ভারতের মোট ঋণ ২০২৫: আর্থিক প্রবণতা, বাজেট ও বিদেশি বিনিয়োগ বিশ্লেষণ

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ভারতের মোট ঋণ: ১৯৯৮ থেকে ২০২৫ সালের আর্থিক চিত্র ও ভবিষ্যতের পথ

১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের মোট ঋণের পরিমাণে ধারাবাহিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ পরিসংখ্যান প্রদান করে থাকে, যা সিইআইসি আন্তর্জাতিক মানে ইউএসডি রূপান্তর করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ২,০৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পৌঁছেছে, যা গত বছর থেকে প্রায় ১১.৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই ঋণের বৃদ্ধি শুধুমাত্র অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পরিচায়ক নয়, বরং দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো ও ভোক্তাদের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বাড়তি ঋণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তবে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দক্ষ মনিটরিং অপরিহার্য। একই সাথে, দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক ও ঋণ নীতিমালা এই ঋণের প্রবণতায় বড় ভূমিকা পালন করে।

এই সময়ের মধ্যে ঋণের বৃদ্ধি এবং ঘরোয়া ক্রেডিটের পরিমাণেও উল্লেখযোগ্য পাল্টা দেখা গেছে। যেমন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ঘরোয়া ক্রেডিট ছিল ৩,১৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১১.১% বেড়েছে। ঋণের এই প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করেছে, যা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝতে হবে।

ভিডিও রেফারেন্স: RBI Project Finance Directions 2025 Explained | New Rules for Banks, Infra Loans & India’s Economy

ভারতের মোট ঋণের পরিসংখ্যান ও প্রবণতা

ভারতের মোট ঋণের হিসাব এক বিশাল ও চলমান হিসাবের খাতা: এখানে শুধু সংখ্যা নয়, রয়েছে সময় ও অর্থনীতির গল্প। ১৯৯৮ থেকে শুরু করে ২০২৫ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ ২০৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক, ও অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সম্মিলনে এই ঋণ মূলত উৎপাদন, অবকাঠামো এবং খুচরা খাতে ভাগ হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, বার্ষিক ও ত্রৈমাসিক প্রবৃদ্ধির হার পরিবর্তিত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ পরিবেশের প্রতিটি সঞ্চালনে।

ঋণ এখানে শুধু হার্ভেস্টের মতো—যত ঘন খরা, তত বেশি মালমশলা লাগবে। অর্থাৎ, অর্থনৈতিক চাপ বাড়লে বিশেষত করোনা ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সময়ে ঋণ প্রবাহ বাড়ে। আবার নৈতিক প্রবৃদ্ধির সময়েও ঋণ নতুন নতুন খাতে পৌঁছয়, যেমন সরকারি প্রকল্প, SME (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প), এবং মানুষের ব্যক্তিগত চাহিদা।

তথ্যসূত্র ও মুদ্রা রূপান্তরের প্রক্রিয়া: সিইআইসি দ্বারা ইউএসডিতে রূপান্তর প্রক্রিয়া এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের বাজার বিনিময় হার কীভাবে প্রয়োগ হয় তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।

তথ্য প্রকাশে বিশুদ্ধতা ও বৈশ্বিক তুলনা বজায় রাখতে RBI ভারতের সবথেকে নির্ভরযোগ্য ডেটা সরবরাহকারী। দেশীয় মুদ্রায় (রুপিতে) প্রকাশিত এই তথ্য CEIC প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক মানে ইউএস ডলারে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তর দুইটি প্রধান ধাপে সম্পন্ন হয়:

  • প্রথম ধাপ: RBI থেকে ঋণের খাত অনুযায়ী পরিসংখ্যান জোগাড় (খুচরা, শিল্প, অবকাঠামো, সরকার, ব্যক্তি, MSME ইত্যাদি)।
  • দ্বিতীয় ধাপ: CEIC মার্কিন ডলারে রূপান্তর করতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের নির্ধারিত বা গড়-বাজার বিলি বিনিময় হার প্রয়োগ করে।

এই প্রক্রিয়ায়, ইতিহাসচিত্রের মতো দেশের ঋণপরিমাণ বিশ্বের সঙ্গে তুলনাযোগ্য হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ২০২৪ সালের শেষে ১ ভারতীয় রুপি দাঁড়ায় ০.০১২ মার্কিন ডলার সমান, তাহলে CEIC প্রাপ্ত রুপি পরিসংখ্যান সেই হারে ডলারে রূপান্তর করবে।

নিম্নলিখিত টেবিলে মূল প্রক্রিয়ার সহজ উপস্থাপনা:

ধাপ প্রকাশক মুদ্রা রূপান্তর হার
প্রথম RBI ইন্ডিয়ান রুপি (INR) N/A
দ্বিতীয় CEIC মার্কিন ডলার (USD) মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বাজার হার

বিনিময় হার বদলের ফলে হঠাৎই ঋণের ডলারের অঙ্ক বড় বা ছোট হয়ে যেতে পারে। তাই বার্ষিক ও ত্রৈমাসিক প্রবৃদ্ধির হার শুধু মূল অঙ্কের পরিবর্তন নয়, বরং এর পেছনে কাজ করে মুদ্রার ওঠানামা। উদাহরণ হিসেবে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল ১১.৪৫% (CEIC Total Loans Growth)—এটি বাজারে বিনিয়োগ, নতুন প্রকল্প ও ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধির ছাপ রাখে।

সবশেষে, এই তথ্য বিশ্লেষণের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে RBI’র সরকারি ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায় (RBI Data)। ধারাবাহিক রেকর্ড রাখা ও বিনিময় হারের ভিত্তিতে ডেটা রূপান্তর, দুটোই অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলনায় বড় ভূমিকা রাখে।

সরকারি আর্থিক পরিমাপ এবং ঋণের প্রভাব

সরকারি আর্থিক পরিমাপ মানে দেশের মোট বাজেট, কর আদায়ের পরিমাণ, ব্যয়, এবং ফিসকাল ঘাটতি, সব কিছুর এক আস্তিক ছবি। এই বিষয়গুলো দেশের মোট উন্নয়ন এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতার মূল স্তম্ভ। ঋণের বার্তা এখানে আরও স্পষ্ট—বাজেট ভারসাম্যের উপর চাপ বাড়লে ঋণ বেড়ে যায়, আবার যথাযথ কর সংগ্রহে ফিসকাল ঘাটতি কম থাকে। ভারতের ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বাজেট, কর রাজস্ব ও ভারসাম্যের ভেতরের চিত্র দেখে বোঝা যায় কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কেমন সামঞ্জস্য রাখতে হয়।

বাজেট ভারসাম্য ও কর রাজস্বের ভূমিকা: ত্রৈমাসিক ও মাসিক কর রাজস্ব, এবং সামগ্রিক বাজেট ভারসাম্যের চিত্র তুলে ধরুন যেসব তথ্য ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে পাওয়া গেছে

বর্তমান সময়ে ভারতের জন্য বাজেট ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। ফিসকাল ঘাটতি (fiscal deficit) জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত কমে ৪.৮% থেকে ২০২৫-২৬ আর্থিক বর্ষে লক্ষ্য করা হয়েছে ৪.৪% অবধি নামিয়ে আনার জন্য (Union Budget 2025-26 Analysis)। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকার রাজস্ব ও ব্যয়ের হিসাব কড়া করে দেখছে।

রাজস্ব ও ব্যয়ের সাম্প্রতিক তথ্য

২০২৫-২৬ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে, সরকারী মোট কর রাজস্ব ছিল ₹৫.৪ লাখ কোটি, যা বাজেটের অনুমানিত মূল্যের ১৯%। আগের বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ২১.৩%। এই সময়ে মোট সরকারি আয় ছিল ₹৯.৪১ লাখ কোটি এবং ব্যয় ছিল ₹১২.২২ লাখ কোটি, যা বাজেটের মোট ২৪.১% এর সমান।

মূল সূচক ও প্রবণতা

  • ফিসকাল ঘাটতি: জুন ২০২৫ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের ফিসকাল ঘাটতি পৌঁছেছে বাজেটের ১৭.৯% (₹২,৮০,৭৩২ কোটি)। গতি আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।
  • কর রাজস্বের পতন: ত্রৈমাসিক তুলনায় নেট ট্যাক্স রেভিনিউ (net tax revenue) কমেছে, যুক্ত হয়েছে রাজ্য সরকারের অবদান এবং রাজস্ব ভাগাভাগির কারণে।
  • ব্যয় বৃদ্ধি: মোট ব্যয় দ্রুত বেড়েছে। বড় অংশ গেছে সুদ পরিশোধ (₹৩.৮৬ লাখ কোটি) ও বিভিন্ন ভর্তুকিতে।
  • রাজস্ব প্রবৃদ্ধি: মোট কর রাজস্ব GDP-র শতকরা হিসাবে ডিসেম্বরে ২০২৪-এ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬.৮% (India Tax Revenue: % of GDP)।

বাজেট ভারসাম্যের লক্ষ্য ও পদক্ষেপ

২০২৫-২৬ সালে বাজেট মূলতঃ চারটি চালিকাশক্তিকে সামনে রেখেছে—কৃষি, MSME, বিনিয়োগ ও রপ্তানি। নতুন ইনকাম ট্যাক্স রেজিমে আরও বেশি জনগণের ওপর কর ছাড় এবং ফাইলিং-এর মেয়াদ বৃদ্ধি। বিভিন্ন কাঁচামালে শুল্ক ছাড়ও বাজেটের অংশ। সমস্ত কিছু মিলিয়ে সরকার আশা করছে সামগ্রিক আর্থিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং দেশীয় উৎপাদন, রপ্তানি ও বিনিয়োগে গতি আসবে।

নিম্নের টেবিলে সাম্প্রতিক কিছু মূল তথ্য—

সূচক ২০২৪-২৫ (Q1) ২০২৫-২৬ (Q1) ২০২৫-২৬ (পুরো বছর লক্ষ্যমাত্রা)
মোট আয় (₹ কোটি) ৮,৭৫,০০০ ৯,৪১,০০০ ৩৪,৯৬,৪০৯
নেট কর আদায় (₹ কোটি) ৫,৭৭,০০০ ৫,৪০,০০০ ২৮,৩৪,০৮৯
মোট ব্যয় (₹ কোটি) ৯,৭৭,০০০ ১২,২২,০০০ ৫০,৬৫,৩৪৫
ফিসকাল ঘাটতি ৮.৪% BE ১৭.৯% BE ৪.৪% GDP (₹১৫,৬৯,০০০ কোটি)

(তথ্যসূত্র: BUDGET AT A GLANCE 2025-2026, Fiscal deficit at 17.9% of full-year target in Q1: CGA data)

মূল পয়েন্ট—
ফিসকাল ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চললেও, ঋণ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এখন ভারতের অর্থনৈতিক স্টিয়ারিং-হুইল। রাজস্ব আদায়ে অনিশ্চয়তা, ব্যয়ের চাপ, এবং বাজেট ভারসাম্যের টানাপোড়েন দেশের সামগ্রিক ঋণ সংকট অথবা ব্যবস্থাপনার স্বাস্থ্য নির্ধারণ করছে।

আরও বিস্তারিত বার্ষিক ও ত্রৈমাসিক কর পরিসংখ্যান ও বাজেটের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ পড়তে পারবেন Union Budget 2025-26 AnalysisCEIC Tax Revenue: % of GDP, 1997 – 2025 এ।

বহির্বাণিজ্য এবং ঋণ: ভারতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের প্রভাব

ভারতের ঋণ পরিসংখ্যান ও ব্যবসার পরিবেশকে বোঝার জন্য বহির্বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগের ভূমিকা অপরিহার্য। আমদানি ও রপ্তানি, বিশেষত চিন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য, দেশের ঋণ ও আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) ও পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (FPI) এর প্রবাহ ভারতের ঋণ স্থিতির তাল মিলিয়ে চলে, যা দেশে বিনিয়োগ সুবিধে ও ধার নেওয়ার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণের সমীকরণ: বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (FPI) গুলি কিভাবে দেশের ঋণ স্থিতি প্রভাবিত করে তা স্পষ্ট করুন।

বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (FPI) দেশের ঋণ সীমার মধ্যে সুষমতা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। FDI অর্থনৈতিক মঞ্চে স্থায়ী বিনিয়োগ হিসেবে কাজ করে, যা নতুন অবকাঠামো, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং দেশের আয় বাড়িয়ে ঋণগ্রহণের ওপর চাপ কমায়। অন্যদিকে, FPI মূলত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ যা স্বল্পমেয়াদী প্রবাহ এবং দ্রুত ওঠানামা করে, যা অর্থনীতির ঋণ পরিচালনায় ঝুঁকি এনে দিতে পারে।

FDI-এর ঋণের ওপর প্রভাব:

  • FDI এনে দেয় স্বল্প সুদে বৈদেশিক মুদ্রা, যা বিদেশি ঋণের গুণগত মান উন্নত করে।
  • এটি দেশের ভৌত ও মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়ক, ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
  • প্রবৃদ্ধি বাড়লে অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বাড়ে, ফলে সার্বিক ঋণস্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে।

FPI-এর ঋণের ওপর প্রভাব:

  • FPI দ্রুত আসা-যাওয়া করে যা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি বাড়ায় এবং ঋণ মুল্যের ওঠানামা ত্বরান্বিত করে।
  • বাজার ওঠানামার কারণে ঋণের বাইরে ঝুঁকি বেড়ে যায়, বিশেষ করে সরব আর্থিক মুহূর্তে।
  • এটি অর্থনৈতিক প্রবাহের স্বল্প স্থায়িত্ব নির্দেশ করে, যা ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও, ভারতের FDI প্রবাহ ২০২৫ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে পৌঁছেছে, যা দেশের ঋণ অবস্থাকে সমর্থন করছে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হচ্ছে। এই ধরনের প্রবাহ ঋণ এবং বিনিয়োগের মাঝে এক সেতুবন্ধনের কাজ করছে।

বাণিজ্যিক ভারসাম্য এবং ঋণের মধ্যে সম্পর্ক

ভারত ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের ভারসাম্য তাৎপর্যপূর্ণ কারণ চিন থেকে ভারতের আমদানি অত্যন্ত বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাত্র ইউএসডি ১৪.৯ বিলিয়নের রপ্তানি থাকলেও আমদানি ছিল প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার, যার ফলে ভারতে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে (সূত্র)। এই ভারসাম্যহীনতা বিদেশি ঋণের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। কারণ আমদানির জন্য ভারতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে যায়, যা ঋণগ্রহণ বা বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া পূরণ কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও ভারত রপ্তানিতে কিছুটা সাফল্য পেলেও সামগ্রিক স্বল্প মেয়াদে ভারসাম্যহীনতা এবং বাণিজ্য ঘাটতি সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ভারতে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার (সূত্র)।

এই পার্থক্য ও জ্বালানি-খাতের বড় আমদানি ভারতে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং সরকারের বাজেট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিতে প্রভাব ফেলে।

ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগের সমন্বয়ে সম্ভাবনা

ভারতের আর্থনীতি যেখানে ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিকে তরল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি ভারসাম্যপূর্ণ FDI এবং FPI প্রবাহ দেশের ঋণ পরিমাণের তুলনায় উন্নত আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে এবং মুদ্রাস্ফীতি কম রাখতে সাহায্য করে।
FDI-এর ধারাবাহিক বৃদ্ধির ফলে দেশ নতুন প্রযুক্তি, অবকাঠামো ও কর্মসংস্থান পেয়ে ঋণের উপর নির্ভরতা কমাতে পারে, যেখানে FPI ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করেই বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ালে বিদেশি ঋণের ওপর চাপ কমে।

ভারতের মোট ঋণের এক বিশাল অংশ বিদেশি মুদ্রায় নির্ধারিত, তাই মুদ্রার ঊনমুল্যায়ন ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় ঝুঁকি তৈরি করে। এখানে বিদেশি বিনিয়োগের তরলতা এবং ধারাবাহিক প্রবাহ ঋণ ব্যবস্থাপনার দিক থেকে নিরাপত্তা এনে দিতে পারে।

ভারতের বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য, ঋণের প্রভাব ইन्फোগ্রাফিক
ছবি: ভারতের বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দেখানো হল, যেখানে ঋণের ওপর প্রভাব স্পষ্ট; ছবি তৈরি করা হয়েছে AI দ্বারা

এই উপাদানগুলো মিলিয়ে, ভারতের ঋণ ও অর্থনীতির ভবিষ্যত নির্ভর করছে বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতার সঠিক সমন্বয়ের ওপর। FDI ও FPI’র প্রভাব স্পষ্ট, তবে তা সংগঠিত করার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত কৌশল প্রয়োজন।


আরো জানতে পারেন:

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঋণের ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ

ভারতের ঋণ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক স্থিতিশীলতার আলোকে নন-পেরফর্মিং লোন বা অ-পারফর্মিং লোন (NPA) একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ঋণের সেবার চাপ এবং নন-পেরফর্মিং লোনের পরিমাণ দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের প্রতিবিম্বস্বরূপ। ২০২৪ সালের অবস্থা দেখলে বোঝা যায়, ভারতের অর্থনীতি ঋণের সঠিক ব্যবস্থাপনায় ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে রয়েছে, তবে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ অনসই আছে।

নন-পেরফর্মিং লোন এবং ঋণের সেবার চাপ

২০২৪ সালের মার্চ মাসে ভারতের মোট নন-পেরফর্মিং লোনের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২.৮% যা পূর্ববর্তী বছরের ৩.৯% থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর অর্থ হল, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের প্রায় ৯৭% সময়মতো সেবা পাচ্ছে, যা অতীতের তুলনায় অধিকতর সুস্থ আর্থিক অবস্থার লক্ষণ। মোট নন-পেরফর্মিং লোনের পরিমাণ ডিসেম্বর ২০২৩-এ ছিল প্রায় ৫৭.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২২ সালের ৬৯.৫৭ বিলিয়ন ডলারের থেকে কমেছে (CEIC Non-Performing Loans)।

এই উন্নতির পেছনে রয়েছে সরকারি ও আর্থিক নীতিমালায় গ্রহণ করা কঠোর পদক্ষেপ এবং ঋণের পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ। উদাহরণস্বরূপ, ইন্সলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড (IBC) প্রয়োগ, সিকিউরিটাইজেশন অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকশন অব ফাইনান্সিয়াল অ্যাসেটস অর্ট ইনফোর্সমেন্ট অ্যাক্টের (SARFAESI) বিভিন্ন সংশোধনী, এবং ঋণ পুনরুদ্ধার ত্রিবুনালগুলোর ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে NPAs কমতে শুরু করেছে।

তালিকাভুক্ত কিছু মূল পয়েন্ট এখানে তুলে ধরা হলো:

  • গ্রস NPA হার: মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত গ্যাস NPA হার মাত্র ২.৭%, যা ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
  • নিট NPA হার: একই সময়ে নেট NPA শতকরা কমে ০.৬২% এ দাঁড়িয়েছে।
  • কর্মসূচি: ব্যাংকগুলো বিশেষায়িত স্ট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট তৈরি করেছে এবং ফিট অন স্ট্রিট recovery মোডেল চালু আছে।
  • অর্থনৈতিক চাপ: দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের জন্য সরকারি সরকারি স্কিম যেমন, প্রধানমন্ত্রির মুদ্রা যোজনা ও মাইক্রো ফাইনান্সের অধীনে ঋণের মূল্যায়নে ত্রুটি ও পেমেন্ট ডিফল্ট হতেও পারে।

ঋণের সেবার চাপ কমানো মানে শুধুমাত্র সুদের বোঝা কমানো নয়, বরং বাজেট ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। যখন নন-পেরফর্মিং লোন কমে, ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে সাহসী হয়, যা ব্যবসা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক। তবে, ঋণের দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা না হলে, ঋণ সেবার চাপ আবার বৃদ্ধি পেতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

ভারত সরকার এবং RBI এখনো কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে ঋণের মানোন্নয়নের জন্য। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রপার্টির সঠিক মূল্যায়ন, দ্রুত ঋণ পুনরুদ্ধার, এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ খাতের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।

অর্থনৈতিক টেকসইতার জন্য নন-পেরফর্মিং ঋণের এই হ্রাস এক আশার বার্তা। তবে ঋণের বাড়তি সেবা চাপ মোকাবেলা করতে নিয়মিত খুঁজে বার করতে হবে ঋণগ্রহীতাদের সক্ষমতা ও বাজারের পরিস্থিতি। ঋণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে সতর্কতা অবলম্বন এবং নীতিমালা কঠোরভাবে পালন অপরিহার্য।

ভারতের নন-পেরফর্মিং লোন ও ঋণ সেবার তথ্য বিস্তারিত দেখতে পারেন CEIC-এর ঋণ এবং NPL ডাটা। এই তথ্য থেকে বোঝা যায় যে ঋণের মান উন্নত হলে দেশের জন্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নতির পথ সুগম হয়।

উপসংহার

ভারতের মোট ঋণের পরিমাণ গত দুই দশকে অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনীতির বিভিন্ন স্তরে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই ঋণ শুধুমাত্র আর্থিক বৃদ্ধির ধারা নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং সামাজিক অবকাঠামোর দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করছে। এগিয়ে চলার পথে ঋণের সঠিক ব্যবস্থাপনা আর আর্থিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা অপরিহার্য, কারণ অতিরিক্ত ঋণ ভবিষ্যতে ঝুঁকি ও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিময় হারের ওঠানামা, সরকারি বাজেট ভারসাম্য, এবং বিদেশি বিনিয়োগের সরব প্রবাহ মিলিয়ে এটি ভারতের অর্থনৈতিক দৃঢ়তা নির্ধারণ করছে। স্মরণীয় যে, ঋণ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করলেই সুদূরপ্রসারী আর্থিক সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

পাঠকদের প্রতি আহ্বান রইল, নিজেদের আর্থিক সচেতনতা বাড়ানো ও দেশের অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কিত তথ্য নিয়মিত অনুসরণ করার জন্য। এর মাধ্যমে ভারত আরও দৃঢ় ও টেকসই আর্থিক ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারবে।

Click here