আসামের ছয় জেলায় বিশ্বব্যাংক সমর্থিত তাজা পানির চিংড়ি চাষ ২০২৫: কৃষকদের আয় বেড়েছে
Estimated reading time: 1 minutes
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আসামের ছয় জেলায় freshwater চিংড়ি চাষ প্রকল্প কৃষকদের আয় বাড়াচ্ছে (বিশ্বব্যাংক সমর্থিত উদ্যোগ)
আসামে কৃষকদের আয় বাড়াতে বিশাল সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংকের সমর্থিত freshwater চিংড়ি চাষ প্রকল্পটি। ছয়টি জেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষকরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি ও মাছ মিশ্রিত চাষ কর্মসূচি নিয়ে আয় বাড়াচ্ছেন।
এই প্রকল্প শুধু আয় বাড়াতেই থেমে থাকে না; এটি চাষাবাদের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে, উন্নত জাতের চিংড়ি প্রয়োগ এবং আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ প্রযুক্তি শেখায়। ফলে, কৃষকেরা কম ঝুঁকিতে বেশি লাভের সম্ভাবনা পাচ্ছেন। আসামের এই উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতিকে দৃঢ় করতে এবং দৃষ্টিকোণ বদলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ভিডিও লিংক দেখুন: Giant river prawns prove their worth in Assam
তাজা পানির চিংড়ি প্রকল্পের পটভূমি ও কার্যক্রম
আসামে তাজা পানির চিংড়ি চাষ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, যা কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্প শুধুমাত্র লাভজনক নয়, বরং সমন্বিত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ার মাধ্যমে সুস্থ পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক। আসুন, এই প্রকল্পের রাজনৈতিক, আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা: বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়ন এবং APART ও SWIFT প্রকল্পগুলির ভূমিকা
তাজা পানির চিংড়ি প্রকল্পে রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থা: বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB)। এই অর্থায়নের মাধ্যমে ছয়টি জেলার কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিংড়ি চাষে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
বিশেষ করে, APART (Assam Prawn and Aquaculture Resilience Technology) এবং SWIFT (Sustainable Wetland and Integrated Fisheries Transformation) প্রকল্প দুটি এই উদ্যোগকে কার্যকরী করেছে। APART প্রকল্প চিংড়ি ও পুকুর মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি উন্নত করতে কাজ করছে, যা কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ও ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করছে। অন্যদিকে, SWIFT প্রকল্প পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় ঝিল ও জলাশয়গুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্থানীয় সরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে একটি কার্যকর অর্থনৈতিক ও পরিবেশবান্ধব মডেল সফলভাবে বিকাশ পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সমর্থনে এই প্রকল্পটিতে পোল্ট্রি, কৃষি ও মৎসচাষের সংমিশ্রণে একটি সুস্থ অর্থনৈতিক চক্র তৈরি হচ্ছে, যা আসামের কৃষক সমাজের জীবনমান উন্নত করছে। বিশ্বব্যাংক সমর্থিত প্রকল্পের বিস্তারিত দেখতে পারেন এখানে।
প্রযুক্তিগত দিক: জলজ প্রকৃতিতে তাজা পানির চিংড়ির বাস্তুতন্ত্র, CIFA-GI উন্নত জাতের বৈশিষ্ট্য এবং বৈজ্ঞানিক চিংড়ি পালন পদ্ধতি
তাজা পানির চিংড়ি প্রকল্পে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মূল চালিকা শক্তি। চিংড়ি চাষের জন্য জলজ পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের সঠিক জ্ঞানে ফলপ্রসূ উৎপাদন সম্ভব। এখানে CIFA-GI (Central Institute of Freshwater Aquaculture – Giant Indian) সর্বাধুনিক এবং রোগ প্রতিরোধী উন্নত জাতের চিংড়ি ব্যবহার করা হয়, যা যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি।
চিংড়ির জন্য সুগভীর, অক্সিজেনযুক্ত জল, নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জল পরিশোধন, নিয়মিত জল পরীক্ষা এবং রোগ সনাক্তকরণ কার্যক্রম চালানো হয়। এছাড়া, চিংড়ির একক চাষের পাশাপাশি মাছ-চিংড়ি সমন্বিত চাষে অধিক লাভ হয়, কারণ এটি জলব্যবস্থাপনা ও খাদ্য ব্যবহারে সমন্বয় সাধন করে।
উন্নত জাতের চিংড়ির দ্রুত বৃদ্ধি ও উচ্চ উৎপাদনশীলতা কৃষকদের জন্য স্থায়ী আয়ের উৎস তৈরি করেছে। পারস্পরিক সহযোগীতা, টেকসই জল ব্যবস্থাপনা, এবং আধুনিক সৌরশক্তির ব্যবহার যেমন নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তেমনি প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ভরসার কারণও তৈরি করেছে। এইভাবে, প্রকল্পটি শুধুমাত্র চিংড়ি উৎপাদনেই নয়, একদিকে পরিবেশ সংরক্ষণে এবং অন্যদিকে কৃষকদের জীবিকা উন্নয়নে কার্যকর হয়েছে। CIFA-এর উন্নত জৈব প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও পড়ুন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে আসামের গ্রামীণ এলাকায় চিংড়ি চাষে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সফলতা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কৃষকরা এখন বিশ্বাসের সঙ্গে কাঁচামাল উৎপাদনে আত্মবিশ্বাসী, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও অনুপ্রেরণার উৎস।

কৃষকদের আয় ও উৎপাদনশীলতায় প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব
আসামের ছয় জেলায় বিশ্বব্যাংক সমর্থিত তাজা পানির চিংড়ি চাষ প্রকল্প কৃষকদের আয় ও উৎপাদনশীলতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছে। এই প্রকল্পের সাফল্য কৃষকদের জীবিকা উন্নয়নে এবং অঞ্চলটির জলজ সম্পদ সচল রাখতে সহায়ক হয়ছে। প্রকল্পে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের চিংড়ির ব্যবহার কৃষকদের আয় বাড়িয়েছে এবং উৎপাদনের মানে বিরাট পার্থক্য এনেছে।
প্রথম পর্যায়ের ফলাফল: ১৪২.৪৪ হেক্টর এলাকায় প্রাপ্ত পাউন ও কার্প মাছের উৎপাদন, প্রকল্প খরচ এবং কৃষকের মোট লাভ তুলে ধরুন
প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১৪২.৪৪ হেক্টর এলাকায় পাউন এবং কার্প মাছের সমন্বিত চাষ চালানো হয়। এই পাইলট পর্যায়ে মোট উৎপাদন ছিল:
- ৭৭.৮৭ মেট্রিক টন তাজা পানির চিংড়ি (পাউন)
- ৬৭৫.৭ মেট্রিক টন কার্প মাছ
উৎপাদিত চিংড়ি ও কার্প মাছের বাজার মূল্য ছিল যথাক্রমে প্রায় ৩.৮৯ কোটি এবং ১০.১৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২.৮৫ কোটি টাকা। ফলস্বরূপ কৃষকদের মনোযোগপ্রাপ্ত লাভের পরিমাণ ছিল ১১.১৮ কোটি টাকা।
এটি প্রমাণ করে, আধুনিক চাষ পদ্ধতি এবং উন্নত জাতের পাউনের ব্যবহার কৃষকদের আয় দ্রুত বাড়াতে সক্ষম। উৎপাদনের এই পরিমাণ অর্থনৈতিক দিক থেকে কৃষিজীবীদের জন্য এক বড় ইতিবাচক শট দেয়, যা স্থানীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করে।
বিস্তৃত ও দ্বিতীয় পর্যায়: ৪৬৪ নতুন কৃষকের অংশগ্রহণ, নবীন জেলা ও আয় বৃদ্ধির বিবরণ প্রদান করুন
প্রথম ধাপের সাফল্যের পর প্রকল্পটি বিস্তৃত হয়ে ৪৬৪ নতুন কৃষক যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭৬ জন নারী কৃষকই আছেন, যারা নতুন করে চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন। নবীন জেলা উদালগুড়ি ও বাকসা সহ ছয়টির বাইরে আরও জেলা যুক্ত হয়েছে। নতুন পর্যায়ের উৎপাদন এবং আয়ের বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:
- চিংড়ি উৎপাদন: ৮৩.১৬ মেট্রিক টন
- কার্প মাছ উৎপাদন: ৬৯৪.৩৭ মেট্রিক টন
নতুন পর্যায়ে উৎপাদিত সামগ্রীর combined মূল্য হয়েছে ১৪.৬২ কোটি টাকা। এবং খরচ প্রায় ৩.৮ কোটি টাকা হওয়ার পর কৃষকদের আয় হয়েছে ১০.৮২ কোটি টাকা। এতে স্পষ্ট যে, নতুন কৃষকরা সফলভাবে প্রকল্পটিতে অংশগ্রহণ করে লাভবান হচ্ছেন।
এই ধাপে ব্যবহৃত উন্নত জাতের পাউন (Macrobrachium rosenbergii) গড়ে ১০ মাসে ৮০ গ্রাম ওজন পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা আগের তুলনায় বেশ ভালো ফলাফল। এই জাতের পাউন কৃষকদের আয়ের ধারাকে শক্তিশালী করতে বড় ভূমিকা রাখছে।
প্রকল্পের এই ব্যাপ্তি বৃদ্ধির ফলে কৃষকদের মধ্যে আয় ও উৎপাদনশীলতার অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে, যা আসামের জলজ ইকোনমির জন্য দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক প্রমাণ হবে। প্রকল্পটি কৃষকদের জীবিকা পরিবর্তনে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
এই প্রকল্প সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন আসাম ট্রিবিউনের রিপোর্টে।
চিংড়ি চাষের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ
আসামের তাজা পানির চিংড়ি প্রকল্পটি শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধির উপায় নয়, এটি চিংড়ি চাষকে একটি সংগঠিত, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব রূপ দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে নার্সারি স্থাপন থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন পুরো প্রক্রিয়াটির প্রতি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে তারা আধুনিক প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যকর চিংড়ি উত্পাদনের কলাকৌশল সহজে আয়ত্ত করতে পারছেন। চলুন এই ক্ষেত্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক দেখতে যাই।
নার্সারি সৃষ্টির সম্ভাবনা
চিংড়ির নার্সারি সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষকরা কেবল উৎপাদনই করেন না, বরং চারা বিক্রয় করেও লাভ তুলেন। এই প্রকল্পের আওতায় আধুনিক নার্সারি প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রজেক্ট অংশগ্রহণকারীরা চিংড়ি ডিম থেকে ডিম্বাণু প্রজনন এবং লার্ভা থেকে ছোট ছোট পাউনে অর্থাৎ যুবক চিংড়ি তৈরি করছেন। নার্সারি প্রতিষ্ঠার ফলে চিংড়ির বাচ্চাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরবর্তীতে পুকুরে স্থানান্তর কার্য সম্পন্ন হয়।
এই পদ্ধতি লাভজনক কারণ:
- নিজস্ব চারা উৎপাদন: বাহির থেকে চারা আনার ঝঞ্ঝাট ও খরচ কমে যায়।
- উচ্চ মানের চারা: রোগমুক্ত, দ্রুতবর্ধনশীল প্রজাতির চারা তৈরি হয়।
- বাজারজাত পণ্য: নার্সারি থেকে চারা বিক্রয় করে ক্রমবর্ধমান আয়।
- স্থানীয় কর্মসংস্থান: নার্সারি প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় যুবকদের ও কৃষকদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি।
বিশ্বব্যাংক ও APART প্রকল্পের বিশেষ সহায়তায় এই নার্সারি উদ্যোগ দ্রুত লাভের পথে এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে চিংড়ি নার্সারিগুলো থেকে আয়ের উৎস তৈরি হয়েছে যেগুলো স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নার্সারি পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষকরা এখন নির্ভরযোগ্য ও সফলভাবে এই ব্যবসায় প্রবেশ করছেন।
বৈজ্ঞানিক চাষের পরিবেশগত উপকারিতা
পলিকালচারে চিংড়ি ও কার্প মাছের সংমিশ্রণ পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চিংড়ি এবং কার্প মাছ একসাথে চাষ করার ফলে জলাশয়ের সম্পদ ব্যবহার বেশি কার্যকর হয়। এর ফলে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায়:
- জল ও খাদ্যের সাশ্রয়: কার্প মাছের বর্জ্য চিংড়ির জন্য খাদ্যের উৎস, যা প্রাকৃতিক ভাবে খাদ্য চক্র বজায় রাখে এবং অতিরিক্ত খরচ কমায়।
- জলজ ভারসাম্য রক্ষা: একাধিক প্রজাতির ম১১িশ্রণের কারণে জলাশয়ের পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে, যা জলদূষণ কমায় এবং জলজ জীব বৈচিত্র বৃদ্ধি করে।
- জলাশয়ের স্বাস্থ্য উন্নতি: কার্প মাছ ডাঙা থেকে খাবারের অবশিষ্টাংশ কমিয়ে দিয়ে পানির মান ভালো রাখে, যা চিংড়ির উন্নত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
- উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: পলিকালচার পদ্ধতিতে একক প্রজাতির চাষের থেকে উৎপাদন ও লাভ বৃদ্ধি পায়, ফলে কৃষকরা কম জমি ব্যবহার করে বেশি দামে মাছ ও চিংড়ি উৎপাদন করতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম থাকে এবং জমি, জলাশয় ও খাবারের সঠিক ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এটি সাহায্য করে জলজ পরিবেশকে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষিত রাখতে, যা প্রকৃতির সঙ্গে কৃষকদের সম্পৃক্ততা বাড়ায়।
বৈজ্ঞানিক চিংড়ি চাষের পরিবেশগত ও আর্থিক সুফল সম্পর্কে আরও পড়তে চাইলে এখানে বিস্তারিত জানতে পারেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রাজ্যের স্কেলিং সম্ভাবনা
আসামের তাজা পানির চিংড়ি প্রকল্প ইতিমধ্যেই স্থানীয় অর্থনীতিতে ও কৃষকদের আয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এর সফলতা ও ইতিবাচক প্রভাব ভবিষ্যতে এর বিস্তার ও ব্যাপ্তি আরও বাড়ানোর জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। প্রকল্প ব্যবহার করেছে আধুনিক প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার সহায়তা, এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা, যা মূলত একটি টেকসই ও ফলপ্রসূ মডেল তৈরিতে সাহায্য করেছে।
এই প্রকল্পের পরিসর ছয় জেলায় থেকে বেড়ে আরো নতুন অঞ্চলে ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে যেমন আধুনিক প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের পাউনের জাত ব্যবহার, পাশাপাশি নার্সারি উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্য ও সামাজিক সংস্কৃতির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থার সমর্থনে রাজ্য আরও বৃহৎ পরিসরে পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক চিংড়ি চাষের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে নারীদের সম্পৃক্ততা ও ক্ষমতায়নের জোর দিয়ে, গ্রামের নারীরা অর্থনীতিতে স্বাতন্ত্র্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। এই প্রকল্প সফল হলে বেকারত্ব কমবেই, নারী নেতৃত্বে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, আর স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গজব বয়ে আসবে।
নারী ক্ষমতায়ন ও সামাজিক প্রভাব
এই চিংড়ি প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো নারী ক্ষমতায়ন। গ্রামের অগণিত নারীরা এখন আর শুধু ঘরের কাজের জন্য আবদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন। তাদের আয়ের উৎস বৃদ্ধি ও আত্মসম্মান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবস্থানও এগিয়ে এসেছে।
- নারীরা চিংড়ি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই পুকুর প্রস্তুত, চারা পালনে দক্ষ হয়ে উঠেছেন।
- তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে।
- যৌথ উদ্যোগ ও মহিলা সমিতি গঠন করে তারা বাজারজাতকরণ ও বিক্রেতা হিসেবে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছেন।
- সামাজিক নিয়ম-নীতি ও পুরুষ নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাদের দৃষ্টি খুলে গেছে, যা সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনের সূচনা।
গ্রামীণ নারীরা এখন আর শুধু সহায়ক নয়, ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছেন। তাদের অংশগ্রহণ কৃষি-জলজ সম্পদের স্থায়ী ব্যবস্থাপনাকেও শক্তিশালী করছে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতা ও পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক।
বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা যখন নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেয়, তখন প্রকল্পটির সামাজিক প্রভাব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। গ্রামীণ নারীরা যেমন নিজস্ব আয় বাড়াচ্ছেন, তেমনি পুরুষদের সাথে মিলে সামগ্রিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছেন।
আসামের গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নতিতে এই প্রকল্পের অবদান সম্পর্কে আরও জানতে পারেন বিশ্বব্যাংকের প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন থেকে।
এই প্রকল্পের সফলতা ও সামাজিক পরিবর্তন আসামের জলকৃষিতে নারীর গুরুত্ব আরও বাড়াচ্ছে, যা পরবর্তীতে রাজ্যের শুদ্ধ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলবে।
উপসংহার
বিশ্বব্যাংকের সমর্থনে আসামের ছয় জেলায় তাজা পানির চিংড়ি প্রকল্প কৃষকদের আয় বাড়িয়েছে এবং বাস্তবিক অর্থে তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে। উন্নত জাতের চিংড়ি, বৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতি, ও কৃষক প্রশিক্ষণ মিলিয়ে এই প্রকল্প কৃষকদের জন্য নতুন আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। একই সাথে, পরিবেশ বান্ধব পলিকালচার পদ্ধতি গ্রহণের ফলে জলাশয় পরিচালনায় সাশ্রয়ী ও টেকসই ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।
এই উদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক নয়, নারীদের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে এই মডেল আরও বিস্তৃত করলে আসামের গ্রামীণ অর্থনীতিকে দৃঢ়তা দেবে এবং জলজ সম্পদ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি ফল বয়ে আনবে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই কৃষিকাজের যুগে এই প্রকল্প থেকে শেখার আছে, কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ও সামাজ প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি ও জলজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সম্ভব। আসুন, আমরা সকলে এই সফল উদাহরণ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক চাষাবাদের দিকে এগিয়ে যাই।
আপনার মতামত জানান, বা স্থানীয় কৃষকদের প্রয়োজনে এই ধরনের প্রকল্প কিভাবে আরও সমর্থন করা যায় সে বিষয়ে কথা বলুন।
