আসামের প্রধান ভাষাসমূহ: ব্যবহার, সংখ্যা ও আধুনিক চ্যালেঞ্জের সহজ গাইড
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আসামের প্রধান ভাষাসমূহ ও তাদের ব্যবহার (সংখ্যা, প্রচলন ও আধুনিক চ্যালেঞ্জ)
আসাম ভাষার বিশ্বে সত্যিই আলাদা। এখানে বাঙালি, অসমীয়া, বোড়ো, মিসিং, কার্বি সহ নানান জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ যুগ যুগ ধরে বাস করছে। এই বৈচিত্র্যের কারণে আসামের ভাষা, সংস্কৃতি আর সমাজ জীবন বেশ রঙিন ও সমৃদ্ধ।
আসামের ভাষাগুলো শুধু কথোপকথনের মাধ্যম না, এগুলো মানুষকে একত্র করে, বন্ধনের পথ খুলে দেয়। স্থানীয় ভাষা জানা থাকলে এলাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জীবনধারা বোঝা অনেক সহজ হয়। তাই আসামের ভাষাসমূহ জানা মানে, এই মাটিকে ভালোবেসে এখানকার সমাজের গভীরতায় প্রবেশ করা।
YouTube ভিডিও: আসামে ভাষা আন্দোলন! language movement in assam
আসামের প্রধান ভাষাসমূহ: সংখ্যা ও বিস্তার
আসাম শুধু পাহাড়-নদীর দেশ না, ভাষারও এক অবিশ্বাস্য মেলবন্ধন। অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো ছাড়াও বহু আদিবাসী ভাষা বাস করছে এখানে। প্রতিটি ভাষার আছে তার নিজস্ব বাসিন্দা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর ইতিহাস। সংখ্যা ও বিস্তারের ভিত্তিতে আসামের ভাষাসমূহ নিয়ে নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
অসমীয়া: সংখ্যার দিক থেকে প্রথম
অসমীয়া ভাষা আসামের প্রাণ।
- ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, অসমীয়া ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৫০ লক্ষ, আসামের মোট জনসংখ্যার ৪৮% (প্রায় অর্ধেক)।
- ২০২৪ সাল নাগাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে এটা ১৬-১৮ মিলিয়ন-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অনুমান (সরকারি তথ্যের অভাব থাকলেও প্রবণতায় তা বোঝা যায়)।
- অসমীয়া ভাষা রাজ্যের সরকারি ভাষা এবং শিক্ষা, প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রেই সর্বাধিক ব্যবহৃত আসামের সরকারি ভাষা ও পরিসংখ্যান
- প্রধানত অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও শহর-গ্রাম সবখানেই এই ভাষা প্রচলিত।
বাংলা: দ্বিতীয় বৃহত্তম, বারাক উপত্যকার প্রধান ভাষা
বারাক উপত্যকা মানেই বাংলা ভাষার আধিপত্য।
- আসামের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২% বাংলা ভাষায় কথা বলে (২০১১ সালের হিসাব)। অনেক সূচকে ২৮-২৯% পর্যন্তও উল্লেখ আছে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা তথ্যসূত্র
- ব্লক বা শহরভেদে সংখ্যাটাও বাড়ে-কমে।
- বাংলা ভাষা বরাক উপত্যকার তিন জেলায়—কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি—সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।
- এখানকার সরকারি ও আদালতিভাষা হিসেবেও বাংলা গৃহীত।
বোড়ো: তৃতীয় প্রধান ভাষা, আদি জনগোষ্ঠীর ভাষা
বোড়ো Assam-এর অন্যতম বড় আদিবাসী ভাষা।
- প্রায় ২.২ মিলিয়ন মানুষ বোড়ো ভাষায় কথা বলে।
- প্রধানত বোড়োল্যান্ড (Bodoland Territorial Region) ও উত্তর অসমে বেশি প্রচলিত।
- বোড়ো ভাষাকে রাজ্যের আনুষঙ্গিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বোড়ো ভাষার সরকারি স্বীকৃতি ও বিস্তারিত
- বোড়ো ভাষা ও সংস্কৃতির আলাদা জাতীয়তাবাদী পরিচয় রয়েছে।
করবি, দিমাসা, মিসিং, রাভা ও তাই-আহম: আদিবাসী ভাষার সমারোহ
আসামের বৈচিত্র্য আরও স্পষ্ট হয় এখানে—
- করবি: প্রায় ৫ লক্ষ বক্তা, করবি আংলং অঞ্চল ও নলবাড়ি, কামরূপ অঞ্চলে প্রচলিত করবি ভাষার বিস্তার
- দিমাসা: প্রায় ১.১ লক্ষ বক্তা, Dima Hasao, Cachar সহ মধ্য ও দক্ষিণ অসম অঞ্চলে দেখা যায় দিমাসা ভাষার বিশদ তথ্য
- মিসিং: ৬.২৯ লক্ষের মতো বক্তা, প্রধানত ধেমাজি, লখিমপুর জেলায় বেশি প্রচলিত মিসিং ভাষার বিস্তার
- রাভা: প্রায় ১.৪ লক্ষ বক্তা, Goalpara সহ পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অসমে বেশি প্রচলিত রাভা ভাষা
- তাই-আহম: বর্তমানে অবলুপ্তপ্রায়, ব্যবহৃত মূলত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে; এখন পুনর্জাগরণের চেষ্টা চলছে তাই-আহম ভাষার অবস্থা
সংক্ষিপ্ত টেবিল: আসামের প্রধান ভাষাসমূহ
| ভাষা | বক্তার সংখ্যা (প্রায়) | প্রধান এলাকা | সরকারি স্বীকৃতি |
|---|---|---|---|
| অসমীয়া | ১৬-১৮ মিলিয়ন | সারা অসম | অফিসিয়াল ভাষা |
| বাংলা | ৭-৯ মিলিয়ন | বারাক উপত্যকা | বরাক অঞ্চলে সরকারি |
| বোড়ো | ২.২ মিলিয়ন | বোড়োল্যান্ড, উত্তরের জেলা | আনুষঙ্গিক সরকারি ভাষা |
| করবি | ০.৫ মিলিয়ন | করবি আংলং, নলবাড়ি | না |
| দিমাসা | ০.১১ মিলিয়ন | ডিমা হাসাও, কাছাড় | না |
| মিসিং | ০.৬২৯ মিলিয়ন | ধেমাজি, লখিমপুর | না |
| রাভা | ০.১৪ মিলিয়ন | গোলপাড়া, পশ্চিম অঞ্চল | না |
| তাই-আহম | অবলুপ্তপ্রায় | ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক কেন্দ্রীক | না |
আসামের প্রধান ভাষার এই সংখ্যাগত বৈচিত্র্যই অ্যাসামের সমাজকে এক নতুন মাত্রা দেয়। ভাষার ভিত্তিতে এখানকার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্পন্দন স্পষ্টভাবেই ধরা পড়ে।
ভাষাসমূহের ব্যবহার: শিক্ষা, প্রশাসন ও দৈনন্দিন জীবন
আসামের ভাষাগত বৈচিত্র্য এখানকার সমাজের প্রতিদিনের জীবন, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় জাঁকিয়ে বসেছে। পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, বাজার, অফিস কিংবা আদালত—ভাষার উপস্থিতি সর্বত্র। এ বৈচিত্র্য কখনো সহজ করে দেয় মানুষের পথ, কখনো আনে নতুন চ্যালেঞ্জ। আঞ্চলিক ভাষাগুলোর মর্যাদা, শিক্ষা ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাদের ভূমিকা বোঝা আসামকে বোঝার একটা চাবিকাঠি। চলুন, দেখি এই ভাষাসমূহ শিক্ষাক্ষেত্রে, প্রশাসনে ও দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে ব্যবহৃত হয়।

শিক্ষা খাতে ভাষার ভূমিকা
আসামের স্কুল-কলেজে ভাষার ব্যবহার বুঝতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার, এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা কতটা বহুভাষিক। বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম অসমীয়া। তবে বারাক উপত্যকার বাংলা মাধ্যম স্কুলও সংখ্যায় কম নয়। বোড়ো অধ্যুষিত এলাকায় বোড়ো ভাষাতেও পাঠদান হয়। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, বিশেষ করে শহর এলাকায়, জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
স্কুল-কলেজে ভাষা ও সরকারি নিয়ম:
- অসমীয়া ভাষা অধিকাংশ জেলার সরকারি স্কুলে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম।
- বাংলা ভাষা বরাক উপত্যকার স্কুল ও কলেজগুলোতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা মূলত বাঙালি পরিবার থেকে আসে।
- বোড়ো, মিসিং, করবি সহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়।
- ইংরেজি মাধ্যম স্কুল শহর, উদ্যোক্তা পরিবার এবং উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশিদের মাঝে জনপ্রিয়।
আসাম সরকার ২০২০ সালে ঘোষণা দিয়েছিল যে অসমীয়া ভাষা সকল স্কুলে বাধ্যতামূলক—তবে Sixth Schedule এরিয়া ও বরাক উপত্যকার বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলো আলাদা ব্যতিক্রম বিস্তারিত নীতিমালা ও সরকারি ঘোষণা দেখুন। এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি, নানা গোষ্ঠীর ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যও নেওয়া হয়েছে।
ভাষা শিক্ষা ও সরকারের পদক্ষেপ:
ভাষাশিক্ষা সহজ নয়, বিশেষ করে যদি পরিবারে এক ভাষা ও স্কুলে অন্য ভাষা হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ:
- গ্রামীণ এলাকায় অসমীয়া বা বোড়ো ছাড়া অন্য ভাষার শিক্ষক কম।
- বাংলা মাধ্যম শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা বা চাকুরিতে অসমীয়া ভাষায় স্বচ্ছন্দ নয়।
- বহু ছাত্র-ছাত্রী বাড়িতে স্থানীয় ভাষায়, স্কুলে অফিসিয়াল ভাষায় কথা বলে দ্বৈত বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যায়।
সরকার বহুভাষিক পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ও ভাষা-অভিযোজন কার্যক্রম পরিচালনা করছে; এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভাষাগতভাবে পিছিয়ে না পরে সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
সরকারী প্রশাসনে ভাষার ব্যবহার
সরকারি অফিস থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন আর জেলার অফিস পর্যন্ত, ভাষার ব্যবহার আসামের পরিচয় গড়ে তোলে। এখানে প্রধানত অসমীয়া ভাষার আধিপত্য, তবে অঞ্চলভেদে বাংলা ও বোড়ো ভাষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশাসনিক কাজে প্রধান ভাষা
- অসমীয়া ভাষা আসামের মূল প্রশাসনিক ভাষা। সরকারি দপ্তর, অফিসিয়াল ঘোষণা, নথিপত্র রচনায় এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
- বাংলা ভাষা বরাক উপত্যকার তিন জেলায় (কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি) সরকারিভাবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত আদালত ও জেলা প্রশাসনে।
- বোড়ো ভাষা বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়নের প্রশাসনিক ও কিছু আদালতীয় কাজে স্বীকৃত।
- সরকারি অফিসে ইংরেজি, বিশেষত উচ্চস্তরের সরকারি পত্রাচার ও কেন্দ্র-রাজ্য যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়।
- Sixth Schedule অঞ্চলের প্রশাসনে স্থানীয় ভাষার ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে, যাতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রশাসনিক পরিষেবা সহজ হয়।
সরকার ১৯৬০ সালের অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট অনুযায়ী অসমীয়া ভাষাকে মূল প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যদিও নানা উপত্যকা ও বিশেষ অঞ্চলে স্থানীয় ভাষার ব্যবহারে আইনগত সুযোগ রেখেছে অসমীর সরকারি ভাষা আইন সম্পর্কে আইনি দলিল এখানে দেখুন।
বিচার বিভাগ ও আদালতে
আসামের আদালত ও বিচার বিভাগে অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে অসমীয়া এবং বরাক উপত্যকার আদালতে বাংলা ব্যবহৃত হয়। জেলার অনুযায়ী স্থানীয় ভাষারও কিছুটা স্বীকৃতি আছে, বিশেষত বোড়োল্যান্ড অঞ্চলে। উচ্চ আদালত ও সরকারি সংস্থাগুলোর অনেক কাজ ইংরেজিতে হয়।
সংক্ষেপে সরকারী ভাষা ব্যবহারের সারাংশ:
- অধিকাংশ সরকারি দপ্তর এবং প্রশাসনিক কাজ অসমীয়ায়।
- বারাক উপত্যকায় বাংলা।
- বোড়োল্যান্ড ও আদিবাসী এলাকা বোড়ো এবং স্থানীয় ভাষা।
- উচ্চতর স্তরে ইংরেজি।
- আইন অনুযায়ী, সরকারি কাগজপত্রে দ্বিভাষিকতা বজায়।
ভাষার প্রশাসনিক গুরুত্ব একা নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি মানুষের নাগরিক অধিকার চর্চা, সরকারি পরিষেবা পাওয়া, এবং বিচারিক সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও অনেক বড় ফ্যাক্টর। ভাষা নিয়ে আইনি ও সামাজিক সংবেদনশীলতা আসামের সমাজে চিরকালীন।
(এখানে কোনো উপসংহার নেই, পরবর্তী অংশে দৈনন্দিন জীবনের ভাষা ব্যবহারের দিক নিয়ে আলোচনা হতে পারে।)
ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণে চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগ
আসামে যত ভাষার ব্যবহার, ততই টিকে থাকার লড়াই। অনেক ভাষা স্কুল, প্রশাসন বা গণমাধ্যমে সুযোগ পায় না, ফলে সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। ভাষা বেঁচে থাকে শুধু কথা বলার মধ্যেই নয়—নিজস্ব ঐতিহ্য, গান, গল্প, লোকশিল্প, এমনকি পরিবারের হাসি-কান্নাতেও। আসামের ছোট ভাষাগুলোর এই টিকে থাকা সহজ নয়। সমাজ, সরকার এবং ভাষাভিত্তিক সংগঠন নানা উদ্যোগ নেয়, তবু চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়।

ছোট ও বিপন্ন ভাষাগুলোর চ্যালেঞ্জ
আসামের অনেক ছোট ভাষা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এসব ভাষা শুধু কথোপকথনের মাধ্যম নয়, বরং একেকটি সংস্কৃতির সৃতি, একেকটি জাতির আত্মপরিচয়। কিন্তু চর্চা কমে যাওয়ায় ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার চাপে ছোট ভাষাগুলো হুমকির মুখে পড়ে।
চলুন দেখে নেই, বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী:
- গৃহ ও সামাজিক চর্চা কমে যাওয়া: অনেক পরিবারে আজ স্থানীয় ভাষার বদলে অসমীয়া বা বাংলা উঠে এসেছে। ছোটদের ভাষা শেখানোর আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
- শিক্ষা ও প্রশাসনে সুযোগের অভাব: স্কুল ও কলেজে বেশিরভাগ সময় ছোট ভাষা বাদ পড়ছে। সরকারি স্তরেও এসব ভাষার চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে।
- নতুন প্রজন্মের উৎসাহ কম: পড়াশোনা, চাকরি বা বাইরে যোগাযোগের জন্য বড় ভাষার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, ফলে স্থানীয় ভাষা অবহেলিত।
- ডিজিটাল মাধ্যমে উপস্থিতি নেই: স্কুলবই, অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা গণমাধ্যমেও ছোট ভাষার স্থান খুব কম।
- স্থানান্তর ও সামাজিক চাপ: অন্য জেলায় বা শহরে চলে যাওয়া, বা সামাজিক মর্যাদার কারণে অনেক পরিবার নিজ ভাষায় কথা বলতে সংকোচবোধ করে।
ভাষা রক্ষায় স্থানীয় ও সরকারি উদ্যোগ
ভাষা হারানো মানে শুধু শব্দ হারানো নয়, বরং জীবনদর্শন, ইতিহাস, আর সমাজের স্তম্ভ হারানো। তাই নানা পর্যায়ে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ:
- ভাষা পুনর্জাগরণ প্রকল্প: কিছু উপজাতীয় জনগোষ্ঠী নিজেদের ভাষার জন্য শব্দভান্ডার, ডিকশনারি ও লিপি সংরক্ষণের কাজ করছে।
- মা-বাবার ভূমিকা: পরিবারগুলো সন্তানদের ঘরে নিজস্ব ভাষায় গল্প, গান এবং কথাবার্তা শেখাতে সচেষ্ট হচ্ছে।
- স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: অঞ্চলভিত্তিক মেলা, নাটক ও লোকগান প্রতিযোগিতায় মাতৃভাষার ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়।
- শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন: কিছু স্কুলে স্থানীয় ভাষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হচ্ছে।
- সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ: অসংখ্য এনজিও, ভাষা সমিতি, এবং জেলা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভাষা সংরক্ষণের জন্য বই প্রকাশ, অডিও-ভিডিও সংরক্ষণ ও কর্মশালা চালু করেছে।
ভাষাসংক্রান্ত শিক্ষাগত ও সামাজিক আন্দোলন
শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা সংরক্ষণ মানে শুধু ক্লাসে পড়ানো নয়, বরং নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে গর্ব করে দেখানো। আসামে সম্প্রতি ভাষা আন্দোলনগুলো স্থানীয় মানুষকে বাঁচতে সাহস জুগিয়েছে।
- কমিউনিটি পাঠাগার ও সাহিত্য কর্মশালা: অঞ্চলভিত্তিক ছোট ছোট শিক্ষাকেন্দ্রে স্থানীয় উপন্যাস, কবিতা, গল্পের বই প্রকাশ হয়। শিশুদের জন্য ভাষাকার্ড ও ছবি-গল্প বানানো হয়।
- তরুণদের অংশগ্রহণ: বহু তরুণ এখন পডকাস্ট, ইউটিউব, সামাজিক মাধ্যমে নিজের ভাষা তুলে ধরছে।
- সরকারি তহবিল ও সম্মাননা: ভাষা রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ও ব্যক্তিদের সরকারি স্বীকৃতি ও অর্থসাহায্য দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
ভাষার পুনর্জাগরণ ও টিকে থাকা
প্রতিটা শব্দ টিকে থাকে যতদিন কেউ হৃদয় দিয়ে তা উচ্চারণ করে। আসামের উপজাতীয় বা ছোট ভাষাগুলো পুনর্জাগরণে জোর দিয়েছে তরুণ প্রজন্ম ও সচেতন অভিভাবকরা।
ভাষা বাঁচিয়ে রাখতে কিছু জরুরি কাজ হচ্ছে:
- নতুন ছড়া, গল্প, লোককাহিনি তৈরি
- শিক্ষা উপকরণ, অভিধান ও অনুবাদ প্রকল্প চালু
- সোশ্যাল মিডিয়ায় ছোট ভাষাগুলোর প্রচার
- বয়স্কদের মুখে মুখে চলা কাহিনি অডিও বা ভিডিও রেকর্ড করা
চেষ্টা অব্যাহত থাকলে আসামের ভাষাগুলো শুধু আজকের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও বাতিঘর হয়ে থাকবে।
উপসংহার
আসামের ভাষাসমূহভাবে টিকে থাকা মানে একাধিক দেশের গল্প, গান আর জীবনের কোলাহলকে বাঁচিয়ে রাখা। প্রতিটি ভাষা এখানে শুধু কথোপকথনের মাধ্যম নয়, বরং নিজের শেকড়, আত্মপরিচয় আর সংস্কৃতির বার্তা বহন করে চলে। ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় শুধু আইন, স্কুল বা সংগঠনের দায়িত্ব যথেষ্ট না—প্রতিটি পরিবার, তরুণ আর স্থানীয় কমিউনিটি একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।
বাচ্চাদের মায়ের ভাষায় বলার আয়োজন করা, উৎসব-অনুষ্ঠানে ছোট ভাষার ছোঁয়া রাখা, কিংবা বন্ধুদের সাথে স্থানীয় শব্দ ব্যবহার করাও এই যাত্রার অংশ। নতুন প্রযুক্তি আর শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে এই ভাষাগুলোকে আধুনিকভাবে মিলিয়ে নিতে কাজ হাঁটছে বহুজন।
একসাথে বললে, আসামের ভাষাগুলোকে ভালোবাসা মানে ভবিষ্যতের জন্য নানা গল্প, চিঠি, আত্মপরিচয় রেখে যাওয়া। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা সবাইকে যারা এই বৈচিত্র্যকে সম্মান করেন। কমেন্টে লিখে জানান, আপনার পরিবারের কোন ভাষার গল্প বা অভিজ্ঞতা বেশি মনে পড়ে? আসুন, আসামের ভাষাময় ভবিষ্যতের আশা নিয়ে আমরা সবাই মিলি।
