিয়ে চমকপ্রদ ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
- ভিডিওতে দেখা যায়, অসমে যদি বিজেপি না থাকে, তবে রাজ্য হয়ে যাবে ‘মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ’।
- পর্দায় ভেসে ওঠে নানা দৃশ্য—পুরুষদের টুপি, মহিলাদের বোরখা, মসজিদের মিনার—সব কিছুই ইঙ্গিত দেয় মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার দিকে।
- ভিডিওতে ঘুরেফিরে এসেছে ‘৯০% মুসলিম’ লিখিত বার্তা, আর শেষে ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘ভোট দিন সাবধানে’। এখানেই বিরোধীদের মূল আপত্তি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: ভিডিওতে কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে পাকিস্তানের পতাকাও দেখানো হয়। এতে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ছাপ পাওয়া যায়, যা বিরোধী দলগুলোর ক্ষোভের মূল কারণ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের উপস্থাপনা কেমন ছিল?
এই ভিডিওতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের চেহারা ও পোশাককে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
- পুরুষদের টুপি, মহিলাদের মাথাবর্তা বোরখা, শিশুদের মাদ্রাসার পোশাকে তুলে ধরা হয়।
- মাত্র ৩১ সেকেন্ডের মধ্যেই, এমন ভিজ্যুয়াল আর টেক্সট ব্যবহার হয়েছে, যা দেখে সহজেই বিভেদ বা ভয় তৈরি হওয়ার কথা।
- মুসলিমরা যেন অন্য সব সম্প্রদায় থেকে আলাদা, অসমে তাদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখানো হয়।
এই কৌশল রাজনৈতিক প্রচারে নতুন নয়, তবে এআই-র মাধ্যমে এত সচেতনভাবে ভয় দেখানো নজিরবিহীন।
মোদ্দা বার্তা: ‘৯০% মুসলিম’ ও ‘ভোট দিন সাবধানে’
ভিডিওটির প্রকৃত লক্ষ্য ছিল সাধারণ ভোটারদের মনে ভয় তৈরি করা। দুইটি মূল নির্দেশনা দেওয়া হয়—
- ‘৯০% মুসলিম’—এটা সরাসরি বলা হয়, যেন অসম বিজেপি ছাড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে।
- ‘ভোট দিন সাবধানে’—নির্বাচনের ঠিক আগে এমন বার্তা, ভোটারদের আতঙ্কিত করে তোলে।
এই সাবধানবাণী স্পষ্টতই সব ভোটারকে উদ্দেশ্য করে বলা, যেন তারা বিজেপি না ছাড়ে এবং নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে ভোট দেয়।
বিতর্কের শুরু: স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া
ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে অসম এবং জাতীয় মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো দ্রুত সোচ্চার হয় এবং অভিযুক্ত করে বিজেপিকে, ‘বিদ্বেষ ছড়ানো’ ও ‘ভয় দেখানো’র অভিযোগে।
- কংগ্রেসের তরফে গৌরব গগৈ এবং অন্যরা নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে অভিযোগ জানিয়ে পুলিশ মামলা করার উদ্যোগ নেয়, বিস্তারিত এখানে।
- বিভিন্ন মহল থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা ছড়াতে থাকে, অন্যদিকে বিজেপি দাবি করে তাদের ভিডিও আসলে অবৈধ অভিবাসী সমস্যার ওপর আলোকপাত করছে।
- AIMIM নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েসিও অসম বিজেপির সমালোচনা করেন, বলেন এমন উদ্যোগ ‘ভয় দেখানো’ ছাড়া কিছু নয়, সংবাদে পড়ুন।
- ভিডিও প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মাথায় ইউটিউব-ফেসবুকে শত শত কমেন্ট, পোস্ট দেখা যায়; অনেকে একে ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এই বিতর্ক দেখিয়েছে, এআই-র ভুল বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহারে রাজনীতিতেই শুধু নয়, সমাজেও বিভাজন আরও গভীর হতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: কংগ্রেস, AIMIM ও বিজেপির বক্তব্য
অসমে বিজেপি’র বিতর্কিত এআই ভিডিও প্রকাশের পর রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দলগুলো পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রেখেছে। কেউ ভয় ও বিভেদ ছড়ানোর অভিযোগ করেছে, আবার কেউ বলেছে তারা কেবল অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যার কথাই তুলেছে। চলুন দেখি, কোন দল কী বলেছে এবং তাদের ভাষ্যে কী যুক্তি উঠে এসেছে।
সমাজ ও স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া: অসমের ঐতিহ্যবাহী ব্যক্তিত্ব ও সংস্কৃতির স্বাভাবিক সহাবস্থানকে সামনে রেখে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ যেভাবে বিজেপি’র ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় কথা বলেছেন
বিজেপির ভিডিও ঘিরে অসমের অনেক নামি সমাজকর্মী ও বর্ষীয়ান সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই বিরোধিতা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, অসম বহুত্ববাদ আর সহাবস্থানের জায়গা, যেখানে সংস্কৃতি একসঙ্গে গড়ে উঠেছে নানা সম্প্রদায়ের মিলনে। ভিডিওতে একপেশেভাবে মুসলিমদের চিত্রায়ন শুধু বিভাজন বাড়াবে বলেই তারা মনে করেন।
- খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও অভিনেতা দেবব্রত শর্মা বলেন, ‘‘অসমের বৈচিত্র্য বিপন্ন হত—এটা বলা রাজনৈতিক প্রচারণার মাধ্যম মাত্র।’’ তিনি জানান, ‘‘অসমে সবাই মিলেমিশে থাকে, এখানে ভয় দেখিয়ে ভোট চাওয়া অসমীয়ার সংস্কৃতিতে কখনোই ছিল না।’’
- স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক কনিকা বড়ুয়া মত দিয়েছেন, ভিডিওটি শুধুই রাজনৈতিক নয়, সামাজিকভাবে বিপজ্জনক—এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘‘কালচারাল সহাবস্থানকে যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আঘাত করা হয়, তাতে গোটা সমাজেই অনাস্থা ছড়ায়।’’
বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও তরুণ সমাজকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে স্পষ্ট লেখেন, এই ধরনের প্রচারণা অসমের ঐতিহ্যবাহী সমন্বয়বাদের বিরুদ্ধে। তারা উল্লেখ করেন, ‘‘অসম জ্বলুক না, বরং সব সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে হাসুক—এই ছিল আমাদের স্বপ্ন।’’
সমাজের প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ
নিচের টেবিলে সংক্ষেপে দেখতে পারেন, কোন ধরণের নেতৃত্ব কীভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন—
| নেতৃত্ব | বক্তব্য/বার্তা | সামাজিক সংকেত |
|---|---|---|
| সাহিত্যিক | ‘‘ভয় দেখানো অসমীয়ার আদর্শ নয়’’ | মেলবন্ধনের আহ্বান |
| সাংবাদিক | ‘‘সুস্থ সমালোচনা দরকার, নয় বিভেদ’’ | ঐক্যের আবেদন |
| সমাজকর্মী | ‘‘বিভাজন নয়, সংহতি বাঁচুক’’ | গণসংহতির স্বপ্ন |
বিভিন্ন স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ছাত্র ইউনিয়নও ভিডিও বিপরীতে সোচ্চার। অনেকেই বলছেন, ‘‘রাজনীতির নামে অসমকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করা চলবে না।’’
এইসব প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করে যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতারাই নয়, সমাজের মূলস্রোতও বিশ্বাস করে, প্রচারণার কৌশল যত মরিয়া হোক, অসমের ঐতিহ্যিক সহাবস্থানকে ভাঙা যাবে না।
- আরও বিশদ প্রতিবেদন ও নির্বাচনী সংঘাতের বিশ্লেষণ জানতে পড়ুন The Indian Express-এর রিপোর্ট।
- আসাদুদ্দিন ওয়াইসির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন The Hindu’র প্রতিবেদনে।
এইভাবেই স্থানীয় এবং পেশাদার নেতৃত্বের বক্তব্য সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—এসব ভিডিও হয়ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো, কিন্তু আসল অসমীয়ার মন সে বিভ্রান্ত করতে পারেনি।
নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এআই ও রাজনীতির ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ
বর্তমান নির্বাচনী রাজনীতিতে কেবল ব্যক্তিদের মুখে-মুখে গুজব ছড়ানো হচ্ছে না, একেবারে ভিজ্যুয়াল এআই-নির্ভর ভিডিও, ফটো, অডিওর মাধ্যমেও ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর বার্তা সহজেই জনতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ইত্যাদিতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির এই অপব্যবহার ভোটারদের মনে বিভ্রান্তি, আতঙ্ক ও সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করছে। ভারতে সম্প্রতি নির্বাচনের আগে কিভাবে এআই রাজনীতির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তার নানা দিক তুলে ধরা জরুরি।
ভোটের আগে কিভাবে এআই ও সোশ্যাল মিডিয়া রাজনীতির হাতিয়ার
২০২৪ সালের ভারতীয় সাধারণ নির্বাচনে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে এআই-নির্ভর কন্টেন্ট তৈরিতে। বড় দলগুলো ছাড়াও ছোট দলগুলোর পক্ষ থেকেও নিজেদের নেতাদের কণ্ঠস্বর নকল করার মতো টুল ব্যবহৃত হয়েছে।
- রাজনীতিবিদদের মুখ বা বক্তব্য এআই দিয়ে তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
- অকল্পনীয় অডিও-ভিডিও ক্লিপে কখনো বিরোধী নেতাকে অন্যভাবেই তুলে ধরা, কখনো কোনো ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয়েছে।
- কৌশল হিসেবে এসব ক্লিপ ভোটারদের মনোভাব পরিবর্তন বা বিভাজন আরও গভীর করতে বহুবার ব্যবহার হয়েছে।
ভারতে ৪৬ কোটি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকে (বিশেষ করে প্রথমবারের ভোটার) সহজেই এইসব ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্টে প্রভাবিত হন। এই প্রভাব শহর ও গ্রামের মধ্যে ভিন্ন। শহরে ডিজিটাল শিক্ষার হার প্রায় ৬১ শতাংশ হলেও, গ্রামে তা মাত্র ২৫ শতাংশ, বিস্তারিত পড়ুন। ফলে গ্রামীণ ভোটাররা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
সমাজে বিভাজন ও উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা
এআই-নির্ভর রাজনৈতিক কনটেন্ট সহজেই সমাজে বিভাজন তৈরি করতে পারে—বিশেষ করে ধর্ম, জাতি, এবং অঞ্চলভিত্তিক স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সামনে এলে। বিভাজিত ও উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়বস্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়।
- ধর্মীয় পরিচয়কে ঘিরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বার্তা ছড়িয়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ানো হতে পারে।
- একজন সাধারণ ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন না, ভিডিও বা অডিওটি সত্যি নাকি নকল।
- এই বিভ্রান্তি সমাজে যেমন সহানুভূতি কমায়, তেমনি রাজনৈতিক উন্মাদনাও বাড়ায়।
AI-এর মাধ্যমে তথ্যকে ইচ্ছেমতো পাল্টানো এখন অত্যন্ত সহজ—রাজনীতিতে এটি ‘প্রভাব ও বিভেদ সৃষ্টির নতুন অস্ত্র’ হয়ে উঠছে।
নির্বাচন কমিশন: দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা
নির্বাচন কমিশন (ECI) এখন কেবল লোকজন বা রাজনৈতিক দলের প্রশাসনিক কুশলতা দেখছে না, বরং প্রযুক্তিকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে সেই চ্যালেঞ্জেও পড়েছে।
- ECI সম্প্রতি ‘Myth vs. Reality’ ও ‘VerifyBeforeYouAmplify’ ক্যাম্পেইন চালু করেছে, যেখানে ভোটারদের সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য যাচাই করতে বলা হয়।
- কমিশন এআই-নির্ভর কনটেন্টের সোর্স ও সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে, এআই-নির্ভর সব প্রচারণায় স্পষ্ট লেবেল থাকতে হবে, অফিসিয়াল নীতিমালা দেখুন।
- তা সত্ত্বেও, দ্রুতগতিতে ছড়ানো ভুয়া কিংবা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট আটকানো বা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যেকেউ বাড়িতে বসেই এখন এআই-অ্যাপ দিয়ে সহজে ভিডিও-অডিও বানিয়ে পোস্ট করতে পারে।
একনজরে কমিশনের উদ্যোগ ও সীমাবদ্ধতা:
| বিষয় | কমিশনের উদ্যোগ | সীমাবদ্ধতা |
|---|---|---|
| তথ্য যাচাই | গণসচেতনতা, ক্যাম্পেইন | প্রযুক্তি অনুসরণে ধীরগতি |
| প্রচারণার নিয়ম | লেবেলিং বাধ্যতামূলক | সকল সোর্স ট্র্যাক করা কঠিন |
| ফেক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ | ফ্যাক্ট চেক সংস্থা | দ্রুত ছড়ানো ঠেকানো যায় না |
ভবিষ্যতের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ
এআই-র কল্যাণে রাজনৈতিক প্রচার আরও সৃজনশীল, কিন্তু একই সঙ্গে প্রতারণা ও দুরভিসন্ধিমূলক কনটেন্ট ছড়ানোর সুযোগও লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে। ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন:
- মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সত্য তথ্যের মধ্যে সমন্বয় করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
- প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, আইন ও সচেতনতা অনেক সময়ই পিছিয়ে পড়ছে, গভীর বিশ্লেষণ পড়ুন।
এই কারণে রাজনৈতিক দল, প্রযুক্তি সংস্থা, এবং সাধারণ ভোটার—সবাইকে নিজের দায়িত্ব বুঝে প্রযুক্তির ব্যবহার জেনে-বুঝে চলতে হবে। না হলে, সামান্য এআই ভিডিও-ই সমাজের শান্তি নষ্ট করতে পারে।
উপসংহার
অসমের এই বিতর্কিত এআই ভিডিও দেখাল, নির্বাচনের মৌসুমে প্রযুক্তি শুধু সুবিধার নয়, বড় ধরনের দায়বদ্ধতাও তৈরি করে। এমন কনটেন্ট রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কঠিন চাপে ফেলে, আবার সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভয় আর ভুল বোঝাবুঝি বাড়ায়। এটা শুধু অসমের সমস্যা নয়, গোটা ভারতেই রাজনীতিতে বিভেদ তৈরি করতে প্রযুক্তির অপব্যবহার কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, তারই বড় প্রমাণ।
নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে এআই, সমাজ ও রাজনীতিতে আস্থা, সহনশীলতা আর তথ্যের গুরুত্বকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। রাজনৈতিক দল, প্রযুক্তি সংস্থা ও সাধারণ ভোটার সবাইকে একসঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে—না হলে ভবিষ্যতে এমন কনটেন্ট আরও বেশি ভুল এবং ক্ষতিকর বার্তা বিতরণ করবে।
পাঠকদের ধন্যবাদ জানাই সময় দেওয়ার জন্য। নির্বাচনী প্রচারে এআই ব্যবহারের বিষয়টি আপনাদের কী মনে হয়, মন্তব্যে জানান। সচেতন আলোচনা দিয়েই প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিক পথে রাখা যায়।
