ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ২০২৫: শুল্ক কমানো ও ভবিষ্যৎ চুক্তির গুরুত্ব বিশ্লেষণ

Estimated reading time: 1 minutes

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে শুল্ক বাড়ানো বন্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা (২০২৫)

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে, যদিও সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দরকষাকষি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রী পিয়ূষ গয়াল বলছেন, দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানিকৃত কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করেছে, কিন্তু ভারত এই দাবিগুলো মানতে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজি নয় যতক্ষণ না কৃষক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এই পরিস্থিতিতে, বাণিজ্য আলোচনায় নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা এবং পারস্পরিক স্বার্থের সমন্বয় এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিও দেখুন: India’s Strong Stand: Piyush Goyal Responds To US Tariffs And Trump’s Multi-Pronged Attack

বর্তমান বাণিজ্য পরিস্থিতি

বর্তমান সময়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা একাধিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে, যা মূলত ভারতের রাশিয়ার তেল ক্রয়ের প্রেক্ষিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় রপ্তানিতে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েছে। কৃষক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী পর্যন্ত নানা স্তরের মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে। চলুন, এই পরিস্থিতির কিছু প্রধান দিক বিস্তারিত জানি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক: শুল্কের দুই স্তর (২৫% + অতিরিক্ত ২৫%) ও মোট ৫০% শুল্কের সংখ্যা, কারণ এবং ভারতীয় রপ্তানির উপর তৎক্ষণাৎ প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র গত আগস্ট ২০২৫ থেকে ভারতের ওপর ২৫% বিদ্যমান শুল্কে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, ফলে মোট শুল্ক বেড়ে গেছে ৫০%-এ। অর্থাৎ, ভারতের কিছু পণ্যের ওপর এখন যুক্তরাষ্ট্র ৫০% শুল্ক তুলছে, যা অত্যন্ত উচ্চ এবং প্রথাগত বাণিজ্য নীতির বাইরে।

এই শুল্কের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল কারণ ভারতের রাশিয়া থেকে অব্যাহত তেল ক্রয়। যুক্তরাষ্ট্র এই ক্রয়কেই রাশিয়াকে অর্থায়ন হিসেবে দেখে এবং চাপ বাড়ানোর জন্য নিষেধাজ্ঞা হিসেবে শুল্ক বাড়িয়েছে।

শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় রপ্তানিতে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে:

  • টেক্সটাইল, রাসায়নিক ও যন্ত্রাংশের রপ্তানি পড়েছে কারণ এই পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে মার্কিন ক্রেতারা অন্য উৎস খুঁজছে।
  • রপ্তানিকারীদের মূল্য প্রতিযোগিতা কমেছে সুবিধাজনক বাজারে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়ছে।
  • নিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে কারণ রপ্তানি কমলেই ব্যবসায়ী খরচ কমাতে পারেন।

এই শুল্কের বাস্তব প্রভাব দ্রুত স্পষ্ট হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে পারেন বিবিসির প্রারম্ভিক বিশ্লেষণে

ভারতের রাশিয়া তেল ক্রয় ও প্রভাব: ভারত কেন রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি প্রভাবিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর তাৎপর্য

ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিশ্ববাজারে কম দামে উচ্চমানের তেল পাওয়া। যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার মাঝে ভারত একটি কৌশলী ব্যবসায়িক পন্থা অনুসরণ করছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এই ক্রয়কে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে অর্থায়ন হিসেবে দেখছে। তাই সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে ভারত যদি এই তেল ক্রয় বন্ধ না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর শুল্ক আরোপ করেই অবস্থান স্পষ্ট করছে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, ভারত একটি নিরপেক্ষ ও আত্মনির্ভর নীতি পালন করছে, যেখানে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। ফলে, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

এ বিষয়ে সাম্প্রতিক আপডেট ও বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে ইকোনমিক টাইমসে

বাণিজ্য শিল্ডে কৃষকদের উদ্বেগ: শুল্ক বাড়ার ফলে কৃষক, বিশেষ করে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের কী ঝুঁকি আছে, তা উদাহরণ দিয়ে দেখান

শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি যেমন যন্ত্রসেচ, বীজ বা রাসায়নিকের দাম বাড়লে ছোট কৃষকরা তাদের উৎপাদন ব্যয় কমাতে পারবেন না।

সেটা ছাড়াও আমেরিকান বাজারে গম, আলু, মসুর ডাল ও অন্যান্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য রপ্তানি কমে গেলে ভারতীয় ছোট ও মধ্যম আকারের কৃষকদের আয় কমবে। এছাড়া আমদানিকৃত কৃষিপণ্যতে শুল্ক বাড়লে আমেরিকান কৃষিপণ্য সহজে ভারতের বাজারে ঢুকতে পারে, যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য হুমকির কারণ।

একজন প্রান্তিক কৃষকের উদাহরণ দিই: মেঘালয়ের ছোট এক কৃষক মার্কিন আমদানিকৃত উইডকিলার ব্যবহার করতেন। এখন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সে এটি কিনতে পারছেন না বা দাম বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প খুঁজছে, যা তার ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে।

এমন পরিস্থিতি প্রতিবেশী ছোট কৃষকের জীবনযাত্রাকে বেড়েই তোলে। বড় পরিসরে এই সমস্যা দেশের কৃষি খাতের সামগ্রিক বিকাশকে ধাক্কা দিতে পারে। রয়টার্সের রিপোর্টে সমীক্ষা করা হয়েছে এর বিস্তৃত প্রভাব।


বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য আলোচনার জোর দেয়া হচ্ছে যেন শুল্কের এই চাপ কিছুটা লাঘব পায় এবং কৃষকের ক্ষতি কম হয়। এই বাণিজ্য ব্যবস্থায় সঠিক সমন্বয় না হলে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্য

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মূল লক্ষ্য দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। এই চুক্তির পেছনে রয়েছে স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি: ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তৈরি করা। এখন পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা। এই লক্ষ্যের কার্যকর বাস্তবায়নে দুই দেশের জন্য বড় সম্ভাবনা ও ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি হবে। চলুন, লক্ষ্যগুলো বিস্তারিতভাবে জানি।

২০৩০ পর্যন্ত বাণিজ্য দ্বিগুণ

বর্তমানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৯১ বিলিয়ন ডলার। এই চুক্তির মাধ্যমে পরিকল্পিত লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিমাণকে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ প্রায় ত্রিগুণ বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এর প্রধান কারণ সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক বাজার, উন্নয়নশীল শিল্প ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা, এবং আন্তর্জাতিক মূলধারায় শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা।

দুই দেশের অর্থনীতির জন্য এই বৃদ্ধির কিছু প্রভাব:

  • বাণিজ্য ঘনীভবন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: নতুন বাণিজ্য সুযোগ শ্রম ও উৎপাদন খাতে নতুন কর্মসংস্থানের দরজা খুলবে।
  • উত্পাদন খাতে প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি: বাজার বৃদ্ধির ফলে উদ্ভাবনী পন্থায় দক্ষতা বাড়বে।
  • বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিনিময়: শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা বাড়বে।

এছাড়াও, এই বৃদ্ধির মাধ্যমে দু’দেশের ব্যবসায়িক সহযোগিতা ও কুটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে যা স্থায়ী প্রবৃদ্ধির অনুষঙ্গ হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় রয়টারের প্রতিবেদনে

মূল সেক্টর ও সুবিধা

এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অনেক ক্ষেত্রেই সুবিধার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় অর্থনীতির অভিন্ন সেক্টরগুলোর জন্য এটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। নিচে কিছু প্রধান সেক্টর ও তাদের সম্ভাব্য সুবিধার সারাংশ দেওয়া হলো:

  • বস্ত্র ও পোশাক শিল্প: যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় বস্ত্রজাত পণ্যের অন্যতম বৃহৎ বাজার। শুল্ক ও বাধা কমে গেলে বাজার প্রবেশ সহজ এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
  • তথ্যপ্রযুক্তি (IT) ও সফটওয়্যার সেবা: দুই দেশের মধ্যে IT সেবার বাড়তি আদানপ্রদান কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রযুক্তির উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করবে।
  • কৃষি পণ্য: আমিষ, মসলা, শস্যের রপ্তানি সহজ হওয়ার ফলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষি আধুনিকীকরণে উৎসাহ বাড়বে।
  • পরিষেবা খাত: স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ফিনান্সিয়াল সেবা ইত্যাদির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

এই সেক্টরগুলোর সুবিধা দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য কর্মকাণ্ডে বিশেষ গতি এনে দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তির আওতায় এই সেক্টরের উন্নতি ও সম্প্রসারণের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ইকোনমিক টাইমসের আপডেট পড়তে পারেন।

সব মিলিয়ে, এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্য ও সুবিধাগুলো শুধু আর্থিক লাভের জন্য নয়, দুই দেশের ব্যবসায়ের অবস্থান ও সহযোগিতার প্রসারের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো কার্যকর হলে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পরিধি ও মান দুটোকেই ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া সম্ভব হবে।

আলোচনা বিষয় ও চ্যালেঞ্জ

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধাগুলো কৃষি ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের শুল্ক ইস্যুতে ঘুরছে। যুক্তরাষ্ট্র কৃষি, দুগ্ধজাত পণ্য ও ইথানলসহ একাধিক বিষয়ে শুল্ক হ্রাস চাচ্ছে, যা ভারতের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। আবার ভারত কৃষকদের সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আপত্তি তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে এই শুল্ক বিরোধ মসৃণভাবে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করাই আলোচনার মূল চ্যালেঞ্জ।

কৃষি পণ্যের শুল্ক হ্রাস চাহিদা

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর মকাই (corn), সয়াবিন, আপেল, বাদাম, ইথানল এবং দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর জোরালো দাবি জানাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো এই পণ্যগুলোতে মার্কিন কৃষক ও উৎপাদকরা ভারতে সহজে প্রবেশাধিকার পেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারতীয় বাজারে তাদের এই পণ্যের আমদানি বাড়ুক, যাতে আমেরিকার কৃষি খাত লাভবান হয়।

বিশেষ করে:

  • মকাই ও সয়াবিন: দুইটি প্রধান খাদ্যশস্য ও শক্তি সম্পদের উৎস হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত হলেও তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস পেশাকরণ করুক।
  • আপেল ও বাদাম: মার্কিন শুষ্ক ফল ও ফলমূলের শিল্প ভারতের বাজারে প্রবেশের সুযোগ চায়।
  • ইথানল: আমেরিকান ইথানল উদ্ভাবন ও কৃষি ভিত্তিক বায়োফুয়েল নির্মাণে ভারতীয় বাজারে প্রবেশের সুযোগ আশা করছে।
  • দুগ্ধজাত পণ্য: যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দুগ্ধ বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে চায়, যা বড় ধরনের ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করতে পারে।

এই দাবি গুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারিত সুযোগ খুঁজছে, আর ভারতকে এ সুযোগ দিতে চায় যেন ব্যবসার পরিধি বাড়ে।

Wooden tiles spelling 'USA' and 'TARIFFS' on a wooden surface symbolizing trade issues.
Photo by Markus Winkler

ভারতের আপত্তি ও কৃষক সুরক্ষা

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক হ্রাস দাবিতে বেশ আপত্তি জানিয়েছে, কারণ বাংলাদেশ হয়ে ওঠা কৃষকদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মাত্রায় প্রতিযোগিতা করা সবসময় সহজ নয়। ভারতের কৃষক শ্রেণির মাপ অনেক ছোট, যার কারণে তারা বড় ও প্রযুক্তিনির্ভর মার্কিন কৃষক দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না।

শুল্ক কমালে ছোট কৃষকরা নিম্নলিখিত রকম ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন:

  • মূল্য কমে যাওয়া: আমেরিকান কৃষি পণ্যের বাজারে প্রবেশ বাড়লে স্থানীয় পণ্যের দাম গড়বে, যা ছোট কৃষকদের আয় কমিয়ে দেবে।
  • প্রযুক্তিগত বৈষম্য: বড় কৃষি খাতে উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা থাকা মার্কিন কৃষকদের তুলনায় ভারতের ছোট কৃষকরা পিছিয়ে পড়বেন।
  • কৃষি স্থিতিশীলতা ভঙ্গ: সরকারি সুরক্ষা ও শুল্কের মাধ্যমে কৃষকদের জীবিকা নিরাপদ করে রাখা হয়। শুল্ক কমানো মানে এই সুরক্ষার অবনতি।

সরকার এখনো কৃষক সুরক্ষার জন্য আংশিক শুল্ক আরোপ বজায় রাখতে আগ্রহী, বিশেষ করে ছুটির বাজারে যাতে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বজায় থাকে। এছাড়া, দেশের কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য তারা ভিন্ন আধুনিকীকরণ এবং উৎপাদন দক্ষতা উন্নত করার পথ অনুসন্ধান করছে।

শুল্ক কমানোর ফলে কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান ও আয়ের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত রাখতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিতে চায়, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য অনুদান ও সহায়তা বৃদ্ধি।
  • স্থানীয় উৎপাদনের জন্য উন্নত সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সাহায্য।
  • কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণ ও বিক্রয় সহায়তা।

এই তল্লাশিগুলো যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে পাওয়া যায়।

শул্ক বিরোধ সমাধানের কৌশল

শুল্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বিরোধ সহজে কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কিছু কৌশল আলোচনার টেবিলে রয়েছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতার পথে এগোনোর জন্য নিম্নলিখিত বিকল্পগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে:

  1. পারস্পরিক ছাড় (Reciprocal Concessions): কিছু পণ্যের শুল্ক ধীরে ধীরে কমিয়ে নিয়ে উভয় পক্ষই একে অপরকে সুবিধা দিতে পারে। এতে সরাসরি ও শক্তিশালী বাজার প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে।
  2. ধাপে ধাপে হ্রাস: মোট শুল্ক কমানোর পরিবর্তে নির্দিষ্ট সময়সীমায় ধাপে ধাপে হ্রাস করা হতে পারে, যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মানিয়ে নিতে পারেন।
  3. তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা: দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা নিরপেক্ষ অন্য দেশ মধ্যস্থতা করতে পারে।
  4. বিভিন্ন টেকনিক্যাল ও স্যানিটারি মান নিয়ন্ত্রণে সমঝোতা: কৃষিজাত পণ্যের নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করে আমদানি ও রপ্তানিতে বাধা কমানো।
  5. বৈষম্য কমানোর জন্য সহযোগিতা: প্রযুক্তি বিনিময় ও কৃষক প্রশিক্ষণ সহযোগিতার মাধ্যমে একে অন্যের বাজারে প্রবেশের সুবিধা দেওয়া।

এই কৌশলগুলো বাস্তবায়ন হলে শুল্কের দ্বন্ধ অনেকাংশে কমে যাবে এবং বাণিজ্যের টেকসই বৃদ্ধির পথ সুগম হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নেতারা নিয়মিত আলোচনা করে পারস্পরিক স্বার্থে এমন সমাধান বিচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইকোনমিক টাইমস-এর আপডেটে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।


শুল্ক ইস্যুতে এই আলোচনাগুলো শুধু বাণিজ্য উন্নয়নে নয়, কৃষকদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দিকেও প্রভাব ফেলছে। তাই বাংলাদেশের মতো অর্থনীতির জন্য এই সমস্যা সংবেদনশীল হওয়ায় বুদ্ধিমত্তার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াই অপশন।

অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি ও কৌশল

ভারত বহুমুখী বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে নতুন বাজারে প্রবেশ এবং রপ্তানি উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিলি, পারু, নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা FTA নিয়ে কাজ জোরদার হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য রপ্তানি ঘরকে বৈচিত্র্যময় করে শুল্ক ও অন্যান্য বাধা কমানো এবং উৎপাদন খাতে নতুন শক্তি যোগানো। আসুন, এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা যাক।

ইউরোপি ও অন্যান্য FTAs

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারত এখনও স্বচ্ছন্দ ফ্রি ট্রেড চুক্তির আলোচনায় আছে। মে ২০২৫ সালে দিল্লিতে ১১তম রাউন্ডে বেশ কয়েকটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে, যার মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দিনের ফোকাস চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করে ২০২৫ সালের শেষ দিকে চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এই FTA ভারতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এটি বৃহত্তর ইউরোপীয় বাজার প্রবেশে সুবিধা দেবে এবং পণ্য ও সেবার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এছাড়াও বাণিজ্যে নিয়মিত ও স্থায়ী প্রবাহ তৈরি করবে যা ঋতু ও রাজনৈতিক চাপেও স্থির থাকবে।

চিলি, পারু ও অন্যান্য ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি বিভিন্ন কাঠামোতে চলছে, যা রপ্তানি ধারণাকে প্রভাবিত করবে। এই অঞ্চলে কৃষি পণ্য থেকে শুরু করে আমদানি ও রপ্তানির জটিলতা দূর করার জন্য বিশেষ ধরণের শুল্ক সুবিধা এবং বাজার খোলা হচ্ছে।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে সই হওয়া FTA গুলো ভারতের কৃষি ও খাদ্য উপকরণের জন্য নতুন বাজার তৈরি করেছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ECTA (Economic Cooperation and Trade Agreement) ভারতীয় পণ্যের ওপর আটপৌঁছ শুল্ক কমিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর পথ সুগম করেছে।

এই সমস্ত চুক্তির প্রধান সুবিধাগুলো হলো:

  • শুল্কের ধাপে ধাপে হ্রাস যা বাজারে প্রবেশ সহজ করে।
  • নিয়ন্ত্রণ ও মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সমঝোতা, যা আমদানি ও রপ্তানির ঘাটতি কমায়।
  • বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্র উন্নতি।
  • কৃষি ও খাদ্যশস্য খাতে জোরালো সহযোগিতা।

দেখতে পাচ্ছি, ভারত এই চুক্তিগুলোকে তার বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ এবং স্থায়ী বৃদ্ধির একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। বিস্তারিত পড়তে পারেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ভারত FTA অগ্রগতি সম্পর্কে এখানে

বৈচিত্র্যকরণ ও রপ্তানি বৃদ্ধি পরিকল্পনা

শুল্কের চাপ বাড়ার মতো পরিস্থিতিতে ভারত নতুন বাজার সন্ধানের ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। এ জন্য শিল্প উৎপাদন বাড়ানো, স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য বাজারে পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে মূল তিনটি কৌশল।

প্রথমত, সরকার উৎপাদন ভিত্তিক সংস্কারে জোর দিচ্ছে, যেমন মেক ইন ইন্ডিয়া ও অ্যাটম্যানির্ভার পরিকল্পনার আওতায় উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। এতে শুধু বিদেশি বাজারে নয়, অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদনের দিকেও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, GST (মাল্টি-স্টেজ জিডিএস কাস্টমস ট্যাক্স) ক্লিয়ারেন্স ও করের সিস্টেম উন্নত করে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা হচ্ছে, যাতে দ্রুত ও সুলভ রপ্তানি সম্ভব হয়। GST কৌশল এমনভাবে শেখানো হয়েছে যাতে উৎপাদন থেকে সরবরাহ চেইন পর্যন্ত করের বোঝা হ্রাস পায়।

তৃতীয়ত, নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য কৌশলগত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা নিম্নলিখিতভাবে আকার নিচ্ছে:

  • এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন মার্কিন বাজারে ফোকাস।
  • বিশেষ করে কৃষি পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি ও জৈবিক প্রযুক্তির রপ্তানি বাড়ানো।
  • বাণিজ্য প্রদর্শনী, উপ-স্ট্যান্ডার্ড পণ্যে মান উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ।

সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে নতুন বাজারে নিয়মিত পরিকল্পনা ও সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে রপ্তানি ভালো মানের পণ্য নিয়ে যেতে পারে এবং শুল্কের চাপ কমানো যায়।

এই ব্যাপারে সরকারি পরিকল্পনা ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন মনি কন্ট্রোলে প্রকাশিত রিপোর্টে

অতএব, ভারত বর্তমান শুল্কগত চাপ কাটিয়ে উঠতে এবং বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে সমঝোতা বাড়ানো এবং রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে মনোযোগ দিচ্ছে। এটা শুধু অর্থনৈতিক লাভের বিষয় নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার এক নতুন পথ।

উপসংহার

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার প্রক্রিয়া যদিও কিছু বাধা ও শুল্ক বিতর্কে ধীরগতি দেখাচ্ছে, তবে এই চুক্তি দু’পক্ষের অর্থনীতির জন্য বড় সুযোগ নিয়ে আসবে। শুল্ক সংক্রান্ত মতৈক্য পরিষ্কার হলে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ব্যবসার উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি সম্ভব হবে।

বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সফল হলে, দুই দেশের পণ্য ও সেবার বিনিময় যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি কারখানা, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগও বাড়বে। এই চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক সম্পর্ককেও আরো দৃঢ় করবে।

এখন সময় বুদ্ধিমত্তা ও সমঝোতার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী বাণিজ্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার। সামগ্রিকভাবে, এই আলোচনার ফলাফল দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিবেশে নতুন আশার সঞ্চার করবে। আপনার মতামত নিয়ে কথা বলতে আমরা আপনাকে উৎসাহিত করব।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

Click here