অসম বিশ্ববিদ্যালয় বনাম NIT শিলচর: NIRF 2025 র‍্যাঙ্কিং, জন-ধারণা ও ভবিষ্যতের সংকট বিশ্লেষণ

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি ও NIT শিলচরের পতন (NIRF 2025: ranking, perception, ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ)

অসম বিশ্ববিদ্যালয় এবার NIRF 2025 র‍্যাঙ্কিং-এ সবার সামনে উঠে এসেছে, যেখানে NIT শিলচর পিছিয়ে পড়েছে। এই পরিবর্তনের পেছনে আছে প্রতিষ্ঠানের মান, গবেষণা ও শিক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে জন-ধারণা। আজকের দিনে শুধু ভালো ফলাফল নয়, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিই অনেক কিছু ঠিক করে দেয়। তাই র‍্যাঙ্কিং-এর এই ওঠা-নামা এক দিক দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দেয়, উচ্চশিক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা আর ভাবমূর্তি কতটা জরুরি।

আরও জানতে: https://www.youtube.com/watch?v=iaqd6jcW6QM

NIRF 2025: মূল র‍্যাঙ্কিং ও বিশ্লেষণ

NIRF ২০২৫ এ ভারতের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে মূল্যায়িত হয়েছে। অসম বিশ্ববিদ্যালয় চমকপ্রদ অগ্রগতি করেছে, আর NIT শিলচর কিছুটা নীচে নেমে গেছে। শুধু নম্বরই নয়, মানুষের ভেতরের ভাবনা ও প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতার উপরেও এই র‍্যাঙ্ক পরিবর্তন নির্ভর করে। এবার একটু বিশ্লেষণ করা যাক, কীভাবে র‍্যাঙ্ক নির্ধারিত হয়, আর কী কী নতুন বিষয় এসেছে।

র‍্যাঙ্কিং কাঠামো ও পাঁচটি মূল প্যারামিটার

NIRF-এ র‍্যাঙ্কিং নির্ধারণের পদ্ধতি বেশ সহজ এবং নির্দিষ্ট। পাঁচটি স্তম্ভে (প্যারামিটার) ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানগুলোর পারফরম্যান্স বিচার হয়।

এগুলো হলো:

  • শিক্ষাদান, শিক্ষা ও রিসোর্স (Teaching, Learning & Resources, TLR)
  • গবেষণা এবং পেশাগত চর্চা (Research and Professional Practice, RPC)
  • স্নাতকফলাফল (Graduation Outcomes, GO)
  • অন্তর্ভুক্তি ও যোগাযোগ (Outreach & Inclusivity, OI)
  • জন-ধারণা (Perception)

প্রতিটি প্যারামিটারের ওপর নির্দিষ্ট ওজন রাখা হয়, যেমন TLR ও RPC-তে সর্বোচ্চ স্কোর। শুধুমাত্র নম্বর নয়, শিক্ষার বৈচিত্র্য, শিক্ষকদের গুণাগুণ, গবেষণার মান, সমাজে প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, এসবই র‍্যাঙ্ক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।

যাঁরা বিস্তারিত জানতে চান, তারা NIRF 2025 সম্পূর্ণ র‍্যাঙ্কিং তালিকা ও প্যারামিটারের তথ্য দেখতে পারেন।

অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও নতুন বিভাগ

এবছর র‍্যাঙ্কিংয়ে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় ৬০০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান NIRF ২০২৫ এ অংশ নিয়েছে, যা বিগত বছরের তুলনায় বড় বৃদ্ধি। এই বছর “ডিপার্টমেন্ট অব ডিস্টেন্স এডুকেশন” ও কিছু ভার্চুয়াল ক্লাসের বিভাগও যুক্ত হয়েছে।

শীর্ষ বিভাগগুলোর মধ্যে:

  • ইঞ্জিনিয়ারিং
  • ফার্মেসি
  • ম্যানেজমেন্ট
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক মূল্যায়ন (Overall)
  • লাইফ সাইন্সেস, আইন, এবং মেডিকেল

নতুন বিভাগ বা ক্যাটেগরি যুক্ত হওয়ায় বেশি শিক্ষার্থী ও গবেষক উপকৃত হবেন। এবারের তালিকায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরো বেশ কিছু বৈচিত্র্য এসেছে। Times of India-এর এই প্রতিবেদনে এ বছরের মূল দিকগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পাঁচটি মূল প্যারামিটারের ওজনে পরিবর্তন

আগের বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে কিছু প্যারামিটারের ওজনে বিচিত্রতা এসেছে। এবার “জন-ধারণা” প্যারামিটারকে আর একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি এখন বাস্তবিক ফলাফলের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

এবছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের র‍্যাঙ্কিংয়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, বেশি গবেষণাপ্রবণ প্রতিষ্ঠান, বা যেখানে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের হার বেশি, তাদের র‍্যাঙ্ক তুলনামূলকভাবে ভালো।

প্যারামিটার % ওজন
শিক্ষাদান (TLR) ৩০%
গবেষণা (RPC) ৩০%
স্নাতকফলাফল (GO) ২০%
অন্তর্ভুক্তি (OI) ১০%
জন-ধারণা (Perception) ১০%

এভাবে র‍্যাঙ্কিংয়ের পাঁচটি স্তম্ভ ব্যাখ্যা করলে বোঝা যায়, শুধু পরীক্ষার নম্বর নয়, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক শক্তিমত্তা কতটা তা-ই আসল।

অন্যদিকে, পুরো ভারত জুড়ে বিভিন্ন ধারার প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা তুলনা করার এটাই সবচেয়ে সন্তোষজনক সূচক। যাঁরা আরো বিশদ বিশ্লেষণ দেখতে চান, তারা এখানে বিস্তারিত পড়তে পারেন

অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাবর্তন ও অগ্রগতি

অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রাণবন্ত দৃশ্য ও ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা কার্যক্রমের একটি মুহূর্ত।
ছবি: AI দ্বারা তৈরি, যেখানে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও গবেষণা পরিবেশ দেখা যাচ্ছে

৬ বছর পর অসম বিশ্ববিদ্যালয় আবার ভারতের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ফিরেছে। NIRF ২০২৫-এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশজুড়ে ৯৭তম স্থানে আর ফার্মেসিতে ৭৬তম পজিশনে উঠে এসেছে। এটা শুধু খুশির খবর নয়, এলাকাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রচুর চ্যালেঞ্জ জয় করারও সাক্ষ্য। এই ধারাবাহিক অগ্রগতির পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে, যেগুলো এবার বিস্তারিত দেখি।

৬ বছরের ব্যবধানে প্রত্যাবর্তন: র‍্যাঙ্কিংয়ের পেছনের কাহিনী

অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গত কয়েক বছর বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। টানা ছয় বছর টপ-১০০ থেকে বাইরে থাকার পরে, ২০২৫ সালে তারা ৯৭ নম্বরে ফেরত এসেছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানত:

  • গবেষণায় পুনরুজ্জীবন: বিগত কয়েক বছরে গবেষণা সুবিন্যস্তভাবে বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা অনেক বেশি জার্নালে প্রকাশনা এবং কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন।
  • প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার মানোন্নয়ন: ক্লাসরুম শিক্ষার সাথে বাস্তবভিত্তিক কাজ, ডিজিটাল লার্নিং ও ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন জোরদার করা হয়েছে।
  • অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা: প্রশাসনিক সংস্কার এবং একাডেমিক সাপোর্ট সিস্টেম শক্তিশালী করা হয়েছে।
  • জব প্লেসমেন্টের হার বেড়ে গেছে, ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আস্থা বেড়েছে।

বিশদভাবে পড়তে আগ্রহী হলে Sentinel Assam এ প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন

ফার্মেসিতে বিস্ময়কর সাফল্য: ৭৬ নম্বর পজিশন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ এবার ৭৬ নম্বরে উঠে এসেছে, যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এর কারণ ছিল:

  • ল্যাব সুবিধা ও ফান্ডিং বাড়ানো
  • গুণগত গবেষণা, প্রকাশনা বাড়ানো ও ইন্ডাস্ট্রি প্রকল্পে অংশগ্রহণ
  • স্টুডেন্টদের হাতে-কলমে কাজ শেখার সুযোগ বড় পরিসরে তৈরি করা

এই বিভাগের কিছু গবেষণা, বিশেষ করে জীবন রক্ষাকারী ড্রাগ সংশ্লেষ (synthetic drug development), দেশলাই পেয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও।

ভাইস-চ্যান্সেলরের মন্তব্য ও জন-ধারণার পরিবর্তন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর রাজিব মোহন পান্ত এ বছরের ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন,
“এত বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবার টপ ১০০-তে থাকা রীতিমতো গর্বের ব্যাপার। আমাদের মত দুর্গম ও দূরবর্তী প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, কিন্তু একাগ্রতা ও টিমওয়ার্কই এই সাফল্য এনে দিয়েছে।”

তিনি বিশেষ জোর দিয়েছিলেন জন-ধারণা (Perception)-র ওপর। আগের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কিছুটা ঝামেলার মধ্যে ছিল, যার প্রভাব পড়েছে র‍্যাঙ্কিং-এও। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টি:

  • বহুমুখী উদ্যোগ ও কর্মসূচির জন্য মিডিয়াতে দৃষ্টিগোচর হয়েছে
  • উন্নত গবেষণা ও পড়াশোনায় স্বচ্ছতা দেখাতে পেরেছে
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক গড়তে পেরেছে, যার দরুন বাইরের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ ইতিবাচক হয়েছে

এই বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত আরো তথ্য Sentinel Assam এর এই আর্টিকেলে মিলবে

অগ্রগতির পিছনের মূল কারণ: গবেষণা, দৃশ্যমানতা, এবং ইতিবাচক পার্সেপশন

সংক্ষেপে বলে দিতে চাই, এবার অগ্রগতির পেছনে যে বিষয়গুলো বড় ভূমিকা রেখেছে:

  • গবেষণার মানোন্নয়ন ও অংশগ্রহণ
    শুধুমাত্র নম্বর নয়, পেটেন্ট, গবেষণা অনুদান এবং আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশন বেড়ে গেছে।
  • দৃশ্যমানতা ও যোগাযোগ
    ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভিটি, সামাজিক সংযোগ, নানা শাখায় মেধার উপস্থিতি, এবং অ্যালামনাইদের দেশের বাইরেও পরিচিতি তৈরি।
  • উন্নত জন-ধারণা
    মিডিয়া কভারেজ, সফল অ্যালামনাই, প্লেসমেন্ট সংখ্যা—সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি অনেকখানি পরিবর্তন হয়েছে।

নিচের টেবিলে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো, কোন কোন কাজেই এই অগ্রগতি এসেছে:

কারণ ঘটা পরিবর্তন
গবেষণা বেশি প্রকাশনা, কনফারেন্স যোগ
দৃশ্যমানতা মিডিয়ায় বেশি প্রচার
জন-ধারণা ইতিবাচক ফিডব্যাক ও যোগাযোগ
প্রশাসনিক স্বচ্ছতা দ্রুত সিদ্ধান্ত, ডিজিটাল ব্যবস্থা
ক্যারিয়ার প্লেসমেন্ট ও ইন্টার্নশিপে উন্নতি

অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রত্যাবর্তন আজ শুধু ক্যাম্পাসে নয়, সারা উত্তর-পূর্ব ভারতে শিক্ষার নতুন আশা দেখাচ্ছে। এই ফলাফল বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার আভাস দিচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীরাও অনুভব করবে।

NIT শিলচরের স্লিপ ও চ্যালেঞ্জ

NIRF 2025-এ NIT শিলচরের পারফরম্যান্স পরিবর্তনের গ্রাফিকাল উপস্থাপনা, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশের ইঙ্গিত
ছবি: AI দ্বারা তৈরি, যেখানে NIT শিলচর এবং অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের NIRF ২০২৫ র‍্যাঙ্কিংয়ের পরিবর্তন ধরা পড়েছে

এবারের NIRF ২০২৫-এ NIT শিলচর একটা নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। এক সময় যেখানে প্রতিষ্ঠানটি উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যতম গর্ব হিসেবে পরিচিত, সেখানে এবার তাদের র‍্যাঙ্কিংয়ে পতন কিছু প্রশ্ন তুলেছে। এবছর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৫০তম ও সামগ্রিকভাবে ৯৭তম অবস্থানে চলে এসেছে। প্রতিযোগিতার তীব্রতা শুধু বেড়েই যাচ্ছে, আগের যে স্থিরতা ছিল, তা যেন কেঁপে উঠেছে। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে চলার পথের বাঁকে নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে।

বিদ্যমান পারফরম্যান্স ও র‍্যাঙ্কিং বিশ্লেষণ

NIT শিলচর এখনও দেশের শীর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের দলে অটল।
তবে যেভাবে এ বছরের তুলনামূলক র‍্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে এসেছে, তা নিয়ে শিক্ষা মহলে আলোচনা তুঙ্গে। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ এবার ৫০তম স্থান পাওয়া—তুলনামূলকভাবে আগের বছর থেকে নিচে। সামগ্রিক (ওভারঅল) র‌্যাংক ৯৭, যেটা গতবারও লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না।

অন্যদিকে গবেষণা আর শিক্ষার মানে স্থিতিশীলতা থাকলেও, সর্বাধিক পিছিয়ে পড়েছে ‘জন-ধারণা’ তথা পার্সেপশন স্কোরে। নিচের টেবিলে সংক্ষেপে দেখুন—

বিভাগ ২০২৪ (র‍্যাঙ্ক) ২০২৫ (র‍্যাঙ্ক) বৃদ্ধি/কমেছে
ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০ ৫০ কমেছে (↓)
সামগ্রিক ৮৩ ৯৭ কমেছে (↓)

তুলনা করলে দেখা যায়, এতে কিছু ব্যক্তিগত ও বাহ্যিক কারণ জড়িত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের মতো শক্তিশালী গণ-মত বা ‘পার্সেপশন’ এবার আসেনি, অথচ অন্যান্য ক্যাম্পাসের উন্নত দৃশ্যমানতা ও কনটেন্ট সেই জায়গাটা দখল করেছে।

পতনের মূল কারণ: প্রতিযোগিতা, পার্সেপশন ও দৃশ্যমানতা

NIT শিলচরের পতনের পেছনে মূলত তিনটি কারণ উঠে এসেছে:

  • প্রতিযোগিতা বেড়েছে:
    ভারতের অনেক NIT সহ নতুন প্রজন্মের প্রাইভেট কলেজগুলোও গবেষণা ও প্লেসমেন্টে উন্নতি করেছে। ফলে শুধু পুরনো রেপুটেশন নয়, বাস্তব শক্তিমত্তা দিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে।
  • পার্সেপশন (Perception) স্কোর কম:
    জন-ধারণা এবার মাত্র ৯.৯২, যেখানে এটা তুলনামূলক অনেক পিছিয়ে। ক্যাম্পাসে মিডিয়া উপস্থিতি কম এবং অ্যালামনাই সংগঠনের আওয়াজ তুলনামূলক দুর্বল।
  • দৃশ্যমানতা এবং ইন্ডাস্ট্রি সংযোগ:
    বড় আটটি NIT-এর তুলনায় শিলচরের ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া লিঙ্কআপ ও চাকরি সংক্রান্ত ইভেন্টগুলো কম চোখে পড়ে। ফলে, শিক্ষার্থীদের পুরোনো প্লেসমেন্ট সুবিধা নতুন প্রতিপক্ষের কাছে হার মানছে।

এই কারণে কলেজটি শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বাইরের জনমানসে বিশ্বাস কিছুটা হারিয়েছে।

NIT ডিরেক্টরের বক্তব্য

এবারের ফলাফল দেখে NIT শিলচরের ডিরেক্টর স্পষ্ট স্বীকার করেছেন,
“এই ধরণের পতন আমাদের টিমকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। আমরা জানি, শুধু পড়াশোনা বা গবেষণা যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার, ক্যাম্পাস কালচার, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাইরের ধারণা—সবকিছুতেই বদল দরকার।”

তিনি বলেন,
“অনেক সময় আমরা শুধু একাডেমিক ও গবেষণার ফলাফলে ফোকাস করি, কিন্তু সমাজে নিজের অবস্থান দৃঢ় করাটা ভুলে যাই। এবার আমাদের অ্যালামনাই, ইন্ডাস্ট্রি পার্টনার, মিডিয়া এবং কমিউনিটিতে নিউ্যান্সড অ্যাপ্রোচ দরকার। শিক্ষার্থীদের জন্য আরও আধুনিক পরিকাঠামো, কর্মসংস্থান এবং ক্যাম্পাস ব্র্যান্ডিং-এ জোর দিতে হবে।”

নতুন যুগে টিকে থাকার জন্য NIT শিলচরের করণীয়

NIT শিলচরের সামনে এখন কিছু স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি, নিচের বিষয়ে এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে—

  • ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো, কনটেন্ট ও মিডিয়া প্রচার বৃদ্ধি করা
  • ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন, স্টার্ট-আপ ও প্লেসমেন্ট নেটওয়ার্ক মজবুত করা
  • ইউনিভার্সিটি ও কমিউনিটিতে ইতিবাচক গল্প গড়া ও প্রকাশ করা
  • নতুন নতুন প্রযুক্তি ও স্কিল-সেন্টার উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো

এটা একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড, সঠিক পদক্ষেপ নিলে NIT শিলচর ফের পুরোনো গৌরবে ফিরতে পারে।
আর যারা আরও বিস্তার জানতে চান, তারা এই বিশ্লেষণ প্রতিবেদন দেখুন

এই বাস্তবতা বুঝতে পারলেই পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আরও বাস্তব এবং শিক্ষার্থীবান্ধব।
NIT শিলচরের সামনের দিন নিয়ে কেউ হাল ছাড়েনি—চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস এখানেই।

জন-ধারণার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

NIRF 2025-এ দেখা যাচ্ছে, যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার জন্য ভালো ফলাফল দরকার—কিন্তু তার চাইতেও বেশি দরকার মানুষের মন জয় করা। এখনকার দিনে শিক্ষার মানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি, বা জন-ধারণা, সবাইকে টেনে আনে। কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন, সেটা কেবল গবেষণা বা শিক্ষক-ছাত্র সংখ্যায় মাপা যায় না। বাইরের মানুষ সেটি কোথায় ফেলেছে, চাকরিদাতা বা শিক্ষার্থী কেমন ভাবছে, তাতেই বদলে যায় স্কোরবোর্ড। এই অংশে, অসমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্স তুলে ধরা হল, যাতে রাজ্যের পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা পুরো ছবিটা স্পষ্টভাবে পান।

অসমের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্স: IIT গৌহাটি, গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় NIRF 2025-এ কেমন করেছে

NIRF 2025 অনুযায়ী, অসমের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফলাফল আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে। এই র‍্যাঙ্কে শুধু নাম নয়, বদল আসছে ভাবনাতেও—কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো এবার নিজেদের দৃশ্যমানতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করছে।

IIT গৌহাটি:
IIT গৌহাটি সবসময় দেশের প্রথম সারির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তালিকায়। ২০২৫ সালে তারা আবারও দেশের শীর্ষদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে, গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং বিশ্বজুড়ে ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন আরও মজবুত করেছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত উদ্যমে, প্রযুক্তি-ভিত্তিক নতুন প্রজেক্ট, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ও জোরালো প্লেসমেন্ট এই ইনস্টিটিউটকে আলাদা করেছে।

গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় (GU):
গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় এবার NIRF 2025-এ অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে—তারা দেশের ৩৩তম স্থানে আছে, যা পূর্বের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি। Times of India-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার মানোন্নয়ন, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা এবং অ্যালামনাই অ্যাক্টিভিটির কারণে তাদের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে।

অসম বিশ্ববিদ্যালয়:
অসম বিশ্ববিদ্যালয়, যাঁরা লেখার আগের অংশেই পড়েছেন, ৯৭-তম স্থানে ফিরেছে (স্কোর: ৪৭.২)। দীর্ঘ ছয় বছর পর এই প্রত্যাবর্তন, গবেষণার মানোন্নয়ন, প্লেসমেন্ট, এবং ‘জন-ধারণা’ প্যারামিটারয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধির ফসল।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠান:

  • তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় ৭৯তম স্থানে রয়েছে, রাজ্যের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে।
  • রাজ্যের অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও চলতি বছরে গবেষণা output, ছাত্রছাত্রীর অন্তর্ভুক্তি ও প্লেসমেন্টে জোর দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি স্কলারশিপ, ক্যাম্পাস ড্রাইভ, এবং সাবস্ক্রিপটিভ একাডেমিক টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
  • সবমিলিয়ে, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা নিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছে উত্তর-পূর্বাঞ্চল।

এগুলো প্রমাণ করে, শুধু নম্বর নয়, ‘perception’ বা জন-ধারণা ঠিক রাখতে পারলেই বাজি মেরে দেওয়া যায়। কে কী ভাবছে, তার উপর এই র‍্যাঙ্কিং বড় অংশে নির্ভর করছে। বিস্তারিত জানতে দেখা যেতে পারে NIRF 2025 পূর্ণ তালিকা ও এই বিশ্লেষণ প্রতিবেদন

বিশ্ববিদ্যালয় NIRF র‍্যাঙ্ক (Overall) মন্তব্য
IIT Guwahati Top 10 (বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে) টেক-রিসার্চ, প্লেসমেন্ট, আন্তর্জতিক যোগাযোগ
Gauhati University ৩৩ গবেষণা ও আলোকিত অ্যালামনাই
Tezpur University ৭৯ নবীন ইনোভেশন, আঞ্চলিক নেতৃত্ব
Assam University ৯৭ গবেষণা, প্লেসমেন্টে পুনরাগমন

তালিকায় এগিয়ে থাকা মানে এই নয়, শুধুই পয়েন্টের খেলা—মানুষ কিভাবে দেখছে সেটাই আসল। রাজ্যের সামগ্রিক উচ্চশিক্ষা তাই এখন শুধু নম্বরে আটকে নেই, বিশ্বাস আর গল্প বলার শক্তিতেই এগিয়ে যাচ্ছে।

জন-ধারণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: নেতৃত্বের বার্তা ও সরাসরি উদ্যোগ

NIRF 2025-এ প্রকাশ পেয়েছে, ‘জন-ধারণা’ প্যারামিটার এখন আর অবহেলার জিনিস নয়, বরং র‍্যাঙ্কিংয়ের টার্নিং পয়েন্ট। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের সম্পর্কে বাইরের মানুষের বিশ্বাস, চাকরিদাতাদের অনুভূতি, মিডিয়ায় তাদের উপস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগে দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়েই ‘পার্সেপশন’ তৈরি হয়।

নেতৃত্বের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট বার্তা:

  • অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বললেন, “আমরা জানি কেবল ফলাফল বা গবেষণার মান এখন আর যথেষ্ট নয়। মিডিয়া, অ্যালামনাই আর ইন্ডাস্ট্রি সংযোগ দিয়েই ফিরতে হবে মানুষজনের নজরে।”
  • NIT শিলচরের ডিরেক্টর সরলভাবে স্বীকার করেছেন, “ক্যাম্পাসের জীবন, শিক্ষকদের সক্রিয়তা আর বাইরের গল্পটাই এখন র‍্যাঙ্ক বাড়ানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন?
অভিজ্ঞদের মতে, এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নীরব হয়ে থাকলে চলবে না। সবার চোখের সামনে নিজের গল্প তুলে ধরতে হবে। শুধু পড়াশোনা নয়,

  • মিডিয়া উপস্থিতি (প্রেস কভারেজ, সোশ্যাল পোস্ট, ব্লগ বা ভিডিও)
  • অ্যালামনাই অ্যাক্টিভেশন (শিক্ষার্থীদের কাহিনি, মেন্টরশিপ)
  • ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন শক্তিশালী করা (ইন্টার্নশিপ, চাকরির ক্ষেত্র)
  • সমাজে অংশগ্রহণ (কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, ক্যাম্পাসে ওপেন ইভেন্ট)

নেতৃত্বের এই কৌশলগুলো কার্যকর রাখলে আগামীতে রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও গভীর হবে। তাতে উচ্চশিক্ষার মান যেমন উপরে উঠবে, সমাজও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আপন ভাববে।
তথ্যসূত্র ও বিশ্লেষণ দেখতে পারেন Times of India: IIT-G, GU shine in NIRF rankings এবং Indian Express: NIRF Rankings 2025 Live

পরিশেষে বলা যায়, জন-ধারণা অর্থ এক-একটা মানুষের মুখে পৌঁছে দেওয়া গল্প। ভবিষ্যতে যেই প্রতিষ্ঠান নিজেদের গল্প সঠিকভাবে বলবে, তারাই রাজ্যের শিক্ষার শীর্ষে টিকে থাকবে—এটাই এখনকার বাস্তবতা।

Conclusion

উচ্চশিক্ষার র‍্যাঙ্কিং একা নম্বরে ঝুলে নেই, বরং প্রতিষ্ঠানের মান, গবেষণা আর মানুষের বিশ্বাস—এই তিনের মিলিত রূপ। অসম বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়েছে কীভাবে নতুন মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব, যখন গবেষণা, ক্যাম্পাস জীবন আর জন-ধারণা সবদিক শক্তিশালী হয়। আবার, NIT শিলচরের পতন মনে করায়, কেবল ভালো শিক্ষা বা প্লেসমেন্ট থাকলেই চলছে না—বাইরের চোখে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি গড়াটাও সমান দরকার।

ভবিষ্যতের জন্য, অসম বিশ্ববিদ্যালয় ও NIT শিলচর যদি মিডিয়া, অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক, আর ইন্ডাস্ট্রি সংযোগ আরো বাড়ায়, তবে এই প্রতিযোগিতায় তারা আরও সামনে যেতে পারবে। শিক্ষার্থীদের গল্প ও ক্যাম্পাসের নতুন উদ্যোগ দেখিয়ে তুলতে হবে সকলের সামনে।

পাঠক, আপনার মূল্যবান মতামত ও অভিজ্ঞতা আমাদের পথ দেখাতে পারে। লেখাটি শেয়ার করুন, আর আপনার এলাকার প্রতিষ্ঠানের গল্প আমাদের জানান। শিক্ষার এই চলমান যাত্রায়, একসাথে পথ চলা শেখাটাই সবচেয়ে জরুরি।

Click here