আসামের বন্যা ও ভূমিধ্বস আপডেট ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫: প্রধান ঘটনা, উদ্ধার অভিযান, উন্নয়ন ও রাজনীতি
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আজকের আসামের প্রধান ঘটনা (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫): আকস্মিক বন্যা, ভূমিধ্বস, উন্নয়ন প্রকল্প ও রাজনৈতিক আলোচনার সবশেষ আপডেট
আসামে আজ, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, টানা ভারী বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ছয়টি জেলার ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ জীবনে নতুন সংকটের মুখে—২৭৪টি গ্রামের বেশির ভাগই পানির নিচে, গবাদি পশু ও কৃষিজমির ক্ষতি আক্রান্তদের দুরবস্থা আরও বাড়িয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছে গোলাঘাট, বিস্বনাথ ও সোনিতপুর জেলা, যেখানে নদীর বাঁধ ভেঙে জনপদ প্লাবিত হয়েছে, প্রাণহানিও ঘটেছে।
শহরে যেমন গুয়াহাটিতে জলাবদ্ধতা ও ট্রাফিক জট হয়েই যাচ্ছে, গ্রামীণ এলাকায় নদীর ভাঙনে শত শত পরিবার ঘরবাড়ি ও সম্পদ হারিয়ে ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিম জরুরি সাড়াদান চালাচ্ছে, পাশাপাশি নাগরিকদের সতর্ক থাকার জন্য সরকারি পরামর্শ জারি রয়েছে। আজকের লেখায় থাকছে এই সংকট কেন হলো, কারা ক্ষতিগ্রস্ত, কীভাবে উদ্ধার ও সহায়তা চলছে, আর কেন প্রতিবার বন্যা হলে নতুন করে ভুগতে হয়—এসব প্রশ্নের জবাব।
আরও বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন: Nagamese News Today | Aloto Naga TV | 16th September 2025
আজকের আসামের প্রধান ঘটনা: আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বস
আজকের আসামজুড়ে মানুষ লড়ছে হঠাৎ শুরু হওয়া ভয়াবহ বন্যা আর ভূমিধ্বসের মুখোমুখি। টানা ভারী বৃষ্টি ও নদীর ভাঙন মিলিয়ে ছয়টি জেলার অন্তত ২২ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। বানের জলে ডুবে গেছে ২৭৪টি গ্রাম, ফসলি জমি, বাড়িঘর, এমনকি গবাদিপশুর জীবনও হুমকির মধ্যে। ডিব্রুগড়, গোলাঘাট, সোনিতপুর, বিস্বনাথ, কার্বি আংলং ও কাছাড় জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে, শহরের মধ্যে গুয়াহাটিতেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন। এই অংশে আজকের উদ্ধার অভিযান, প্রশাসনের ভূমিকা এবং জনজীবনে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হল।
উদ্ধার অভিযান ও প্রশাসনের ভূমিকা: জলরাহত-২ মিশনের আওতায় কীভাবে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে, এসব তথ্য সহজ, স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরুন
বন্যা ও ভূমিধ্বসের সময়ে দ্রুত উদ্ধার অভিযানই সাধারণ মানুষের ভরসা। আসামে এবার SDRF (State Disaster Response Force), NDRF (National Disaster Response Force), ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস একসাথে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে Golaghat, ডিব্রুগড়, ও আশপাশের জেলাগুলোতে।
- গোলাঘাটে উদ্ধার কাজ: পাঁচটি প্রশাসনিক সার্কেলের ৫৬টি গ্রামে (খুমটাই, মোরঙ্গি, সরুপথার, বোকাখাট ও গোলাঘাট) মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। SDRF ও NDRF সেখানে ২৭টি রেসকিউ বোট দিয়ে ২,৮০০+ মানুষ, বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের উদ্ধার করেছে। ভারী বৃষ্টিতে রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ, এমনকি সেতুও ভেঙে গেছে, যাতায়াত প্রায় বন্ধ।
- ডিব্রুগড় ও কাছাড়ে উদ্ধার অভিযান: ডিব্রুগড়ে নতুন কয়েকটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। কাছাড়ে DDMA (District Disaster Management Authority) এবং SDRF মিলে বন্যার্তদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। এখানকার বারাক নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়েছে; তাই প্রশাসনের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
- গুয়াহাটিতে প্রশাসনের ভূমিকা: শহরের জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় স্থানীয় পৌরসভা ও SDMA (State Disaster Management Authority) কাজ করছে। পানিবন্দি এলাকা যেমন নৱীন নগর, অনিল নগর, রুক্মিণীগাঁও, ডাউন টাউন – এখানেও ছোট ছোট দলে উদ্ধারকাজ পরিচালিত হচ্ছে।
খাবার-জল, ওষুধ ও ত্রাণের দ্রুত সরবরাহের জন্য ১৫টি ত্রাণ শিবির চালু হয়েছে গোলাঘাটে। পশুর খাবার, শীতলপাটি, জরুরি ঔষধপত্র এতে বিতরণ হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র, বারাক ও ধনসিরি নদীগুলো বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। প্রশাসনের হেল্পলাইন চালু আছে, গোলাঘাটের জন্য নম্বর: ০৩৭৭৪-২৮০২২২, ০৩৬৭৪-২৮১৫২৮।
বিশদ খবর জানতে পড়ুন: 274 Villages Inundated, 22000 Affected, 2 Dead in Golaghat
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত জনজীবন: সংক্ষিপ্তভাবে বলুন, বিশেষত ডিব্রুগড় ও আশপাশের এলাকায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ও সাধারণ মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়েছে
ডিব্রুগড়সহ এছাড়াও আশেপাশের অঞ্চলগুলোর মানুষের জীবন হঠাৎ থমকে গেছে। এখানকার স্কুল, বাজার, ক্লিনিক, ছোট কারখানা প্রায় জলমগ্ন। যেসব গ্রামে নদীর বাঁধ ভেঙেছে, ঘরবাড়ি নেই, খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই— বাস্তবতা খুবই কঠিন।
- মানুষের ক্ষয়ক্ষতি:
- ২২,০০০+ মানুষ পানিবন্দি, ২ জনের মৃত্যু হয়েছে, শতাধিক গবাদিপশু ও পোল্ট্রি মারা গেছে।
- ২,৮০০+ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় ৬,৮০০ মানুষ ১১৩টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।
- আশঙ্কাজনকভাবে, অনেক শিশু ও বৃদ্ধের অসুখ বাড়ছে; বিশুদ্ধ পানি না থাকায় পেটের রোগ, চর্মরোগের আশঙ্কা বেশি।
- কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি:
- ৪,১৯০ হেক্টর ফসলি জমি ও মাছচাষ প্রায় ধ্বংস।
- ডিব্রুগড় ও আশেপাশে রাস্তাঘাট, বাঁধ, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে পড়েছে।
- সোনিতপুরে শুধু পশু মৃত্যু ৩৩,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
- জীবনযাত্রার প্রভাব:
- স্কুল ও দপ্তর বাধ্য হয়েই বন্ধ।
- বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় হাজারো পরিবার অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে।
- দোকান, বাজার, কবলা ও ঝিল/পুকুর ডুবে যাওয়ায় বহু মানুষের জীবিকার পথও বন্ধ।
বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে পাকা বাড়ির বদলে মাচাং ঘর (বাঁশের ওপর ঘর) প্রচলিত, সেখানেও এবার টানা জলে গৃহস্থালিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শহরে জলাবদ্ধতা বেশি হলেও গ্রামে স্থায়ী নদীবন্যা— এই দুই চেহারার জন্য আলাদা সমাধান দরকার।
অধিক তথ্যের জন্য পড়ুন: Floods batter Assam: Guwahati, Golaghat, Cachar hit hard by incessant rainfall
আসামের বন্যা-ভূমিধ্বসের এই চিত্র নতুন কিছু নয়, কিন্তু এবার ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জ দুটোই বেশি। উদ্ধার ও পুনর্বাসন যত দ্রুত হয়, তত ভালো।
উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর আসাম সফর
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বরের আসাম সফর রাজ্যের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই সফরে তিনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা আসামের স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, শক্তি ও পরিবহন ব্যবস্থার ছবিই বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। আজকের ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধ্বসের দিনেও আসামের মানুষ এই প্রকল্পগুলোকে ভবিষ্যতের আশার আলো হিসেবে দেখছেন।
দারাং মেডিকেল কলেজ ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার অগ্রগতি
দারাং মেডিকেল কলেজ, জিএনএম স্কুল এবং বিএসসি নার্সিং কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আসামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য বড় সাফল্য।
- ১০০টি এমবিবিএস সিট নিয়ে চালু হবে এই কলেজ, ফলে আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা নাগালের মধ্যে আধুনিক মেডিকেল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পাবে।
- আধুনিক হাসপাতালের সংযোজন গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য জরুরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পেতে অনেকটাই সহজ করবে।
- নার্সিং ও প্যারামেডিকাল শিক্ষা বাড়লে স্বাস্থ্য খাতে কর্মসংস্থান ও নারীশক্তির অংশগ্রহণ বাড়বে, যা ভবিষ্যতের জন্য দরকারি।
এ বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: PM Modi lays foundation for Medical College, Ring Road, other development projects in Assam’s Darrang
গৌহাটি রিং রোড: শহরজুড়ে সংযোগ ও চলাচলে নতুন দিগন্ত
গুয়াহাটির যানজট আর ট্রাফিক সমস্যার কথা কারও অজানা নয়। এবার ১২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গৌহাটি রিং রোড প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর দিয়ে শহরের চারপাশে একসাথে পাঁচটি জাতীয় সড়ক, দুইটি রাজ্য সড়ক, একটি বিমানবন্দর, তিনটি রেলস্টেশন, এবং একটি জলপথ (ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে) যুক্ত করা হবে।
- ফলে ট্রাফিক কমবে, শহরের পরিবহন দ্রুত ও স্মার্ট হবে।
- শিল্প, ব্যবসা, পর্যটন ও নতুন বিনিয়োগ বাড়বে।
- শহরের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে।
প্রকল্পটি নিয়ে আরও জানুন: Guwahati Ring Road Project Finally Set to Roll with Foundation Stone Laying on Sept 14
কুরুয়া-নারেঞ্জি সেতু: ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ের সহজ সংযোগ
প্রধানমন্ত্রী মোদী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছেন কুরুয়া-নারেঞ্জি ব্রিজ নির্মাণকাজের সূচনা।
- ২.৯ কিমি দৈর্ঘ্যের এই সেতু তৈরি হলে, গুয়াহাটি থেকে দারাং বা শহরতলীর অন্যান্য এলাকায় যাতায়াতের সময় অনেকটাই কমে যাবে।
- ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে দুই পাড়ের মানুষের সঙ্গে শহরের সংযোগ দৃঢ় হবে।
এই ব্রিজের বিষয়ে পড়ুন: PM Modi to inaugurate projects worth around ₹18530 crore in Assam today
বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট: পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও গ্রামীণ উন্নয়নের হাতিয়ার
গোলাঘাটে দেশের প্রথম বাঁশ-ভিত্তিক বায়ো-ইথানল প্ল্যান্ট চালু হলো। এটিই ভারতের অন্যতম বড় শক্তি-খাতের নতুন উদ্ভাবন।
- বছরে প্রায় ৪৮,৯০০ মেট্রিক টন ইথানল উৎপাদন হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বসতি থেকে সংগৃহীত ৫ লাখ টন সবুজ বাঁশ দিয়ে।
- এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতি বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় পাবে।
- ফসিল ইন্ধনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে, দেশীয় শক্তি নিরাপত্তা বাড়বে।
আরো পড়ুনঃ PM Modi Inaugurates India’s First Bamboo-Based Bio-Ethanol Plant in Assam’s Golaghat
এই প্রকল্পগুলো আসামের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উন্নয়ন মানে শুধু বড় রাস্তাঘাট বা কারখানা নয়, বরং
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়ানো
- গ্রামীণ অর্থনীতির জোরদারকরণ
- পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পথে এগোনো
এসবই বাস্তবে হচ্ছে এখন আসামে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফর আর প্রকল্প উদ্বোধনের এই ধারাবাহিকতা রাজ্যের ভবিষ্যত উন্নয়নের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এসব বিষয়ে আরও তথ্য পেতে দেখুন: PM’s ₹18530 cr push in Assam; launches bioethanol, polypropylene plants
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আলোচিত বিতর্ক
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি, বন্যা-ভূমিধ্বস আর উন্নয়ন খবরে ব্যস্ত আসামের রাজনীতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মূল বিতর্ক গড়ে ওঠে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ’র মধ্যে। একদিকে স্থানীয় দুর্যোগ, অন্যদিকে দুই শীর্ষ নেতার মুখোমুখি অবস্থান রাজ্য রাজনীতিতে নতুন টানাপোড়েনের জন্ম দিয়েছে। সহজ ভাষায়, চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আলোচিত বিতর্কের সরল বিবরণ দেয়া হলো—
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা: কংগ্রেস, গগৈ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
রাজ্য রাজনীতির মূল আলোচনায় উঠে আসে একটি SIT (Special Investigation Team) রিপোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরাসরি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ, তার ব্রিটিশ স্ত্রী এলিজাবেথ কলবার্ন এবং পাকিস্তানি নাগরিক আলি তৌকির শেখ— এই তিনজনের মধ্যে গোপন যোগাযোগ এবং ষড়যন্ত্র রয়েছে, যার প্রভাব ভারতের সার্বভৌমত্ব ও উন্নয়নে নেতিবাচক।
নিম্নলিখিত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন তিনি—
- এসআইটি রিপোর্ট ‘একটি চক্র’ বা cartel চিহ্নিত করেছে যাদের বিরুদ্ধে ভারতবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।
- ‘গগৈ পরিবারের পাকিস্তান ভ্রমণ’ সহ বেশ কিছু ভিসা ও চলাচল সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন, এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিস্তর আলোচনা চলছে।
- মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, কংগ্রেস ও গগৈ এসব ভাবে রাজ্যের উন্নয়ন ও ভারতের স্থিতিতে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।
- সরকারি বিবৃতিতে দাবি, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভ্রমণ অনুমোদন, এমনকি (তথাকথিত) সেনাসহযোগিতারও তথ্য রয়েছে।
তিনি বারবার বলেছেন, এ ধরনের ‘সাজানো চক্রান্ত’ আসাম ও দেশের স্বার্থে বড় বাধা। বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই প্রতিবেদনটি।
গৌরব গগৈ: “সব ভিত্তিহীন, বিজেপি সরকার দুর্নীতি আড়াল করছে”
অন্যদিকে, গৌরব গগৈ তীব্র ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নাকচ করেছেন।
তাঁর কথায়:
- এসআইটি রিপোর্টকে “একটি সিনেমার গল্প” আখ্যা দিয়েছেন; একে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
- গগৈ দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজের এবং বিজেপি সরকারের দুর্নীতির খবর চাপা দিতেই তার ও পরিবারের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন।
- তার স্ত্রী এলিজাবেথ কলবার্ন কিংবা পরিবারের বিদেশি যাতায়াত কোনো গোপন বা বেআইনি নয়; সব তথ্য নথিভুক্ত।
- ভোটের আগে সরকারি ‘স্টান্ট’ বলে ঘটনাটিকে উড়িয়ে দেন তিনি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ এসব নিরর্থক কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির বদলে সত্য ও উন্নয়নমূলক রাজনীতিতেই আস্থা রাখবে। গগৈয়ের যাবতীয় পাল্টা বক্তব্য জানতে পারেন এখান থেকে।
আসামের মাঠের রাজনীতি ও জনগণের প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্ক রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে ঠিকই, কিন্তু বন্যা, ত্রাণ, ও উন্নয়ন প্রশ্নে সাধারণ মানুষ বরং দ্বিধায় পড়েছে— কারা সত্যি কথা বলছে? কারা প্রধানমন্ত্রী সফরের উন্নয়ন কর্মসূচি ও বন্যা-কবলিত মানুষের কথা তুলে ধরছে, আর কারা কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত?
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই পক্ষেরই তীব্র প্রচার চলছে।
- অনেকেই ভাবছেন, এই বিতর্ক আসল সমস্যাগুলো থেকে নজর ঘুরিয়ে দিচ্ছে।
- কিশোর-তরুণদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উৎসাহ, আবার অনেকের মধ্যে বিরক্তি— “পানি বাড়ছে ঘরে, রাজনীতি চলছে টিভিতে!”
তবু রাজনীতির ময়দানে এই কোন্দল এখন অন্যতম চর্চিত ইস্যু এবং নির্বাচনী বছর ঘনিয়ে আসায় এই উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই মনে হয়।
বিতর্কের সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন (সারণি)
| তারিখ | প্রধান ঘটনা |
|---|---|
| ১০ সেপ্টেম্বর | SIT রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা |
| ১১-১২ সেপ্টেম্বর | মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ ও টুইট |
| ১১ সেপ্টেম্বর | গগৈয়ের পাল্টা বিবৃতি ও সাংবাদিক বৈঠক |
| ১৪-১৫ সেপ্টেম্বর | বিতর্ক আরও তীব্র; সরকারি তদন্ত জোরাল |
শেষ কথা (এই অংশে উপসংহার নয়, বরং পাঠকের মানে স্বাভাবিক সংযোগ):
রাজনীতির মাঠে বড় ঝড় উঠেছে, কিন্তু বাস্তব সমস্যার সামনে এসব কতটা জরুরি— সে প্রশ্ন ছড়িয়ে আছে চা দোকান থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সবখানে। বিতর্কের গভীরতাটা যেমনই হোক, বাস্তব সংকট আর আছে; রাজনীতি কিংবা দুর্যোগ—দুটির টানাপোড়েনেই আসামের মানুষ এখন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও আসামের সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
আসামে আজ বন্যা ও ভূমিধ্বস সবচেয়ে আলোচিত হলেও, গত কয়েকদিনে দুটি বিশেষ ঘটনা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক আলোচনায় নতুন মাত্রা এনেছে। একদিকে ছিল আকস্মিক ভূমিকম্পের দোলা, অন্যদিকে এসেছে মানবাধিকার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ। এই অংশে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হচ্ছে সেই দুই ঘটনা, যা রাজ্যের জনজীবনে আতঙ্ক, প্রশ্ন এবং সচেতনতা—সবকিছুর সাথে সরাসরি জড়িয়ে গেছে।
আকস্মিক ভূমিকম্প: আতঙ্কে কাঁপল অসম
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিকেলের দিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম ফের কেঁপে ওঠে।
- কেন্দ্রীয় আসামের উদালগুড়ি জেলাতে রিখটার স্কেলে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
- আশপাশের জেলা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতেও কম্পন টেরা গেছে।
- সৌভাগ্য, বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর আসেনি; তবে আতঙ্কে উঠে পড়েছিল হাজারো মানুষ, বহু জায়গায় ক্ষুদ্র ফাটল দেখা গেছে, ঠেলা পড়ে কিছু বাড়ি থেকে বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন।
এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর মধ্য-আসামে ২.৬ মাত্রার একটি ছোটো ভূমিকম্প হয়েছিল, সেখানেও কোনও বড় ক্ষতির খবর মেলেনি।
আসামের মতো ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে একসঙ্গে বন্যা ও কম্পনের শঙ্কা প্রশাসন ও মানুষের উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে। বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন Assam jolted by 2.6-magnitude quake এবং 5.8 magnitude earthquake strikes Assam’s Udalguri এই প্রতিবেদনগুলো।
মানবাধিকার কমিশনের নোটিশ: সাংবাদিক নিগ্রহ নিয়ে উদ্বেগ
আরেকটি ঘটনায় গোটা আসাম তথা দেশের গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ একসঙ্গে ক্ষুব্ধ হয়েছে।
- ৭ সেপ্টেম্বর রাতে লুমডিং অঞ্চলে সাংবাদিক সুজিত সরকার (হারী) নির্মম হামলার শিকার হন। প্রায় ২০ জন দুর্বৃত্ত তাঁকে মারধরের পর গহনাগাটি, মোবাইল, মোটরবাইক ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ।
- পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁকে উদ্ধার করে লুমডিং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করে।
- পূর্ণ তদন্তের জন্য মামলা (FIR) নেওয়া হয়েছে এবং দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
এই ঘটনা সামনে আসার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (NHRC) স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নোটিশ জারি করেছে।
- রাজ্যের পুলিশ প্রধানকে কেন এমন ঘটনা ঘটল, কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
- অঞ্চলটির সাংবাদিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
কমিশন পরিষ্কার বলেছে, এ ঘটনা সত্যি হলে তা মানুষের অধিকার এবং গণতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত।
বিস্তারিত জানতে পারেন NHRC notice to State police chief over ‘assault’ on media person in Assam এই প্রতিবেদনে।
সংক্ষেপে সাম্প্রতিক ঘটনাপুঞ্জ (টেবিল)
| তারিখ | ঘটনা |
|---|---|
| ১ সেপ্টেম্বর | ২.৬ মাত্রার ভূমিকম্প, মধ্য-আসাম |
| ৭ সেপ্টেম্বর | সাংবাদিক নিগ্রহ, লুমডিং |
| ১৩ সেপ্টেম্বর | NHRC-এর নোটিশ, রাজ্য পুলিশের কাছে |
| ১৪ সেপ্টেম্বর | ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, উদালগুড়ি |
এই ঘটনাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, আসামে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে বা বড় রাজনৈতিক উত্তাপে মিশে আরও কয়েকটি বড় ঘটনা অচিরেই জনসমাজে আলোড়ন তোলে। সাংবাদিক নিরাপত্তা কিংবা হঠাৎ ভূকম্পন—রাজ্যের মানুষ এখন একহাত দুর্যোগ, অন্যহাতে বাস্তবতা ও আশঙ্কার ভার বইছে।
উপসংহার
আসামের আজকের প্রধান ঘটনা—হঠাৎ দ্বিতীয় দফার ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধ্বস—আবারও দেখিয়ে দিল, প্রকৃতির পাশাপাশি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ঘাটতিও বিপদের কারণ। ছয়টি জেলার ২৭৪টি গ্রাম ডুবে গেছে, একদিকে গোলাঘাট, বিস্বনাথ, সোনিতপুরের মতো এলাকায় নদী ভাঙন আর অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছে হাজারো পরিবার, অন্যদিকে গৌহাটির শহুরে জলাবদ্ধতা যেন আধুনিক সমস্যার প্রতিচ্ছবি।
ক্ষুদ্র কৃষক, শ্রমজীবী, ছাত্র, পশুপালক—সবাই রোজকার সংকটে পড়েছেন। প্রশাসনের তৎপরতায় অনেকের জীবন বাঁচলেও, ফসলি জমি ও গবাদিপশুর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সহজ হবে না।
পরবর্তী সময়ে শুধু উদ্ধার বা ত্রাণ নয়, টেকসই নদী বাঁধ, আধুনিক ড্রেনেজ, সবার জন্য প্রস্তুতি মহড়া ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। শহর ও গ্রামের বন্যা সমস্যা এক নয়—দুটির জন্য আলাদা, কারিগরি সমাধান দরকার।
বন্যা ও দুর্যোগের খবরে মূল্যবান জীবন ও সময় হারায় অগণিত মানুষ। দায়িত্ববোধ, সদিচ্ছা ও আধুনিক প্রযুক্তি যদি একসঙ্গে কাজে লাগে, ভবিষ্যতের আসাম হয়তো এই ঘুর্নিপাক থেকে বেরিয়ে সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার পথে এগোতে পারবে।
পাঠকদের ধন্যবাদ, আপনার অভিমত বা অভিজ্ঞতা থাকলে নিচে জানাতে ভুলবেন না—সবচেয়ে জরুরি, সংকটে পাশে থাকুন এবং সতর্ক থাকুন।
