আসাম ডি-ভোটার সংকট ২০২৫: বক্সা জেলার বাস্তবতা ও CAA নিয়ে সরকারি আপডেট
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আসামের ডি-ভোটার: বক্সা জেলার বাস্তবতা ও CAA নিয়ে সরকারের বার্তা (২০২৫)
আসামের ডি-ভোটার (সন্দেহভাজন ভোটার) শব্দটি শুনলে অনেকেই ভাবেন, কারা এই ডি-ভোটার? ডি-ভোটার হলো সেইসব মানুষ, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে নির্বাচন কমিশন সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সাধারণত এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে আলোচনায় এই প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আসে।
এই পরিচিতি মোটেও কাগজপত্রের ভুল নয়, বরং বাস্তবে সমাজ ও রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। ডি-ভোটারদের ভোটাধিকার নেই এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হন। ফলে পরিবার, পেশা, সমাজে এক ধরণের অনিশ্চয়তা চিরস্থায়ী রূপ নেয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আসামে ডি-ভোটার নিয়ে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ৮২,০০০ জন ডি-ভোটার আছেন। এর মধ্যে শুধু বক্সা জেলাতেই সংখ্যা ২১,০০০ এর কাছাকাছি। যদিও সরকার CAA-র মাধ্যমে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিকত্ব নিয়ে আশ্বাস দিলেও, এই ইস্যু এখনো নাগরিক অধিকার, পরিচয় এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্য রাজনীতিতে উষ্ণতা তৈরি করছে।
YouTube ভিডিও দেখতে পারেন: https://www.youtube.com/watch?v=8QEu2GQkcx4
আসামে ডি-ভোটারদের বর্তমান চিত্র এবং বক্সার অবস্থা
আসামে ডি-ভোটার বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাপক প্রভাব রাখে। ২০২৫ সালের সরকারি তথ্য বলছে, পুরো আসামে প্রায় ৮২,০০০ জনেরও বেশি ডি-ভোটার চিহ্নিত আছেন। এর মধ্যে বক্সা জেলা নিজেই দাগ কেটে যাচ্ছে প্রায় ২১,০০০ জন ডি-ভোটার নিয়ে। ডি-ভোটার মানে সন্দেহভাজন ভোটার—পাসপোর্ট, জন্মসনদ, এনআরসি আপডেটের কাগজ না থাকলে বা ভুল তথ্য থাকলে যাকে এই ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। এই “ডি” চিহ্নিত হওয়ার পর পরিবারগুলো পড়ে যায় অন্ধকারে, সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাহিরে। চলুন সংখ্যার ভেতরে মানুষের কণ্ঠ শোনা যাক, আর বোঝা যাক, কেন বক্সা পুরোদস্তুর আলোচনার কেন্দ্রে।
আসামের ডি-ভোটার: সংখ্যা ও বর্তমান অবস্থা
বর্তমান সরকারি ও সংবাদ সূত্র অনুযায়ী, আসামে মোট ডি-ভোটার:
| জেলা | ডি-ভোটার সংখ্যা |
|---|---|
| সম্পূর্ণ আসাম | প্রায় ৮২,০০০ |
| শুধু বক্সা | প্রায় ২১,০০০ |
এই বিশাল সংখ্যা আসামের সামাজিক আবহ ও রাজনীতিতে বড়সড় গল্প বলে। News Live-এ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বক্সা জেলার ডি-ভোটার সংখ্যা এককভাবে বেশকয়েকটি জেলার চেয়েও বেশি।
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
- এককভাবে বক্সা জেলায় আসামের মোট ডি-ভোটারের এক-চতুর্থাংশের বেশি।
- গোটা রাজ্যের D-voter ইস্যু সমাধানে CAA ও অন্যান্য আইন বারবার আলোচনায় আসছে।
- ডি-ভোটার পরিবারগুলোর সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না, ভোটের অধিকারও হারান।
বক্সা: আলোচনার কেন্দ্রে কেন?
বক্সা জেলার এই সংখ্যাটাই শুধু চোখে পড়ার মতো নয়, বরং অনেক প্রশ্নও তোলে। কেন এখানে এত ডি-ভোটার?
- সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল: বক্সার অবস্থান বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা, ফলে বহু বছর ধরে এখানে বসবাসের কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা।
- আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়: কোচ রাজবংশী, বাঙালি হিন্দুসহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে এখানে আছেন, কিন্তু বেশিরভাগের হাতে আধুনিক কাগজপত্র নেই, তাই তাদের সন্দেহের তালিকায় ফেলা হয়েছে।
- NRC-CAA ইস্যু: NRC আপডেট ও CAA নিয়ে আইনি টানাপোড়েনে এখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। “ডি” চিহ্নিত হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বহু বছর।
- রাজনৈতিক ডামাডোল: বক্সার মতো জেলার ঘটনাগুলো ঠিক কতটা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
স্থানীয় বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি
বক্সা জেলার ডি-ভোটারদের মুখে এখন রাজনীতির জটিল হিসাব। বঞ্চনার অনুভূতি তাদের জীবনকে ওলট-পালট করে দিয়েছে।
নিম্নবিত্ত পরিবার, কৃষিজীবী, দিনমজুর শ্রেণি সাধারণত বেশি বিপাকে পড়েন। সরকারি ঘোষণায় CAA কার্যকর হলেও বাস্তবে এর সুবিধা যেন অনেকের হাতছোঁয়ার বাইরে থেকেই যায়।
- সম্ভাব্য সামাজিক প্রভাব:
- বিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরি, বাড়ি নির্মাণে নানা বাধা
- পরিবারে নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক চাপ
- রাজনৈতিক আশ্বাস, কিন্তু বাস্তব সংকট উত্তরহীন
আরও বিশদে জানতে চাইলে, পড়তে পারেন Assam Tribune–এর প্রতিবেদন।
গ্রাফিক্স: সংখ্যা ও অঞ্চল
এই চিত্রটি দেখে বোঝা যায়, বক্সার ডি-ভোটার সংকট পুরো রাজ্যের তুলনায় কতটা বড়:
![]()
ডি-ভোটার সমস্যার গভীরতা বোঝার জন্য রাজনীতির বাইরেও মানুষের কণ্ঠ শুনতে হবে। সংখ্যার কাছে নিছক পরিসংখ্যান নয়, এখানে বাস্তব সংকটের বহু বছর জমা-থাকা গল্প।
ডি-ভোটার কে, কেন সন্দেহভাজন?
আসামের ডি-ভোটার বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব রাখে। অনেকেই জানেন না—’ডি-ভোটার’ বলতে ঠিক কাদের বোঝানো হয়, অথবা নির্বাচন কমিশন কীভাবে কাউকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে। এখানে সহজ ভাষায় বোঝানো হলো ডি-ভোটারের সংজ্ঞা, এর আইনি ভিত্তি, এবং কেন সাধারণ মানুষের জীবনে এমন বড় সংকট হয়ে দাঁড়ায়।
‘ডি-ভোটার’ শব্দের পূর্ণরূপ ও সংজ্ঞা
ডি-ভোটার শব্দের ‘ডি’ আসলে “Doubtful” শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। অনেক সময় এদের ‘ডাউটফুল ভোটার’ বা ‘সন্দেহভাজন ভোটার’ হিসেবেও বলা হয়। প্রত্যেক ভোটার তালিকায় যাদের নাম থাকার কথা, কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়, তাদের নামের পাশে নির্বাচন কমিশন (EC) ‘D’ মার্ক বসিয়ে দেয়। এই ‘ডি’ চিহ্ন মানে, ওই ব্যক্তি ভোট দিতে পারবেন না এবং তাদের নাগরিকত্বের তদন্ত চলবে।
সূত্র হিসেবে বিস্তারিত জানতে চাইলে পারেন NRC-এর সরকারি FAQ এবং উইকিপিডিয়ার ডি-ভোটার সংক্রান্ত নিবন্ধ।
কেন কাউকে ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়?
ডি-ভোটার চিহ্নিত হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ থাকে। আসামে নির্বাচনী তালিকা হালনাগাদের সময় বা NRC-র নানা পর্যায়ে যদি কারো জন্মসনদ, নাগরিকত্বের সপক্ষে নথি, আধার বা ভোটার কার্ডের তথ্য জটিলতা দেখা দেয়, তখন সংশ্লিষ্ট ভোটারকে সন্দেহভাজন বলে ধরে নেয় নির্বাচন কমিশন। মুখ্য কয়েকটি কারণ:
- নথিপত্রের স্বচ্ছতা না থাকা (পাসপোর্ট, জন্মসনদ, এনআরসি কাগজে ভুল/অস্পষ্ট তথ্য)
- বিদেশি সন্দেহে মামলা থাকা (Foreigners Tribunal-এ বিচারাধীন)
- একই পরিবারে একাধিক সদস্যের তথ্য অমিল
- সীমান্ত অঞ্চলের বিশেষ সংবেদনশীলতা ও ইতিহাস
এগুলো মানেই প্রশাসনের চোখে ওই ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক কিনা, তা সন্দেহের তালিকায় চলে গেছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা
নির্বাচন কমিশন (EC) ডি-ভোটার চিহ্নিত করার কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেয়। ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় কমিশনের মাঠ পর্যায়ের আধিকারিক বা ব্লক পর্যায়ের অফিসাররা তথ্য যাচাই করেন। যদি কোথাও সন্দেহের অবকাশ থাকে, তখন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ চিহ্ন (D) দিয়ে রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তারা ভোটাধিকার না পান।
এছাড়া, কমিশন থেকে প্রক্রিয়া শুরু হলেও “Foreigners Tribunal”-এ এই মামলা বিচারাধীন থাকে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় আদালতে।
ডি-ভোটারদের আইনি ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ
ডি-ভোটার রূপে চিহ্নিত হওয়া মানে শুধু ভোটাধিকার হারানো নয়, বরং সমাজে নানা বাধা ও সংকটের মুখোমুখি হওয়া। এটি শুধু প্রশাসনিক সংকট না, মানুষের জীবন বদলে দেয়:
- ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া
- সরকারি চাকরি, স্কলারশিপ, বাড়ি ও জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রে জটিলতা
- মানসিক ভীতির পরিবেশ, সামাজিক অবজ্ঞা ও একাকীত্ব
- সন্তানদের শিক্ষালাভ, চিকিৎসা এবং ভাতা পেতে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া
যে কোনো পরিবারে জটিল কাগজপত্র বা সঠিক তথ্য না থাকার দরুন, পরিবারের একাধিক সদস্য একসঙ্গে ডি-ভোটার হতে পারেন। প্রতিনিয়ত আদালতে যাতায়াত, নথি সংগ্রহের খরচ, আইনি লড়াই-সবকিছু মিলে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
নানান অভিযোগ, আবেদন ও শুনানি মিলিয়ে আইনি জটিলতা পিছিয়ে দেয় সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা। এই সংকটের মধ্য দিয়ে কেটে যায় বহু বছর—কারো কিশোরবেলা, কারো জীবনের শেষ অধ্যায়।
বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন NRC Assam-এর επίধিক তথ্যপর্দায়।
সংক্ষেপে:
ডি-ভোটার হওয়া শুধু একটি চিঠির খেলা নয়। এখানে মিশে আছে হাজারো বাস্তব মানুষের পরিবারের আত্মা, পরিচয় বাঁচানো কিংবা হারানোর কোটি টাকার দুশ্চিন্তা। Admin-এর একটি সিদ্ধান্ত জীবনের গতিপথ বদলে দেয়, সেখানে কাগজের ওজনে কখনও ছিঁড়ে যায় সর্বস্ব।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও ডি-ভোটারদের জন্য সরকারের বার্তা
আসামে ডি-ভোটার সমস্যার কথা উঠলেই CAA নিয়ে আলোচনা সামনে আসে। বিশেষ করে যেসব পরিবার বছরের পর বছর নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে—তাদের জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি এখন আশার বড় নাম। চলুন দেখি, ঠিক কীভাবে CAA চালু হওয়ার পর ডি-ভোটার, বিশেষত হিন্দু, কোচ রাজবংশী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নিরাপত্তার আশ্বাস আসছে, এবং কী বলছেন মন্ত্রী রঞ্জিত দাস।

কে কী বলছে সরকার? মন্ত্রী রঞ্জিত দাসের প্রতিশ্রুতি
বক্সা জেলার মানুষের মুখে বারবার উঠে আসে একটি বিষয়—সরকারের আশ্বাস। সম্প্রতি এক সরকারি মিটিংয়ে আসাম সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী রঞ্জিত দাস প্রকাশ্যে ডি-ভোটারদের নিয়ে বার্তা দেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী:
- CAA আইনে হিন্দু, কোচ রাজবংশী ও বাঙালি মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁরা নাগরিকত্ব সংকটে আছেন, তাঁদের নিরাপত্তা ও ভারতীয় নাগরিকত্বের বিশ্বাসযোগ্য গ্যারান্টি দিচ্ছে সরকার।
- বক্সা জেলার ডি-ভোটারদের নিয়ে সরাসরি বলেন, “এইসব পরিবার ভয় পাবেন না। সরকার আপনাদের পাশে আছে, এবং আপনারা CAA-র অধীনে নাগরিকত্ব পাবেন।”
- তিনি নিশ্চিত করেন, CAA কার্যকর থাকাকালীন যারা তালিকায় ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্নিত, তারা কাগজপত্র যাচাইয়ের পর নাগরিকত্ব পাবেন এবং ভোটাধিকার ফেরত পাবেন।
- মুখ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষ স্তরের আশ্বাস, কারও নাগরিকত্ব নিয়ে এখন ভয় করার কারণ নেই। সূত্রে পড়ুন মন্ত্রীর বক্তব্য।
CAA কীভাবে নিরাপত্তা দেয়?
CAA বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ সালে চালু হয়। আসামে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকলেও, এই আইন স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে—
- বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা নির্দিষ্ট সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা (হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান) যদি ২০১৪ সালের আগে ভারতে আসেন, তবে তারা সহজেই নাগরিকত্ব পাবেন।
- ফলে, বহু বাঙালি হিন্দু এবং কোচ রাজবংশী পরিবার যারা ডি-ভোটার, তারা সরাসরি CAA-তে আবেদন করতে পারবেন এবং নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা পাবেন।
- ডি-ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় কাগজপত্রে ভুল থাকলেও, CAA-র আওতায় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য শুধু ধর্মীয় ও আগমন-তারিখের শর্ত মানলেই চলবে।
এভাবে, CAA অনেক পরিবারের “ডি-ভোটার” ট্যাগ মুছে সুরক্ষার বার্তা দিচ্ছে।
তবে, বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ ও প্রশাসনিক জটিলতা থাকতেই পারে, কারণ আদালত এবং কাগজপত্র যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট পথ এখনও অনুসরণ করতে হয়।
মাঠপর্যায়ে সরকারের পদক্ষেপ ও বার্তা
সরকার শুধু আইন দিয়েই থেমে থাকেনি; মাঠপর্যায়েও প্রচারণা, গণশুনানি ও নথি যাচাইয়ের বিশেষ শিবির শুরু করেছে।
কিছু উদ্যোগ:
- আবেদনপত্র জমা ও নথিপত্র যাচাই প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়েছে।
- সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য “হেল্প ডেস্ক” এবং আইনি সহায়তা চালু হয়েছে, যেন মানুষ সহজেই সরকারি দপ্তরে যেতে পারেন।
- ডি-ভোটারদের জন্য বিশেষ ‘ড্রপ ইন সেন্টার’ও খোলা হচ্ছে—যেখানে আবেদনকারী সহজেই নিজের অবস্থা জানতে পারবেন।
স্থানীয় মানুষের নজরে: আশা ও বাস্তবতা
হিন্দু, কোচ রাজবংশী বা বাঙালি ডি-ভোটার পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক অনেকটাই কমছে, কারণ তারা জানেন—CAA-র বদৌলতে নাগরিকত্ব ফেরানোর সুযোগ এসেছে। চাকরি, শিক্ষা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশা বাড়ছে।
তবুও, বহু পরিবার নানা প্রশাসনিক জটিলতার মুখে পড়ছেন—বিশেষত যাদের নথিপত্র ভুল বা অসম্পূর্ণ।
রাজ্য সরকারের অঙ্গীকার স্পষ্ট—কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন না, সব পরিবারকে যাচাই করে ন্যায্য অধিকার দেওয়া হবে।
এই দিক নির্দেশনার সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রতিশ্রুতি আবারও পড়তে পারেন Assam Tribune-এর ফেসবুক পেজে CAA ও ডি-ভোটার নিশ্চয়তা মন্তব্যে।
CAA ও ডি-ভোটার সমস্যা: চটজলদি তথ্যতালিকা
ছোটখাটো পয়েন্টে দেখে নিন মূলকথা:
- CAA-এর আওতায় হিন্দু, কোচ রাজবংশী ও বাঙালিদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার রাস্তা খোলা হয়েছে।
- সরকার মাঠে নেমে ডি-ভোটার তালিকাভুক্তদের জন্য সাহায্যকেন্দ্র ও দ্রুততর যাচাই প্রক্রিয়া চালু রেখেছে।
- প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তিতে “ভয় বা আতঙ্ক না রেখে আবেদন করুন”—এমনই নির্দেশ।
- ভোটাধিকার, শিক্ষা ও সরকারি সুযোগ ফেরার আশ্বাস মিলেছে, যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদালত ও কাগজপত্র নিয়ে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
বাকিটা নির্ভর করছে কাগজপত্র, প্রশাসনিক সক্ষমতা এবং সরকারী সদিচ্ছার ওপর। তবে আশা ও অঙ্গীকার—এই মুহূর্তে ডি-ভোটার ও তাদের পরিবারের নির্ভরতার শক্ত ভিত।
CAA ও ডি-ভোটার ইস্যুতে আরো জানতে পড়তে পারেন Assam Tribune-এর রিপোর্ট।
ডি-ভোটার ইস্যুর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

আইনের বাইরে পড়ে থাকা পরিবার, দৃষ্টি আসামের দিকে (Image generated by AI)
ডি-ভোটার শব্দটি কাগজে-কলমে সাধারণ মনে হলেও, এর ছায়া আসামের সামাজিক ও রাজনৈতিক মঞ্চে বিস্তৃত। বক্সার মতো জেলায় যেখানে হাজার হাজার মানুষ “ডি” চিহ্ন নিয়ে জড়িয়ে গেছেন, সেখানকার প্রতিটি পরিবারের জীবনে নতুন ঘূর্ণি তৈরি হয়েছে। কারা ভোট দিতে পারবে, কারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে—এই উত্তর খোঁজার নামই যেন হয়েছে আসামের রাজনীতি। কিন্তু প্রভাব তো শুধু কাগজে থামেনি, ডি-ভোটার সংকট গিয়ে ঠেকেছে গ্রাম, শহর, এমনকি পড়ে গেছে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের ঘাড়ে।
রাজনৈতিক মাঠে ডি-ভোটার: ক্ষমতা ও বিরোধ
ডি-ভোটার ইস্যুকে ঘিরে রাজনীতির উত্তাপ দিনে দিনে বেড়েছে। শাসকদলের দাবি, CAA বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সব অসহায় ডি-ভোটার, বিশেষ করে হিন্দু, কোচ রাজবংশী ও বাঙালিদের নিরাপত্তা দেবে। মন্ত্রী রঞ্জিত দাস প্রায় প্রতিটি জনসভায় বলছেন, “ভয় নেই, সরকার আপনাদের সাথে”—আসাম ট্রিবিউনের একাধিক রিপোর্টে এই বার্তা আছে।
তবুও, বিরোধী দল AIUDF ও কংগ্রেসের মতে, এই আইনি ব্যবস্থা আসলে ভোটব্যাংকের রাজনীতি। কিছু সম্প্রদায়কে আশ্বাস দিয়ে অন্যদের সন্দেহের তালিকায় রাখার মাধ্যমে পরিবারে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায় বঞ্চিত হচ্ছে—এই অভিযোগ এখন সর্বত্র।
নতুন রাজনৈতিক জোট, যেমন এনডিএ, নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করতে এই ইস্যুকে সামনে রাখছে, যেখানে একদিকে উপকৃত হচ্ছে কিছু, আবার মানসিক-সামাজিক চাপে পড়ছে অন্য এক বিশাল জনগোষ্ঠী।
বিস্তারিত রাজনীতির চিত্র জানতে পড়ুন Assam Tribune-এ প্রকাশিত বিশ্লেষণ।
সামাজিক সংকটে স্থানীয় পরিবার
ডি-ভোটার হওয়া মানে শুধু ভোটার তালিকায় নাম না থাকা নয়—এটা পরিবার, আত্মীয়স্বজন, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে ঠেলে দেওয়া এক নতুন সংকটে।
- শিক্ষাগত বাধা: শিশু ও কিশোররা স্কুলে ভর্তি ও পরীক্ষার সময় নানা হেনস্থার শিকার।
- চাকরি ও ভাতা: সরকারি চাকরি, ভাতা, এবং স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত হওয়া বাস্তব হয়ে পড়েছে।
- বিয়ে ও সামাজিক সম্পর্ক: অনেক পরিবার ডি-ভোটার পরিচয়ে মেয়ে বা ছেলে বিয়ে দিতে চায় না।
- মানসিক চাপ: অনিশ্চয়তা, আদালতের ঝামেলা, নথিপত্র জোগাড়ের দৌড়—সব মিলে মানসিক রোগ বেড়েছে।
ডি-ভোটার হওয়ার অভিজ্ঞতা ‘কাগজে বন্দি নাগরিকত্ব’-এর মতো, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুধু প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে, স্থায়ী সমাধান পাচ্ছে না।
জাতিগত ও ভাষাগত সংবেদনশীলতা
আসামে ডি-ভোটার নিজেই এক সামাজিক পরিচয় সংকট। যেখানকার ভূমিপুত্র ও “আউটসাইডার” বিতর্ক জাতিগত ও ভাষাগত সংজ্ঞার ওপর ঝড় তুলেছে।
- অসমীয়া বনাম বাংলাভাষী: খুব স্পষ্টভাবে বিভাজন তৈরি হয়েছে; ভোটার তালিকায় সন্দেহের ছায়া পড়েছে বাংলাভাষী মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের ওপর।
- আদিবাসী ও সংখ্যালঘু: বেশ কিছু অঞ্চলে আদিবাসী সমাজ দাবি করছে, “আমরা আসল ভূমিপুত্র”—সেটা আলাদা রাজনীতির রং পেয়েছে।
- প্রতিবেশী ভয় ও সামাজিক উত্তেজনা: গ্রামে-শহরে ‘ডি-ভোটার’ পরিবারকে নিয়ে গুঞ্জন, সেমিনার, এমনকি বয়কটের নির্দেশ চলছে অনেক জায়গায়।
- সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন, সীমান্তে ও চর অঞ্চলে“ভুল” ডি-ভোটার তালিকার জন্য প্রকৃত ভারতীয়রই বেশিরভাগ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত (BBC বিশ্লেষণ দেখুন)।
জনগণের মধ্যে আশঙ্কা ও প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় জনগণ মাঝেমধ্যে হাল ধরার সাহস দেখালেও, সর্বত্র ব্যাপক আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
- আদালত ও প্রশাসনিক জটিলতা: প্রতি সপ্তাহে ট্রাইব্যুনালে হাজিরা, নতুন নতুন কাগজপত্র, আইনজীবী খরচ—সাধারণ মানুষের পক্ষে কার্যত অসম্ভব।
- নাগরিকত্ব হারানো ও আটকের ভয়: কিছু পরিবার আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নিয়েছে, কারণ নাগরিকত্ব হারালে জীবন পুরোপুরি বদলে যেতে পারে (সম্পর্কিত খবর দেখে নিন)।
বিরোধী পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্দোলন
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে AIUDF ও কংগ্রেস, ডি-ভোটার প্রসঙ্গে সরকারের নীতি কঠোরভাবে সমালোচনা করছে।
তাদের মতে—
- আইনি প্রক্রিয়া জটিল ও পক্ষপাতদুষ্ট
- সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে ভোট-রাজনীতি
- মানবিক ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে
পাল্টাপাল্টি ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী বক্তব্যে আসামের জমি যেন প্রতিদিন নতুন করে বন্টিত হচ্ছে।
ডি-ভোটার ইস্যু তাই আসামের জন্য কেবল ভোটের অঙ্কের প্রশ্ন নয়, বরং মানুষের ন্যায্য অধিকার, ইতিহাস, সামাজিক সম্মান—সবকিছু মুছে যাওয়া-না-যাওয়ার ভাগ্য নির্ধারণের যুদ্ধ।
আরও তথ্য জানতে পারেন Assam Tribune-এ প্রকাশিত রিপোর্টে।
উপসংহার
আসামে ডি-ভোটার ইস্যু শুধু কাগজের হিসেব নয়, বরং হাজারো মানুষের বাস্তব বিপদ ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন। বক্সা জেলার ডি-ভোটারদের সংখ্যাই বোঝায় কতটা গভীর এই সংকট। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং সরকারের সরাসরি আশ্বাস, অন্তত হিন্দু, কোচ রাজবংশী ও বাঙালি পরিবারের জন্য নতুন আশার জানালা খুলেছে। তবে মাঠে নথিপত্রের গিঁট, আদালতের পথে যাওয়া আর ন্যায্য অধিকার পাওয়ার অপেক্ষা এখনো চলছেই। সামনে প্রশাসনিক জটিলতা যত কমবে, তত বেশি পরিবার সত্যিকারের স্বস্তি পাবে। এই সংকট পেরিয়ে, একদিন সব পরিবারের মুখে ফিরবে নাগরিক মর্যাদার হাসি—এই আশাই থাকুক সবার মধ্যে। মতামত লিখুন, আপনিও হতে পারেন এই পরিবর্তনের অংশ।
