উত্তর-পূর্বে ৩৬,০০০ কোটি টাকার প্রকল্প ২০২৫: উন্নয়ন-শান্তির আশা ও মনিপুরের সংকট

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

৩৬,০০০ কোটি টাকার প্রকল্পে উত্তর-পূর্বে পরিবর্তনের ছোঁয়া, মনিপুরে অশান্তির ছায়া (২০২৫)

উত্তর-পূর্ব ভারতের বুকে আবারো তোলপাড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরে ৩৬,০০০ কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা ঘিরে এলাকার ভবিষ্যৎ ও আশার এক নতুন ছবি আঁকা হচ্ছে। উন্নয়নের এই বৃহৎ ধারা যখন নতুন রাস্তা, রেললাইন, বিদ্যুৎ এবং হাসপাতালের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে, ঠিক তখনই মনিপুর রয়ে গেছে আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তার ছায়ায়। দুই বছর আগে জাতিগত সহিংসতার যে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে—তার প্রতিচ্ছবি আজও লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে, রাজ্যের গ্রামে-শহরে।

এই সফর শুধু নতুন ইমারত কিংবা রাস্তার গল্প নয়, বরং বিশ্বাস, সংলাপ আর পুনরুদ্ধারের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতি, বিশেষত চুরাচাঁদপুর ও ইম্ফলের মতো উত্তপ্ত জায়গায়, বোঝায় রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধ। প্রতি ঘোষণার পাশাপাশি আছে শান্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি, উদ্বাস্তুদের হাতে ভরসা দেওয়ার কথা।

এত বড় আকারের উন্নয়ন প্রকল্প ঠিক কীভাবে মনিপুর এবং গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের ভাগ্য গড়ে দেবে, আর এই অশান্ত সময়ে মানুষের স্বপ্ন ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে—সেই স্মৃতি ও প্রশ্নে মোদীর সফর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সবাইকে।

৩৬,০০০ কোটি টাকার উন্নয়ন: কি কি প্রকল্পে হাত পড়লো

উত্তর-পূর্ব ভারতের এই বিপুল আর্থিক বরাদ্দের ঘোষণা নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোতে যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিল্পায়ন, পরিবেশবান্ধব শক্তি এবং শিক্ষার মতো খাতে বড় ধরনের বদল ঘটতে চলেছে। এই প্রকল্পগুলোর প্রভাব সরাসরি মানুষ, ব্যবসা, ও এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের ছাপ রাখবে।

মিজোরামে নতুন যুগের যাত্রা: রেল ও সেতু

মিজোরামে বৈরাবি-সৈরাং রেললাইন এবং চিম্তুইপুই নদীর ওপরে নতুন সেতু রাজ্যের জীবনচিত্র পাল্টে দেবে। রাজ্যের রাজধানী আইজল অবশেষে সরাসরি রেল যোগাযোগ পেল, যার সুবিধা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।

  • বাসিন্দাদের দৈনন্দিন যাত্রা হবে সহজ ও সাশ্রয়ী
  • ব্যবসায়ীদের জন্য সরবরাহ খরচ কমবে, বাজারে দ্রুত পণ‍্য পৌঁছনো যাবে

এই নতুন রেললাইনকে মিজোরামের প্রগতির মাঠ বলে দেখা হচ্ছে। কৃষিজ পণ্য থেকে হস্তশিল্প—সবকিছুই এখন দেশের বড় শহর গুলোতে সহজে পৌঁছাবে, এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য বড় সুযোগ।
খুব অল্প সময়ে রাজধানী ও দেশের মূল রেল নেটওয়ার্কের সংযোগ বাড়ার ফলে:

  • পর্যটন হাঙ্গর বড়বে, বহিরাগতরা সহজেই এই পাহাড়ি ভূখণ্ড ঘুরে দেখতে পারবে
  • কর্মসংস্থান তৈরি হবে, স্থানীয়রা বাড়িতে থেকেই কাজের সুযোগ পাবে
  • শিক্ষার্থী, রোগী ও প্রবীণরা ভ্রমণে স্বস্তি পাবে

এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট খবর-এর মতে “বৈরাবি-সৈরাং রেলপথ অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দেবে, নতুন কাজের ক্ষেত্র খুলবে, পর্যটকদের টানবে এবং স্থানীয় ব্যবসার প্রসার ঘটাবে।”

নদীর ওপর বিশ্বমানের সেতু যোগাযোগ বাড়িয়ে, বর্ষায় দূর-দূরান্তে যেতে যেসব সমস্যা ছিল—তা অনেকটাই কেটে যাবে।
আরো জানুন বৈরাবি-সৈরাং রেলপথে পরিবর্তনের গল্প

আসামে শিল্পায়ন, পরিচ্ছন্ন শক্তি ও শিক্ষার নতুন দিগন্ত

নুমালিগড় রিফাইনারি, ইথানল ও পলিপ্রপিলিন প্ল্যান্ট, হাসপাতাল, এবং শহরের রিং রোডসহ শহুরে ও শিল্প এলাকার সকালের দৃশ্য, AI চিত্র
নুমালিগড়ের শিল্পপ্রকল্প ও রিং রোডের কাজ, AI দ্বারা নির্মিত চিত্র

আসামে বিনিয়োগ হচ্ছে নতুন ধরনের শিল্প আর পরিচ্ছন্ন শক্তি প্রকল্পে। নুমালিগড় রিফাইনারিতে তৈরি হচ্ছে

  • জৈব-ইথানল প্ল্যান্ট (বাঁশ ব্যবহার করে ইথানল উৎপাদন)
  • পলিপ্রপিলিন প্ল্যান্ট (প্লাস্টিক শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল তৈরি)
  • নতুন মেডিকেল কলেজ ও আধুনিক হাসপাতাল
  • শহরের রিং রোড

এগুলো অর্থনৈতিক বুনিয়াদ আরও শক্ত করে দেবে। নুমালিগড় বায়ো-রিফাইনারি প্রকল্পকে ভারতের “সবুজ শক্তি ভবিষ্যৎ” এর প্রতীক মনে করা হচ্ছে।

সংক্ষেপে আসামের এই প্রকল্পগুলো যা বদলে দেবে:

প্রকল্প কী সুবিধা হবে
জৈব-ইথানল প্ল্যান্ট কিষানদের বাড়তি আয়, পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি উৎপাদন
পলিপ্রপিলিন প্ল্যান্ট স্থানীয় কর্মসংস্থান, প্লাস্টিক নির্মাণে নতুন শিল্পায়ন
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা, মেডিকেল শিক্ষার বিস্তার
শহরের রিং রোড যানজটে স্বস্তি, শহুরে পরিবহনব্যবস্থা দ্রুত, বাণিজ্য গতিময়

এছাড়া এই পদক্ষেপ বাজার, পরিবহন, এবং চাকরির নতুন সুযোগ আনবে। রিং রোডের ফলে শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ দ্রুততর হবে। কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য সব সহজে পৌঁছাবে বাজারে।

এই পরিকল্পনা আসামের উন্নয়নের ছবি পাল্টে দিচ্ছে। স্থানীয় যুবক-যুবতী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী সকলের জন্য তৈরী হচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দরজা।
আরও পড়ুন ‘পিএম উদ্বোধন করতে চলেছেন নুমালিগড় বায়ো-রিফাইনারি’ সম্পর্কে

মোদীর মনিপুর সফর: শান্তি, নিরাপত্তা, আর দৃশ্যমান প্রতিবাদ

নতুন প্রকল্পের ছায়ায়, মনিপুর বর্তমানে অশান্তির মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন, বাস্তুহারা মানুষ ও নিরাপত্তার ছায়াগুলোর মুখোমুখি। প্রধানমন্ত্রীর সফর, উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে এলেও, তিনি ঠিক কোন মনিপুরকে দেখছেন? এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে সাধারণ বাসিন্দা, শরণার্থী, প্রশাসনের মানুষ আর প্রতিবাদকারী—সবার মনেই প্রশ্ন, ওয়াদা ও বাস্তবতার সংযোগ কোথায়।

জাতিগত সংঘাত আর শরণার্থী ক্যাম্প: মনিপুরের বাস্তবতা

মনিপুরের শরণার্থী ক্যাম্প, পাহাড় ও কুয়াশা, উদ্বাস্তু পরিবার, নিরাপত্তার প্রহরা; AI নির্মিত ছবি

২০২৩ সালের ৩ মে, মনিপুরে যে সংঘর্ষ শুরু হয়, তা দু’টি প্রধান সম্প্রদায়—মেইতেইরা ও কুকি-জোদের—জীবন অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। গোষ্ঠীগত সন্দেহ, জমি ও সংরক্ষণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে অতীতের বেদনা একসাথে বড় স্ফুলিঙ্গে রূপ নেয়। সরকারি রিপোর্ট ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে,

  • মে ২০২৩ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭৫ জন নিহত
  • ৫০,০০০’রও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত বা শরণার্থী
  • সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, মন্দির, এবং গির্জা ভস্মীভূত
    (তথ্যসূত্র: State Department, USA, ২০২৩ রিপোর্ট, Amnesty International)

শিশু–মায়েদের চোখে ক্লান্তি, ভয় ও ভবিষ্যৎ অজানার ছাপ। পিতৃ-মাতাদের উদ্বেগ, বারবার নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টের সামনে লাইন দেওয়া, খাবার-জল জোগাড়ে যুদ্ধ, এসব যেন প্রতিদিনের গল্প।
নিরাপত্তা বাড়লেও, দাঙ্গার দু’বছর পরেও হাজার হাজার মানুষ অস্থায়ী শিবিরে। সাধারন জীবন, পড়াশোনা, ছোট ব্যবসা—সব থেমে গেছে। এইসব কষ্টের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর সফর, অনেকের মাঝে আবার আশার আলো জাগিয়েছে। কেউ বলছেন—সরকারের সংবেদনশীলতা ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তই এখন জরুরি, তবেই শান্তি ফিরতে পারে।

শান্তির আশা নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

ইম্ফল শহরের রাস্তায় নিরাপত্তার বলয়, সামনে বিক্ষোভ, দূরে প্রশাসনিক উপস্থিতি; AI দ্বারা তৈরি ছবি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সফরকে কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়ন আর শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি হিসেবে তুলে ধরেন। চুরাচাঁদপুর ও ইম্ফল—দু’টি সংবেদনশীল জেলায় বিশাল নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা রাস্তা আর কড়া নজরদারির ছায়া, লোকাল জীবনকে আটকে দেয়।
বন্দের ডাক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ আর মানববন্ধনের চিত্র স্পষ্ট। প্রভাবশালী নাগরিক সমাজ বলছে,

  • কিছু অংশ সরকারকে নতুন করে সুযোগ দিতে চায়
  • আবার কেউ কেউ মনে করেন, এত বড় দ্বন্দ্বে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রতীকী মাত্র
  • অনেকে প্রশ্ন করছেন, প্রশাসন কি ঘর হারানোদের নিয়মিত খাবার বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে?

সাম্প্রতিক আমলে রাষ্ট্রপতি শাসনের অধীনে মনিপুর কার্যত কেন্দ্রের হাতে; স্থানীয় জনগণের স্বর থাকে অনেকটা অনুপস্থিত। আলোচনার টেবিলে সাধারণ মানুষের চাহিদা খুব একটা জায়গা পায় না। এই অবস্থায় সফরের সময় অনেক রাস্তাঘাট বন্ধ, নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ইম্ফল ও আশপাশের এলাকা; মানুষ নিজেই বলে—“যেখানে বন্ধুত্ব, সেখানে পাহারা কিসের?”

ইম্ফলে দুই মুখ: সাধারণ মানুষের শান্তি-আশা বনাম নিরাপত্তার বলয়; AI তৈরি ছবি

এই সফরের নেপথ্যে রাজ্যবাসীর কিছু চাহিদা আর রাজনৈতিক নেতাদের কৌশল পরস্পরের বিরুদ্ধে ধাক্কা খাচ্ছে। দলের বিক্ষোভ, বেসরকারি সংগঠনগুলোর মানববন্ধন, রাজ্যের স্বাভাবিক জনজীবন স্বাভাবিক হতে দেয় না। কেউ আশাবাদী, কেউ সন্দিহান—তবে সবাই চায়, যত দ্রুত সম্ভব ভূমিহীন, বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো ফিরুক স্বাভাবিক জীবনে।

সম্পর্কিত আরও বিশদ জানতে পড়ুন Times of India-এর প্রতিবেদন এবং The Hindu-র লাইভ আপডেট
এতেই স্পষ্ট, মোদীর সফরে যেমন অগ্রগতির বার্তা আছে, তেমনি আছে উত্তেজনা, প্রশ্ন ও জনগণের শূন্য দশার হাহাকার।

উত্তর-পূর্বকে কেন্দ্রের মূল নীতিতে আনা: এক্ট ইস্ট পলিসির বাস্তব প্রভাব

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আজ কেবল সীমান্ত নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সংযোগের মূল ফটক হয়ে উঠছে। এক্ট ইস্ট পলিসি ঘোষণা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বড় প্রকল্প ও উদ্যোগ, এই এলাকা ভারত সরকারের অগ্রাধিকারে উঠে এসেছে—এটা এখন চাক্ষুষ। পর পর রেললাইন, হাইওয়ে, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি আর গ্লোবাল বাজারের হাতছানি—সব মিলিয়ে উত্তর-পূর্বের মানচিত্র বদলাচ্ছে। এই পরিবর্তনে মণিপুর, আসাম, মিজোরামের মতো রাজ্যগুলো শুধু নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া পাচ্ছে না, বরং মানুষের জীবন, কর্মসংস্থান আর বৈশ্বিক সংযোগের নতুন জানালা খুলছে।

উত্তর-পূর্বে এক্ট ইস্ট পলিসির কার্যকর বাস্তবায়ন: হাস্যোজ্জ্বল স্থানীয় মানুষ, আধুনিক রেল ও সড়ক, সীমান্তে বানিজ্যিক আকর্ষণ | ছবি তৈরি করেছে AI
উত্তর-পূর্বে এক্ট ইস্ট পলিসির বাস্তবতা ও সংযোগের পুনর্নিমাণ, AI দ্বারা সৃষ্ট চিত্র

আন্তর্জাতিক সংযোগের মূল সেতু: রেল, সড়ক ও আকাশপথ

এক্ট ইস্ট পলিসির ফলে উত্তর-পূর্ব ভারত এখন আর ‘পিছিয়ে পড়া’ অংশ নয়। বরং এখানে গড়ে ওঠা আধুনিক রেলপথ, বিস্তীর্ণ হাইওয়ে আর নতুন এয়ারপোর্ট এই ভূখণ্ডকে ভারতের বাকি অংশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে একাকার করে দিচ্ছে।

  • মিজোরামের বৈরাবি-সৈরাং রেললাইন, মণিপুরের ইম্ফল রেল জংশন, আসামের নানা শহরের আধুনিক হাইওয়ে—এসব প্রকল্প শুধু জার্নি ছোট করছে না, বরং কৃষক, হস্তশিল্পী, ছোট ব্যবসায়ী সবার মালপত্র দ্রুত ঢাকায়, কলকাতায়, কিংবা মায়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্তপথে পৌঁছচ্ছে।
  • উত্তর-পূর্ব থেকে সাইবার স্পেসের ছোঁয়া: মোবাইল টাওয়ার, উচ্চ-গতির ইন্টারনেট, গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড—ডিজিটাল ইন্ডিয়া স্কিম এখানে বাস্তবতায় পরিণত। ছাত্রছাত্রী, স্টার্ট-আপ, গ্রামীণ পরিবার—সবাই নতুন পার্টনারশিপে যুক্ত হচ্ছে।

অপূর্ব গতিতে তৈরি অ্যাক্সেস এবং ‘রাইজিং নর্থইস্ট’-এর মতো বিনিয়োগ সম্মেলন এই অঞ্চলের বিশ্ব বাণিজ্য হাব হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। উদ্যোগের বিস্তারিত পড়তে পারেন Rising Northeast 2025 ওয়েবসাইটে

বৈশ্বিক বাণিজ্য ও জীবিকার নতুন ক্ষিতিজ

এক্ট ইস্ট পলিসি শুধু রাস্তাঘাট নয়, বরং বাজার ও জীবিকারও প্রসার ঘটাচ্ছে। বিশেষত, আসাম, মিজোরাম, মনিপুরে কেন্দ্রের নানান প্রকল্প, স্থানীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করছে।

  • সার্বিক উদ্বোধন ও বিনিয়োগের ঢল: সাম্প্রতিক সময়ে Rising Northeast Investors Summit 2025-এ ৪.৪৮ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। এতে এনার্জি, এগ্রো-ফুড, টেক্সটাইল, ট্যুরিজম, হেলথকেয়ার, ক্রীড়া, শিক্ষা, আইটি—নানান খাতে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
  • যোগাযোগ সহজতর, পণ্য সহজেই বাজারে: টানেল, ব্রিজ, নতুন রাস্তায় চাষির ধান ও বাঁশ, মণিপুর-মিজোরামের রেশম, হস্তশিল্প সহজে দেশের বড় শহর আর আন্তর্জাতিক বাজারে যাচ্ছে।
  • এয়ারে সংযোগ: ইউডান প্রকল্পে পূর্বে যোগাযোগহীন ছোট শহরেও এয়ারপোর্ট তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ সময় বাঁচাচ্ছে, আগন্তুক—পর্যটকদের আগমণ বেড়েছে।

সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—এখনকার উত্তর-পূর্ব “ফ্রন্টিয়ারের বদলে ফ্রন্ট-রানার”, আর্থিক অগ্রগতির সামনে সবার দৃষ্টি।

মণিপুর-আসাম-মিজোরামে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মানবিক ছোঁয়া

রাষ্ট্রের বড় প্রকল্পগুলো কেবল পরিকাঠামোর জন্য নয়—এগুলো জায়গায় জায়গায় কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নতুন বাজার, নিরাপত্তা—সবকিছু এনেছে। প্রতি রাজ্যের উদাহরণ জুড়ে এখানে নতুন করে বাঁচার আনন্দ মিশেছে।

রাজ্য মূল প্রকল্প মানবিক ফলাফল
মিজোরাম বৈরাবি-সৈরাং রেল, নতুন ব্রিজ দুরন্ত পরিবহন, ব্যবসার প্রসার
আসাম নুমালিগড় রিফাইনারি, রিং রোড কৃষক-যুবকের আয়, নতুন চাকরি
মণিপুর ইম্ফল রেল সংযোগ, রাস্তা উন্নয়ন বাজারে সহজ বাজারজাত, পর্যটন

এসব প্রকল্প শুধু শহরের নয়—গ্রামীণ মানুষের জীবনেও এক চূড়ান্ত স্বস্তি ও সম্ভাবনা এসেছে।

চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন

বড়ো কানেক্টিভিটি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে—এথনিক সংঘাত, সরু ভূ-পথ, জলবায়ু, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। তারপরও, এক্ট ইস্ট পলিসি এই অঞ্চলের ভবিষ্যতকে বদলে দিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পথ খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা, স্থানীয় চামচিকা, পাট, বাঁশ আর ট্যুরিজমের ভরসায় আগামী দিনের উত্তর-পূর্ব এখন “ভারতের প্রবেশদ্বার”।

যোগাযোগ, প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক বাজারের এই সেতুবন্ধন—উত্তর-পূর্বকে পৌঁছে দিয়েছে নতুন বিশ্বে। আরো পড়ুন Act East Policy and Northeast India প্রচেষ্টা নিয়ে।

এই নতুন পথে হাঁটতে হাঁটতে, উত্তর-পূর্ব এবার সত্যিই দেশের মুখ এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে—আর সেখানে সবার বিবর্ণ আশা আর আত্মবিশ্বাস উজ্জ্বল।

উপসংহার

উত্তর-পূর্ব ভারতে ৩৬,০০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প হাওয়া-জলের মতো প্রবাহ এনে দিয়েছে উন্নয়নের, আশা জাগিয়েছে নানাভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে। নতুন রেলপথ, আধুনিক হাসপাতাল, শিল্পকারখানা, রাস্তা—সব মিলিয়ে বদলের বার্তা পৌঁছেছে গ্রাম থেকে শহর, পাহাড় থেকে সমতলে। সরকার সরাসরি হাতে তুলে দিয়েছে ঘরবাড়ি, পানীয় জল, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক সুযোগ; এগুলো বহু মানুষের জীবনে পুরোনো সংকটের ইতি টানতে শুরু করেছে।

তবুও, মনিপুরের বিভক্ত বাস্তবতা সরকারকে স্পষ্ট এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়: এখানে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনার কাজটা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই মিটবে কি? বিভাজন, নির্বাসন আর সন্দেহের বাতাস এখনো কেটে ওঠেনি। কেন্দ্রীয় প্রকল্প মানবিক স্পর্শ ছড়ালেও, সম্পূর্ণ সমাধান আসবে কি—এ বিষয়ে সংকট আর প্রত্যাশার মাঝখানে দুলছে এই জনপদ।

উত্তর-পূর্বের এই অভিযাত্রা বদলেরই প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে প্রতিটি পদক্ষেপে সংলাপ, ন্যায্যতা ও সাহস যোগ হলে তবেই ভাগ্য বদলানো সম্ভব। পাঠক, ভাবুন—উন্নয়ন কি শেষ পর্যন্ত শান্তির গ্যারান্টি? নাকি মানুষ-মানুষের সরল বন্ধন আর বিশ্বাসই আসল চাবিকাঠি? নিজস্ব মত টানুন, অন্যের সঙ্গে ভাগ করুন—কারণ এই উত্তর আজ শুধু এক শহরের নয়, গোটা দেশের।

Click here