অসমে IMD-র ভারী বৃষ্টির সতর্কতা, জলাবদ্ধতা ও ভূমিধস আপডেট 2025

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

অসম সতর্ক! IMD-র প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা, জলাবদ্ধতা ও ভূমিধস আতঙ্ক

অসমে বর্ষার ঘনঘটা মানেই মানুষের মনে মেঘ জমে। জল, কাদা, আর আতঙ্ক যেন ঘরে ঘরে। গত সপ্তাহে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) যে ‘ভেরি হেভি রেনফল’ বা অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের এলার্ট জারি করেছে, তা নতুন উদ্বেগ ঢেলে দিয়েছে অসমের বিভিন্ন অঞ্চলে। শহর বা গ্রামের পার্থক্য নেই—সবখানেই জলাবদ্ধতা ও ভূমিধসের ছায়া। চাষি, দোকানদার, স্কুলপড়ুয়া, সবাই অপেক্ষা করছে কখন ঘুম ভেঙে ঘরের সামনে শুধুই জল চোখে পড়বে না।
https://www.youtube.com/watch?v=KmBrIiFS_UA

IMD-এর লাল সতর্কতা: কোন কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি

 

IMD গত ৪৮ ঘণ্টায় অসম ও তার আশপাশের অঞ্চলে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশেষ সতর্কতায় রাখা হয়েছে গৌহাটি, কামরূপ, লখিমপুর, শোনিতপুর, ও কারিমগঞ্জ জেলা। জলাধারের উচ্চতা বাড়ায় পাহাড়ি অংশগুলোতেও বিপদের আশঙ্কা থাকছে। কারিমগঞ্জে মাত্র দুই দিনে ১৩০ মিমি এর বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গৌহাটি ও আশপাশে বৃষ্টি হয়েছে গড়ে ১৫০ মিমি।

নিম্নাঞ্চলের জলাধার, ড্রেনেজের সঙ্কীর্ণতা, আর পাহাড়ি এলাকার কাদামাটি মিলিয়ে নতুন করে তৈরি হয়েছে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা।

গৌহাটির জলাবদ্ধতা ও অবরুদ্ধ জীবন

 

গৌহাটি শহরের আনন্দ নগর, বেলতলা, হাতিগাঁও, নবীন নগর—প্রায় সব বড় এলাকা ভেসে গেছে। শহরের রাস্তায় হাঁটু সমান জল। বাস, টেকসি, রিকশা সবকিছুই আটকে গেছে।

অনেক দোকানপাট বন্ধ, মানুষের বাড়ি ঘরে জল ঢুকে গেছে। একদিকে যানজট, অন্যদিকে পানি ঢুকে কাজে বের হতে পারছে না অনেকে। শহুরে জীবন যেন জলাবদ্ধতার ডোবা মাড়িয়ে চলছে।

ভূমিধস ও পাহাড়ি এলাকায় বিপদ

অসমের পাহাড়ি অঞ্চল, ভূমিধস, গ্রামে কাদা ও মাটির ধ্বংসাবশেষ, আতঙ্কিত মানুষ — Image created with AI

লখিমপুর ও শোনিতপুরের কিছু পাহাড়ি গ্রামে গত তিন দিনে অন্তত ৫–৬টি ভূমিধসের খবর মিলেছে। রাস্তা, ব্রিজ আর বাড়িঘর কাদার নিচে চাপা পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। আগের বছর দিসপুৰ ও কাছাড়েও বড়সড় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছিল। এবছর প্রশাসন আগেভাগে সতর্ক করছে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা পরিবারগুলোকে।

সরকারি প্রস্তুতি ও জনগণের সাবধানতা

অসম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (ASDMA) এবং ডিস্ট্রিক্ট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (DDMA) রেসকিউ টিম প্রস্তুত রেখেছে। ASDMA ফোন নম্বর ১০৭০ এবং DDMA নম্বর ১০৭৭ চালু করেছে সাহায্যের জন্য। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আগেভাগে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে।

সরকারি তরফে বলেছে—

  • বাড়িতে শুকনো খাবার, পানীয় জল সংরক্ষণ করুন।
  • বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পথ এড়িয়ে চলুন।
  • প্রয়োজনে জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করুন।
  • স্কুলে ছুটি দেওয়া হচ্ছে।
  • পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত।

নিজেদের সুরক্ষায় সচেতন হতে সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে—জলাবদ্ধ রাস্তায় না হাঁটা, ভারি বৃষ্টির সময় বাসায় থাকা, ড্রেনেজ সিস্টেমের মুখে আবর্জনা না ফেলা প্রভৃতি।

দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ

 

আজকের এই সমস্যার গোড়া অনেক পুরনো। অতি শহুরে বিস্তার, অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ, এবং পাহাড় কাটা দিন দিন ড্রেনেজ সঙ্কট তৈরি করছে। জলাধার ভরাট, খাল-নালার মুখ বন্ধ হওয়া, অবৈধ নির্মাণ—সব মিলিয়ে বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় অসম।

একদিকে চলছে মিশন ফ্লাড ফ্রি গৌহাটি, ড্রেনেজ সাফাই, খাল উদ্ধার কার্যক্রম। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় পরিকল্পনা দরকার—শুধু খাল নিয়েই নয়, গ্রিন জোন রক্ষা, পাহাড় কাটার কড়া আইন, জলাধারগুলোর পুনর্গঠন। এভাবে শহর ও গ্রাম একই সঙ্গে টিকে যেতে পারে।

শেষ কথা: আশাও আছে, দায়িত্বও

এবারের বর্ষা অসমবাসীর জন্য আতঙ্ক আর প্রত্যাশার একসঙ্গে পথ চলা। কোথাও বিপদের ছায়া, কোথাও মনের মধ্যে আশার আলো। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সাধারণ মানুষও সচেতন।

সবাই মিলে প্রস্তুত থাকলে, তথ্য জানলে আর একটু বেশি দায়িত্ব নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে ভবিষ্যতের দুর্যোগও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। সময় এসেছে পরিবেশ ও শহরের প্রতি ভালোবাসায় অংশগ্রহণ বাড়ানোর। পরিবেশকে ভালো রাখার সংকল্প থাকলে দুর্যোগের ভয় বলা চলে ‘অতীত’ হবে।

অসম যেন বাঁচে—জল, মাটি, পাহাড়, মানুষ মিলেই। বিভ্রান্তি নয়, হোক আরও শৃঙ্খলা। প্রস্তুত থাকুন, সচেতন থাকুন, বর্ষাকাল কেটে যাবে… নিশ্চিন্তে, নিরাপদে, ফিরে পাবেন চেনা দিন।

Click here